Ad

যৌনোন্মাদনা ও অশ্লীলতার সংক্রামক ব্যাধি

 যৌন ব্যাধি

যৌন প্রবণতার প্রজ্জ্বলিত অগ্নির স্বাভাবিক পরিণামস্বরূপ লজ্জাহীনতা ও ব্যভিচার যে ব্যপক আকারে জনস্বীকৃতি লাভ করিয়াছিল তাহার মূলে ছিল ঐ সকল সাহিত্য, বিজ্ঞাপন, ছায়াচিত্র, নাট্যাভিনয়, নৃত্যগীত, নগ্নতা ও অশ্লীলতা।

স্বার্থান্বেষী পুঁজিপতিদের একটি বাহিনী সকল সম্ভাব্য উপায়ে যৌনতৃষ্ণায় ইন্ধন যোগাইবার কার্যে লিপ্ত থাকে এবং এই উপায়ে নিজেদের ব্যবসায় প্রসার করে। দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকাগুলি চরম অশ্লীলতাপূর্ণ প্রবন্ধাদি ও চিত্রাদি প্রকাশ করে। কারণ, তাহাদের পত্রিকার বহুল প্রচারের ইহা অধিকতর কার্যকরী অস্ত্র বিশেষ। এই কাজে উন্নত ধরনের প্রতিভা, কৌশল ও মনস্তাত্ত্বিক নিপুণতার প্রয়োগ করা হয়, যাহাতে শিকার কোনক্রমেই আত্মরক্ষা করিতে না পারে। এতদ্ব্যতীত যৌনসমস্যা সম্পর্কিত চরম অশুচি সাহিত্য ও প্রচারপত্র পুস্তাকাকারে প্রকাশিত হয়। এই সকল এত অধিক পরিমাণে প্রচারিত হয় যে, এক এক সংস্করণে পঁচিশ-ত্রিশ হাজার পর্যন্ত ছাপান হয়। অনেক সময় এই সকল সাহিত্যের সষ্টিতম সংস্করণ পর্যন্ত প্রকাশিত হইতে দেখা যায়। কোন কোন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুধু এই কাজের জন্যই নির্দিষ্ট থাকে। এমন অনেক লেখক ও সাহিত্যিক আছে, যাহারা এইরূপ কাজ করিয়াই খ্যাতি ও সম্মান অর্জন করিয়া থাকে। কোন অশ্লীল গ্রন্থ প্রনয়ণ এখন আর মোটেই অসম্মানজনক নহে, বরং ইহা জনসাধারণ্যে গৃহীত হইলে গ্রন্থকার ফরাসী একাডেমীর সদস্যপদ কিংবা অন্ততপক্ষে Croix D’honnenr লাভের যোগ্য হয়।

