Ad

কীভাবে ঈমানে দুর্বলতা দেখা দেয়?

 

 কীভাবে ঈমানে দুর্বলতা দেখা দেয়?

 

আল্লাহ তায়ালার প্রতি সত্যিকার ঈমান থাকলে তার সাথে যে সব সর্ম্পক গড়ে উঠে এ সম্পর্কের দাবি পূরণ করাই মুমিনের জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু ঈমানের দাবিদার হওয়া সত্তেবও ঈমানের দাবি পূরণে সেই ব্যর্থ হয় যার ঈমান দুর্বল। তাই প্রত্যেক মুমিনেরই এ বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন যে কোন পথে ঈমনে দুবর্লতা আসে। যখনই ঈমানে দুবলতা দেখা দেবে তখনই আল্লাহর সাথে সর্ম্পক ছিন্ন হয়ে যাবে। এটা বিরাট কথা। এ বিষয়ে চরম সতর্কতা প্রয়োজন।

 

আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় বহু কিছুর সাথে আমাদের ভালোবাসার সর্ম্পক গড়েছেন। সেসব সর্ম্পক ত্যাগ করার অনুমতিও তিনি দেননি। বরং এসব সর্ম্পককে তিনি সজ্জা  বলে ঘোষণা করেছেনেঃ

 

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ۗ ذَٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ

 

মানুষের জন্য তাদের পছন্দসই জিনিস নারী সন্তান সোনা রুপার স্তপ বাছাই করা ঘোড়া পালিত পশু ও চাষের জমি খুবই কামনার বিষয় বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব দুনিয়ার কদিনের জীবিকা মাত্র। আসলে যা ভালো আশ্রয় তা তো আল্লাহর কাছেই আছে। (সূরা আলে ইমারান :১৪)

 

এসব ভালোবাসার বিষয় দ্বারা মানুষের জীবনকে সাজিয়ে দেওয়া  হয়েছে বলে আল্লাহর স্বয়ং ঘোষণা করলেন। এসব ভালোবাসার সজ্জাকে ত্যাগ করে বৈরাগী বা সন্ন্যাসী হয়ে গেলে আল্লাহর নিকট অপরাধী সাব্যস্ত হবে। দুনিয়ায় যেসব জিনিসের সাথে আল্লাহ নিজে এ ভালোবাসার সম্পর্ক সৃষ্টি করেছেন, এসব ভালোবাসার পরিমাণও তিনি ঠিক করে দিয়েছেন। ঐ পরিমাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসলেই ঈমান দুর্বল হয়। আল্লাহ বলেন,

 

قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ

 

(হে রাসূল! আপনি তাদেরকে) বলুন, তোমাদের পিতামাতা, সন্তানাদি,ভাই বোন, স্ত্রীগণ আত্মীয়Ñস্বজন, ঐ মাল যা তোমরা অজর্ন করেছ, তোমাদের ঐ কারবার তোমরা যার মন্দার ভয় কর এবং তোমাদের ঐ বাড়ি যা তোমরা পছন্দ কর (এসব) যদি তোমাদের নিকট আল্লাহ, তার রাসূল ও তার পথে জিহাদের চেয়ে বেশি প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা (মৃত্যু) আসা পযর্ন্ত অপেক্ষা কর। আল্লাহ ফাসিকদেরকে হেদায়াত করেন না।(সূরা তাওবা:২৪)

 

এ আয়াতে অতি স্পষ্ট ভাষায় দুনিয়ার ভালোবাসার জিনিসগুলোকে কী পরিমাণ ভালোবাসা যাবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ, রাসূল ও আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়ে বেশি ভালোবাসলেই ঈমান দুর্বল বলে প্রমাণিত হবে। যখন ঐ আটটি জিনিসের ভালোবাসা এ তিনটির চেয়ে বেশি হবে তখনি ঈমানের বিপদ। আল্লাহ, রাসূল, জিহাদের ভালোবাসার সাথে ঐ ৮টি জিনিসের ভালোবাসার যখনি টক্কর হবে, তখন তিনটির ভালোবাসা নিষিদ্ধ নয়; বরং কর্তব্য। কিন্তু ঈমান নিরাপদ থাকবে। ঐ আটটির ভালোবাসা নিষিদ্ধ নয়; বরং কর্তব্য। কিন্তু তিনটির চেয়ে ঐ ৮টির ভালোবাসা বেশি হলেই প্রমাণিত হবে যে, ঈমান দুর্বল।

 

একটি চমৎকার উদাহরণ এ কথাটিকে সুন্দর ভাবে স্পষ্ট করে দেয়। পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া জীবন বাঁচে না বলেই এ কথাটি বলা হয়। কিন্তু মানুষ কি পানিতে ডুবে মরে না? তাহলে পানিকে জীবন বলা যায় কী করে? আসল কথা হলো, এক বিশেষ পরিমাণ পানি অবশ্যই জীবন। এ পরিমাণের বেশি হলে পানিই মরণ। তেমনিভাবে আল্লাহ, রাসূল ও জিাহাদের প্রতি ভালোবাসার চেয়ে ঐ আটটি জিনিসের ভালোবাসা কম হলে এটাই ঈমানের জীবন। আর ৩টি থেকে ৮টির বালোবাসা বেশি হলেই ঈমানের মরণ।

 

আল্লাহ, রাসূল ও ইসলামী আন্দোলনের প্রতি দায়িত্ব পালনের পথে যখন ঐ আটটি ভালোবাসার বস্তু প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, তখন ঐ দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি হয়। এ বাধা দূর করতে পারলে, অর্থাৎ তিনটির ভালোবাসার খাতিরে যদি আটটির ভালোবাসা কুরবানী দেওয়া যায়, তাহলে প্রমাণিত হবে যে, ঈমান দুর্বল নয়। ঈমান দুর্বল হলে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কারণ তখন আর ঈমানের দাবি পূরণ করার শক্তি থাকে না।

 

সম্পদ ও সন্তানকে আল্লাহ্‌ সজ্জা ও বলেছে , ফিতনাও বলেছেন-

 

الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا

 

সম্পদ ও সন্তানাদি দুনিয়ার জীবনের সজ্জা।(সূরা কাহফ:৪৬)

 

إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ

 

নিশ্চয়ই তোমাদের মাল ও সন্তান ফিতনা’ (সূরা তাগাবুন:১৫)

 

ঐ আটটি ও তিনটির ভালোবাসায় যদি ভারসাম্য রক্ষা কর হয় তাহলে সম্পদ ও সন্তান জীবনের সজ্জা। আর যদি আটটির ভালোবাসা বেশি হয় তাহলে সম্পদ ও সন্তান ফিতনা। ইসলামী পরিভাষায়, আল্লাহর হুকুম পালনে বাধাকেই ফিতনা বলা হয়। এর শাব্দিক অর্থ  পরীক্ষা, বিপদ, গোলাযোগ, আকর্ষণ, বিশৃঙ্খলা, ইত্যাদি।

 

সূরা মুনাফিকূনের দ্বিতীয় রুকুর প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ

 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ

 

হে ঐসব লোক যারা ঈমান এনেছে শোন! তোমাদের মাল ও আওলাদ (সম্পদও সন্তান) যেন তোমাদরেকে আল্লাহর কথা ভুলিয়ে না দেয়। এসবের ভালোবাসায় এমন মগ্ন হয়ে যেয়ো না, যার কারণে ঈমানের দাবি পূরণে অবহেলা হয়ে যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url