Ad

দ্বীন প্রচারের কাজে দাওয়াত দানে পর্যায়ক্রমিক ধারা অনুযায়ী দাওয়াত দান করা।

 

পর্যায়ক্রমে অগ্রসর হোন

আপনার ঈমান এবং দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, একমাত্র ইসলামই মানব জাতির যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম। আর আপনার এটাই কাম্য যে, অপরাপর মানুষের চিন্তা জগতেও একমাত্র এ বিশ্বাসই বদ্ধমূল হয়ে উঠুক এবং মানুষের চিন্তা জগতে এ বিশ্বাস কে কেন্দ্র করে এক বিরাট রকমের পরিবর্তন ও বিপ্লব আসুক। বর্তমান বিশ্বের নৈতিকতাহীন অবস্থা দেখে আপনি অস্থির ও শংকিত। কেবল অস্থিরই নন, আপনি এর উচ্ছেদ সাধনে ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর এ জন্যে আপনার নিকট মাল-মসলা ও রয়েছে বিস্তর, যা আপনি আপনার পড়াশুনা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে বর্তমান কলুষিত সমাজ কে সংশোধনের জন্যে সঞ্চয় করেছেন।

এমতাবস্থায় এটাও একটা উপায় যে, আপনি আপনার শ্রোতাকে একই সময়ে এ জাতীয় সকল কথা শুনিয়ে দিবেন এবং আপনার সমর্থক করে ফেলবেন। কিন্ত এ ব্যাপারে হয়তো আপনার অভিজ্ঞতা আছে যে, এতো সহজেই এ কাজ করে ফেলা কিছুতেই সম্ভব নয়। অপরের চিন্তার পরিবর্তন অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে আপনার যোগ্যতার ভূমিকা হবে আপনি আপনার আলোচনার মাধ্যমে শ্রোতাকে এটা বুঝিয়ে দিবেন যে, আপনি তাকে যথেষ্ট জ্ঞানের অধিকারী বলে মনে করেন। আপনার দৃষ্টিতে সে একজন চিন্তাশীল প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি। আপনি তার মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। শ্রোতার মনে এ ধারণা সৃষ্টির পর আপনি দেখতে পাবেন, তার মন আপনার কথাগুলো কি পরিমাণ আগ্রহ সহকারে শুনতে প্রস্তুত হয়। এ জন্যে আপনাকে আপনার শ্রোতার সন্মুখে পূর্ব নির্ধারিত কতিপয় প্রশ্নাবলী স্থাপন করা উচিত। যেমন নৈতিকতা বিরোধী অবস্থার কিভাবে উচ্ছেদ করা যেতে পারে? অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লুটতরাজের প্রতিকার কি? সুন্দর সুষ্ঠু সমাজ কি করে কায়েম করা যেতে পারে? এবং এ সমাজের মাপকাঠি কি হবে? এ বিশ্ব মানুষের সত্যিকার স্থান কোথায়? ইত্যাদি। এসব জটিল প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করার জন্যে যখন আপনি শ্রোতকে আহ্বান জানাবেন, তখন আপনি দেখতে পাবেন– হয়তো এ ব্যাপারে তার মস্তিস্ক সম্পূর্ণ খালি ছিল, এ নিয়ে সে হয়তো কোনোদিন চিন্তাই করেনি। এবং এখন সঙ্গে সঙ্গেই সে আপনার আন্দোলনকে বুঝার চেষ্টা করবে, এবং যা বুঝেছে তা বলতে শুরু করবে। এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতা এবং সুষ্ঠু কর্মপন্থার মাধ্যমে অগ্রসর হতে হবে। এ ক্ষেত্রে শ্রোতাকে অক্ষম পেয়ে তখনি আপনার ইচ্ছা হবে তার সম্মুখে বিস্তারিতভাবে যুক্তি-প্রমাণ সহকারে আপনার মতামত পেশ করতে। কিংবা তার অজ্ঞানতা প্রসূত মন্তব্যের ওপর আলোচনা করতে এবং নিজের কথাকে আরো খুলে বলতে। এই দুই অবস্থার মধ্যে কোনো অবস্থাতেই আপনি শ্রোতাকে উপলব্ধি করতে দেবেন না যে, এ ব্যাপারে আপনার তুলনায় তার জ্ঞান অত্যন্ত নগন্য। অন্যথায় আপনাকে ব্যর্থ হতে হবে। আপনি তখনই সফলকাম হতে পারবেন যখন শ্রোতার কাছে আসল বক্তব্যটা ইশারা ইংগিত ও প্রস্তাবাকারে নিপুণতার সঙ্গে এমনভাবে পেশ করতে সক্ষম হবেন, যাতে তার অন্তকরণ আপনার প্রদত্ত যুক্তি প্রমাণাদিই গ্রহন করছে বটে কিন্তু সে মনে করছে যে, আমি যা ভাবছি এবং চিন্তা করছি এটা একমাত্র আমারই অনুসন্ধিৎসাসুলভ চিন্তা-গবেষনার ফল। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি তাকে দেখেন যে, সে নির্ভুল পথ থেকে সরে যাচ্ছে, তখন তার অলক্ষেই আপনি তাকে সঠিক পথে আনতে পারেন। আর যদি মনে করেন যে, সে একেবারেই আপনার যুক্তি মানতে রাজি নয় বা আংশিকভাবে মানছে তখন আপনাকে মনস্তাত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে লক্ষ্য করা উচিত। তখনই তার সামনে আপনি আপনার সকল যুক্তি – প্রমাণ উত্থাপনের চেষ্টা করবেন না, বরং সময় সু্যোগ মতো বাকি বিষয় অনায়াসেই আপনি তার থেকে স্বীকার করিয়ে নিতে সক্ষম হবেন। অবশ্য আরো একটা কথা স্মরণ রাখা দরকার, আপনার শ্রোতা আপনার সঙ্গে যতটুকু একমত হয়, ততটুকুর মধ্যেও আপনি তাকে একথা উপলব্ধি করাতে চেষ্টা করবেন যে, এ মতটাও তারই নিজস্ব। এ সম্বন্ধে সে যা বুঝেছে তা তারই চিন্তার ফল আর যতটুকু সে বুঝেছে, চমৎকার ভাবেই বুঝেছে। এ পদ্ধতিতেই আপনার ভবিষ্যত পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে।