সরকার এই সকল নির্লজ্জতা ও কাম প্ররোচনা নীরবে উপেক্ষা করিয়া থাকে। যদি কখনো চরম লজ্জাকর কিছু প্রকাশিত হয়, তবে পুলিশ অনিচ্ছাসত্ত্বেও অপরাধীকে চালান দেয়। তদুপরি মহানুভব বিচারালয় রহিয়াছে। তথাকার ন্যায়বিচারের আসন হইতে অপরাধকে মাত্র সাবধান করিয়া ছাড়িয়া দেওয়া হয়। কারণ বিচারালয়ের আসন যাহারা অলংকৃত করিয়া থাকে, তাহারাও এবম্বিধ সাহিত্য হইতে রসাস্বাদন করিয়া থাকে। কোন কোন বিচারকের লেখনী আবার অশ্লীল যৌন সাহিত্য প্রণয়নে লিপ্ত থাকে। যদি কখনো ঘটনাক্রমে কোন বিচারক প্রাচীনপন্থী প্রতিপন্ন হয় এবং তাহার দ্বারা কোন অনুচিত রায় দানের আশঙ্কা হয়, তাহা হইলে বড়  বড় সাহিত্যিক ও খ্যাতনামা লেখক সম্মিলিতভাবে এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করিতে থাকে এবং সংবাদপত্রে এই বলিয়া ইহার তীব্র সমালোচনা করা হয় যে, সাহিত্য ও শিল্পকলার উন্নতির জন্য স্বাধীন ক্ষেত্রের প্রয়োজন আছে। অন্ধ যুগের মনোভাব দ্বারা নৈতিক বন্ধন প্রয়োগ করার অর্থ রসবিজ্ঞানের কণ্ঠরোধ করা। এই রসবিজ্ঞানের উন্নতি কি কি উপায়ে হয়? নগ্নচিত্র ও চলচ্চিত্র এই ব্যাপারে বিশেষ কার্যকরী হয়। ইহার লক্ষ লক্ষ এলবাম তৈরী করিয়া ইহাকে শুধু বাজার, হোটেল ও চা-খানায়ই রাখা হয়। অশ্লীলতা বিরোধী সংঘের দ্বিতীয় অধিবেশনে এমিল পুরেসি যে রিপোর্ট পেশ করিয়াছিলেন, তাহাতে তিনি বলেনঃ

এই সকল অশুচি ইতর তৈলচিত্রগুলি মানবীয় ইন্দ্রিয়নিচয়ে একটা উত্তেজনা ও পরম তৃষ্ণার সঞ্চার করে। ইহা হতভাগ্য ক্রেতাদিগকে এমন পাপকার্যে উদ্বুদ্ধ করে যে, তাহা চিন্তা করিলেও শরীর রোমাঞ্চিত হয়। বালক-বালিকাদের উপর ইহার সর্বনাশা প্রভাব বর্ণনাতীত। নৈতিক ও শারীরিক দিক দিয়া বহু স্কুল-কলেজ এইসবের জন্য ধ্বংস হইয়া গিয়াছে, বিশেষ করিয়া বালিকাদের জন্য ইহা অপেক্ষা অধিকতর ক্ষতিকর আর কিছুই হইতে পারে না।

নাট্যশালা, প্রেক্ষাগৃহ, সঙ্গীতালয় ও কফিখানায় চিত্তবিনোদনের দ্বারা এই রস-বিজ্ঞানের চর্চা করা হয়। যে সকল নাট্যাভিনয় ফরাসী সমাজের অভিজাতশ্রেণী আনন্দ সহকারে দর্শন করে এবং যে নাট্যকার ও কৃতি অভিনেত্রীদের উপর প্রশংসাসূচক করতালিসহ পুষ্প বর্ষণ করা হয় তাহার প্রতিটিই কামোন্নাদনাপূর্ণ হয়। বৈশিষ্ট্যই এই যে, নৈতিকতার দিক দিয়া যে চরিত্রটি অত্যন্ত জঘন্য হয়, তাহাকে সর্বোৎকৃষ্ট ও উচ্চাঙ্গের আদর্শ হিসাবে উপস্থাপিত করা হয়। পল ব্যুরোর ভাষায়ঃ

ত্রিশ চল্লিশ বৎসর হইতে আমাদের নাট্যকারগণ জীবনের যে চিত্র পরিষ্ফুট করিতেছে, তাহা দর্শন করিয়া যদি কেহ আমাদের সাংস্কৃতিক জীবন সম্পর্কে কিছু ধারণা করিতে চায়, তাহা হইলে সে এতটুকু হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিবে যে, আমাদের সমাজে যত বিবাহিত দম্পতি আছে, তাহারা সকলেই কৃতঘ্ন এবং দাম্পত্য জীবনে একে অপরের প্রতি অবিশ্বাসী। হয়ত স্বামী নির্বোধ কিংবা তাহার স্ত্রী পরম শত্রু। স্ত্রীর যদি কোন মহৎ গুণ থাকে, তাহা হইলে তাহা এই যে,সর্বদা স্বামীর প্রতি বিরাগভাজন হইবে এবং অন্যত্র প্রেম নিবেদনের জন্য প্রস্তুত থাকিবে।

অভিজাত সম্প্রদায়ের নাট্যাভিনয়ের যদি এই অবস্থা হয়, তাহা হইলে জনসাধারণের নাট্যশালা ও চিত্তবিনোদনের স্থানগুলির কি স্বরূপ হইতে পারে, তাহা সহজেই অনুমেয়! যৌন ক্রীড়ামোদীগণ যে ভাষা, কমনীয় ভঙ্গী ও নগ্নতার আনন্দ উপভোগ করে, তাহা নির্লজ্জভাবে রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হয়। পূর্বাহ্ণে জনসাধারণকে জানাইয়া দেওয়া হয় যে, তাহাদের যৌনতৃষ্ণা মিটাইবার সকল উপাদান পাওয়া যাইবে। আরও বলা হয়ঃ আমাদের রংমঞ্চ লৌকিকতা বর্জিত ও স্বভাবসংগত (Realistic)।

এমিল পুরেসি তাঁহার রিপোর্টে বহু দৃষ্টান্ত লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। তিনি বিভিন্ন চিত্তবিনোদনের স্থানগুলিতে গমন করত এই সকল দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করিয়াছেন এবং উহা বুঝাইবার জন্য তিনি নামের পরিবর্তে অক্ষর ব্যবহার করিয়াছেন।

ব. ‘এখানে অভিনেত্রীদের গীত.স্বগতোক্তি (Monologues) এবং অঙ্গ-ভঙ্গিমা চরম অশ্লীলতাপূর্ণ ছিল। পটের উপর যে দৃশ্য উন্মোচন করা হইয়াছিল, তাহা যৌন সম্মিলনে শেষ পর্যায়ে উপনীত হইতে হইতে রহিয়া গেল। সহস্রাধিক দর্শক তথায় সমবেত হইয়াছিল। তাহাদের মধ্যে বহু সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিও ছিল। সকলে তন্ময় হইয়া প্রশংসাসূচক ধ্বনি করিতেছিল।’

ন. ‘এখানে সংক্ষিপ্ত গীত ও তাহার মাঝে মাঝে সংক্ষিপ্ত কথন, অঙ্গ-ভঙ্গিমা এবং নীরবতা নির্লজ্জতায় চরম সীমায় পৌঁছাইয়াছিল। শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণগণও পিতামাতার সহিত বসিয়া এই রঙ্গ-রস উপভোগ করিতেছিল এবং প্রত্যেক বালক অশ্লীল অভিনয় দর্শনে পূর্ণোদ্যমে করতালি দিতেছিল।’

ল. ‘এখানে দর্শকবৃন্দ পাঁচবার কোলাহল করিয়া অভিনেত্রীকে পুনঃপুনঃ এমন একটি অভিনয়ের জন্য বাধ্য করিল যে, তাহার অভিনয় চরম অশ্লীল গীত দ্বারা সমাপ্ত করিতে হইয়াছিল।’

র. ‘এখানে দর্শকবৃন্দ একজন  অভিনেত্রীকে পুনঃপুনঃ একটি অতীব অশ্লীল অভিনয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করিতেছিল।’

অবশেষে সেই অভিনেত্রী বিরক্তি সহকারে বলিয়া উঠিল, “তোমরা কি এতই নির্লজ্জ? দেখিতেছ না যে, এখানে কতকগুলি শিশুও আছে?” এই বলিয়া সে অভিনয় সমাপ্ত না করিয়াই চলিয়া গেল। ইহা এমন অশ্লীল ছিল যে, অত্যন্ত পাপীয়সীও ইহার পুনরাভিনয় সহ্য করিতে পারিত না।