যে প্রচারক তার শ্রোতা সম্পর্কে একথা উপলব্ধি করতে পারবেনা যে, সে কেমন পরিবেশে গড়ে উঠেছে, তার মধ্যে সে পরিবেশের কি ধরনের প্রভাব রয়েছে, এর পরিপ্রক্ষিতে তার সঙ্গে কেমন ব্যাবহার বা আলাপ আলোচনা করতে হবে, সে প্রচারক নিজের শ্রোতার পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ নিরাশ হতে বাধ্য। আলোচনা কালে শ্রোতার ওপর তার পারিপার্শ্বকতার প্রভাব লক্ষ্যকারীই সার্থক প্রচারক। লক্ষ করার বিষয়, হয়তো আপনি গাভী পূজা করেন না, অজগর সাপকে দেবতা জ্ঞানে পবিত্র এবং পুণ্যময় মনে করেন না, মাজারে মাজারে গিয়ে মাজার প্রদক্ষিণ করেন না, পীরের দ্বারা নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে তাবিজ বাঁধাকে শিরক মনে করে থাকেন- এসব আপনার তেমন বিশেষ কিছু গুনাবলী নয়। হয়তো আপনি এ জাতীয় পরিবেশ থেকে কোনো রকমে চক্ষু বন্ধ করে নিজেকেই কুসংস্কারের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন কিন্তু সমাজে এমন কয়জন লোক আছে, যারা নিজেদের বুদ্ধি বিবেচনা বলে এ সকল কুসংস্কার থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম? অধিকাংশ লোক এ জন্যেই এ সকল মূর্খতা এবং পাপাচার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছে যে, হয়তো সে যে পরিবেশে লালিত পালিত সেখানে এর কোনো অস্তিত্বই নেই। সুতরাং আপনার শ্রোতাও যদি এমন পরিবেশের কুসংস্কার দোষে দুষ্ট হয়ে থাকে তাহলে আপনি এ জন্যে তাকে অনেকটা অক্ষম মনে করতে পারেন। মানুষ অনেক সময় কোনো বিষয়ের গভীরে গিয়ে প্রবেশ না করে ভাবাবেগেও অনেক কিছু করে ফেলে। এ জাতীয় মানুষের সংখ্যাই সমাজে অধিক বলে মনে হয়। এ পরিস্থিতিতে সত্যিকার জ্ঞান সরবরাহ করে মানুষের জ্ঞানচক্ষুর পাতা খুলে দিলে অনেকেই এ থেকে বিরত হবে। কেননা অনেক সময় পারিপার্শ্বিক প্রভাবে বা ভাবাবেগে মানুষ যা করে, সত্যিকার জ্ঞান দানের ফলে সুস্থ মুহুর্তে সে তা পরিহারও করে।