জ. ‘অভিনয় শেষে অভিনেত্রীদের লটারী করা হইল। তাহারা এক একটি টিকেট দশ শান্তিম মূল্যে (এক শান্তিম প্রায় দুই আনার সমতুল্য) বিক্রয় করিতে লাগিল। যে ব্যক্তির ভাগ্যে যে অভিনেত্রীর নাম উঠিল, সে-ই রাত্রির জন্য তাঁহার হইল।’

পল ব্যুরো বলেন যে, ‘অধিকাংশ সময়ে রঙ্গমঞ্চে এমন এক নারীকে আনয়ন করা হয়, যাহার দেহে বস্ত্রের লেশ মাত্র থাকে না। অ্যাডলফ বায়াসন (Adlophe Biason) একবার ফরাসীর বিখ্যাত সংবাদপত্র ‘তানে’ (Tamps) এই সকল বিষয়ের প্রতিবাদ করে লেখেন, এখন মঞ্চোপরি শুধু যৌনক্রিয়া সম্পাদনই অবশিষ্ট রহিয়াছে। প্রকৃতপক্ষে তখনই আর্টের পরিপূর্ণতা লাভ হইবে।’

গর্ভনিরোধ আন্দোলন ও যৌনবিজ্ঞানের তথাকথিত জ্ঞানগর্ভ ও ভৈষজ্যশাস্ত্র সম্পৃক্ত সাহিত্যাবলী নির্লজ্জতা প্রচার এবং মানুষের নৈতিক চরিত্র ধ্বংসের ব্যাপারে বিশিষ্ট অংশ গ্রহণ করিয়াছে। জনসভায় বক্তৃতা, ভৌতিক আলোকচিত্র ও পুস্তকাদিতে চিত্র ও তাঁহার বিশ্লেষণের দ্বারা গর্ভ, তৎসম্পর্কিত বিষয়াদি এবং গর্ভনিরোধের সরঞ্জামাদির ব্যবহার বিধির এমন বিশ্লেষণ করা হয় যে, তাহার পর আর কোন কিছু প্রকাশ করিবার প্রয়োজন হয় না। এইরূপ যৌনবিজ্ঞানের পুস্তকাদিতে শরীর বিশ্লেষণ হইতে আরম্ভ করিয়া যৌন-ক্রিয়ার কোনোদিকই অপ্রকাশ রাখা হয় না। বাহ্যত এই সকল বিষয়ের উপরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আবরণ দেওয়া হইয়াছে, যেন ইহার প্রতিবাদের কোন পথ না থাকে। উপরন্তু ইহার এতখানি উন্নতি হইয়াছে যে, ইহাকে সমাজসেবা নামে অভিহিত করা হয়। কারণস্বরূপ বলা হয় যে, তাহারা যৌনক্রিয়া সম্পর্কে অপরকে ভুল্ভ্রান্ত্রি হইতে রক্ষা করিতে চায়। কিন্তু প্রকৃত ব্যপার এই যে, এই সমস্ত সাহিত্য ও শিক্ষা প্রচার দ্বারা নারী-পুরুষ ও অল্পবয়স্ক তরুন-তরুণীদের মধ্যে জঘন্য নির্লজ্জতা সৃষ্টি করা হয়। এই সবের কৃপায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে যে, অপ্রাপ্তবয়স্কা কচি বালিকা পাঠাগারে বিদ্যাভ্যাস করিতে আসিয়া যৌন সম্পর্কিত এমন জ্ঞান লাভ করে, যাহা বিবাহিতা নারীগণও করিতে পারে না। কচি বালকদেরও এই একই অবস্থা। অসময়ে ইহাদের যৌন প্রবণতা সজাগ হইয়া পড়ে। ফলে তাহাদের মনে যৌনমৈথুন পরীক্ষা করিয়া দেখিবার আগ্রহ জন্মে। পূর্ণ যৌবন লাভ করিবার পূর্বেই তাহারা কাম প্রবৃত্তির নখর কবলিত হইয়া পড়ে। বিবাহের জন্য তো বয়সের সীমা নির্ধারিত আছে, কিন্তু যৌনক্রিয়া পরীক্ষা করিয়া দেখিবার জন্য বয়সের কোন সীমা নির্ধারিত করা নাই। কাজেই বার-তের বৎসর হইতেই এই সকল কার্য চলিতে থাকে।

জাতীয় অধঃপতনের পূর্বাভাস

যেখানে পবিত্রহীনতা, প্রবৃত্তি পূজা ও দৈহিক ভোগ-সম্ভোগের দাসত্ব চরমে উপনীত হয়, যেখানে নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলেই ভোগবিলাসে লিপ্ত হয় এবং যেখানে উন্মাদনার প্রজ্জ্বলিত অগ্নি মানুষকে তাহার আয়ত্তের বাহিরে লইয়া যায়, যেখানে জাতীয় অধপতনের যাবতীয় কারণ প্রকাশিত হওয়া এক অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। মানুষ এই প্রকার ধ্বংসোন্মুখ জাতিকে উচ্চ শিখরে দেখিয়া এই সিদ্ধান্ত করে যে, তাহাদের ভোগবিলাস উন্নতির পথে প্রতিবন্ধক নহে বরং সহায়ক। তাহারা অধিকন্তু বলিয়া থাকে যে, কোন জাতির চরম উন্নতি একমাত্র তখনই হয় যখন সে ভোগবিলাসের চরম পর্যায়ে উপনীত হয়। কিন্তু এইরূপ সিদ্ধান্ত একেবারেই ভ্রান্ত। যেখানে সৃষ্টি ও ধ্বংসের শক্তিগুলি মিলিতভাবে কার্য করে এবং সামগ্রিকভাবে গঠনমূলক কার্যাবলীই স্পষ্ট দেখিতে পাওয়া যায়, সেখানে বিধ্বংসী শক্তিগুলিকেও সৃষ্টির কারণসমূহের মধ্যে গণ্য করা একমাত্র সেই ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব, যাহার জ্ঞানবুদ্ধি বিকল হইয়া পড়িয়াছে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ যদি কোন সতর্ক ব্যবসায়ী জ্ঞান-বুদ্ধি, শ্রম ও অভিজ্ঞতার দ্বারা অজস্র অর্থ উপার্জন করে এবং তৎসহ মদ্যপান, জুয়া এবং ভোগ বিলাসেও লিপ্ত হয়, এমতাবস্থায় তাঁহার জীবনের উভয় দিককেই যদি স্বাচ্ছন্দ্য ও উন্নতির কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়, তাহা হইলে ইহা অপেক্ষা অধিক নির্বুদ্ধিতা আর কি হইতে পারে? প্রকৃতপক্ষে তাহার উন্নতির কারণ এবং শেষোক্ত দোষগুলির সমষ্টি তাহার ধ্বংস সাধনে লাগিয়া থাকে। প্রথমোক্ত গুণাবলীর শক্তিতে অট্টালিকায় প্রতিষ্ঠিত থাকার অর্থ ইহা নহে যে, ধ্বংসকারী শক্তিগুলি তাহার উপর প্রভাব বিস্তার করিতেছে না। একটু সূক্ষদৃষ্টি নিক্ষেপ করিলে প্রতীয়মান হইবে যে, এইসব ধ্বংসকারী শক্তি তাহার মস্তিস্ক ও শরীরের শক্তি ক্রমাগত ভক্ষন করিয়াই চলিয়াছে। তাহার শ্রমোপার্জিত অর্থ লুণ্ঠন করিতেছে। এই শক্তিগুলি তাহাকে ধ্বংস করিবার সঙ্গে সঙ্গে সর্বদা এমন সুযোগের প্রতিক্ষায় থাকে যে, একটি সিদ্ধান্তকারী আক্রমনের দ্বারা প্রথম আঘাতেই তাহাকে শেষ করিয়া দিবে। জুয়ার শয়তান এক অশুভ মুহূর্তে তাহার সমগ্র জীবনের উপার্জিত অর্থ নিমেষেই ধ্বংস করিয়া দিতে পারে এবং সে সেই মুহূর্তেরই প্রতীক্ষায় বসিয়া থাকে। মদ্য পানের শয়তান সময় মত তাহার সংজ্ঞাহীনতার সুযোগে তাহার দ্বারা এমন এক মারাত্মক ভুল করাইতে পারে, যাহার ফলে সে মুহূর্তের মধ্যে দেউলিয়া হইতে পারে। সেও সেই সুযোগের সন্ধানে আছে। দুষ্কৃতির শয়তানও সেই মুহূর্তের প্রতীক্ষায় আছে, যখন সে তাহাকে হত্যা, আত্মহত্যা অথবা হঠাৎ ধ্বংসের মধ্যে লিপ্ত করিয়া দিতে পারে। ধারণাই করা যাইতে পারা যায় না যে, যদি সেই ব্যক্তি এই শয়তানগুলির কবলে না পড়িত, তাহা হইলে তাহার উন্নতির কি অবস্থা হইত!