কেউ হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যারা আল্লাহ রাসুল এবং পরকালকে অবিশ্বাস করে তারাও তো এ কথাই বলে থেকে যে, আমরা বহু অধ্যয়ন এবং চিন্তা-গবেষণার পরই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এক্ষেত্রে অবশ্যি আংশিকভাবে তার কথা সত্য কিন্তু এমন লোকের সংখ্যাই বেশি যারা বস্তুতঃ কোনো কিছুই চিন্তা করে না। বরং হয়তো তারা যুগের হাওয়ায় ভাসছে নয়তো তাদের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে, যেখানে কোনো কিছু করার সময় চিন্তা ভাবনার পরোয়াই করা হয় না। সবাই একমাত্র হুজুগেই সবকিছু করে। এর ফলস্বরুপই ক্রমে ক্রমে তাদের মধ্যে ধর্মবিরোধী ভাব প্রকট হয়ে ওঠে এবং ধর্ম সম্বন্ধে দানা বেঁধে ওঠে তাদের মনে যাবতীয় ভুল ধারণা। এ জাতীয় লোকদের প্রথমে নীতিবোধ পরিশুদ্ধ করাই হলো প্রাথমিক কর্তব্য। অবশ্য এটা অনেক শ্রমসাধ্য ব্যাপার।

আরো একটা লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ দ্বারা আপনি কাউকে নির্বাক করতে পারেন, কিন্তু আপনার শ্রোতাকে অন্তর দিয়ে কোনো কিছু গ্রহণ করার জন্যে প্রস্তুত করা অথবা তার মন থেকে পুরোনো ভাবাধারাকে বের করে নতুনভাবে সত্যকে গ্রহণ করার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা নিছক বাকচাতুর্য বা যুক্তি–তর্কের দ্বারা সম্ভব নয় বরং এ জন্য সুকৌশলে সাধারণ পন্থায় তার মধ্যে অনুপ্রেরণা এবং কর্মোন্মদনা সৃষ্টি করতে হবে। এ প্রেরণার মাধ্যমে আপনি যথেষ্ট কাজ আদায় করতে সক্ষম হবেন। কেননা এ প্রেরণা এবং প্রবণতাই তো মানুষকে অনেক অবাঞ্চিত কাজে উদ্বুদ্ধ করে থাকে, যা যুক্তি প্রমাণের কষ্টিপাথরে যাচাই করলে মানুষ ভ্রান্ত বলেই স্বীকার করে থাকে। আপনি সে ডাকাত সম্পর্কে কি বলবেন যে দিবারাত্র ধুন খারাবি এবং জোর-জুলুম করে মানুষের অর্থ-সম্পদ লুট করে বেড়ায়, আবার দীন-হীনকে ও সাহায্য দান করে, তাদের মধ্যে নিজের সব লুন্ঠিত বস্তু বিলিয়ে দেয়? আসল কথা হলো, তার মধ্যে পাষন্ডতার সঙ্গে সঙ্গে পরোপকারিতার প্রবণতাও রয়েছে, সে চায়, মানুষ তাকে জনদরদী বলে মনে করুক। এই মানসিক সান্তনা লাভ করার জন্যই সে এমনটি করতে পুলক অনুভব করে। অথচ ন্যায় এবং সত্যের মাপকাঠিতে সেও তার পেশাকে গর্হিত বলে মনে করে। এ দৃষ্টান্তকে সন্মুখে রাখলে এ সত্যটিই আমাদের সামনে প্রকট হয়ে ওঠে যে, মানুষকে কোনো কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হলে অনেক সময় দলিল –প্রমাণ এবং বাকচাতুর্য অপেক্ষা তার ভাব–প্রবণতাই অধিক কার্যকরী হয়ে থাকে।

সুতরাং আদর্শ প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো সময় মানুষের উন্নত সূক্ষ্ম অনুভূতিতে আবেদনের সাথে সাথে তার বিভিন্ন ভাবাবেগের প্রতিও আবেদন জানাবার চেষ্টা করা উচিত। যেমন মানুষের মানসিকতা, সততা, উন্নত রুচিবোধ, জনসেবা, সমবেদনা, চরিত্র, উল্লেখযোগ্য কীর্তি, অবদান ইত্যাদি।

 “ডাক তোমার প্রভুর পথে

হিকমত ও উত্তম নসিহতের সাহায্যে

আর লোকদের সাথে বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়” ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url