একটি জাতির বেলায়ও এই একই অবস্থা। সে গঠনমুখী শক্তি বলে উন্নতি সাধন করে। কিন্তু সঠিক পরিচালনা শক্তির অভাবে উন্নতির পথে কয়েক ধাপ অগ্রসর হইবার পর স্বীয় ধ্বংসের কারণ সৃষ্টি করিতে থাকে। কিছুকাল পর্যন্ত সৃষ্টিমুলক শক্তিগুলি তাহাকে সম্মুখের দিকে পরিচালিত করিতে থাকে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসকারী শক্তিগুলি তাহার জীবনী-শক্তি ঘূনের ন্যায় ভিতর হইতে ভক্ষণ করিতে থাকে। অবশেষে এমন শুন্যগর্ভ করিয়া ফেলে যে, হঠাৎ একটি আঘাতেই তাহার গৌরব সৌধ ধূলিসাৎ করিয়া দেয়। ফরাসী জাতির ভ্রান্ত সমাজ ব্যবস্থা তাহাদের জন্য যে ধ্বংস টানিয়া আনিয়াছে, তাহার সুস্পষ্ট বিরাট কারণগুলি এখানে সংক্ষেপে বর্ণনা করিব।

শারীরিক শক্তি নাশ

যৌন কামনার একচ্ছত্র শাসনের প্রাথমিক কুফল এই হইয়াছিল যে, ফরাসী দেশবাসীর শারীরিক শক্তি ক্রমশ লোপ পাইতে লাগিল। কামনার দাসত্ব তাহাদের মধ্যে সংযম ও ধৈর্য শক্তি নিঃশেষ করিয়া দিয়াছিল। রতিজ দুষ্ট ব্যাধির আধিক্য তাহাদের স্বাস্থ্যের উপর সর্বনাশা ক্রিয়া করিয়াছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ হইতে এই অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছিল যে, সামরিক কর্তৃপক্ষকে বাধ্য হইয়া কয়েক বৎসর পর পর নূতন ভাবে সৈন্য সংগ্রহের (New Reqruits) জন্য শারীরিক যোগ্যতার মান কমাইয়া দিতে হয়। কারণ প্রথমে যোগ্যতার যে মান নির্ণীত ছিল, সেই মানের অতি অল্প সংখ্যক যুবকই পরবর্তী সময়ে পাওয়া যাইত। ইহা একটি নির্ভরযোগ্য যন্ত্র, যাহা তাপ নির্ণয় যন্ত্রের (Thermometre) ন্যায় প্রায়ই নিশ্চয়তার সহিত বলিয়া দেয় যে, ফরাসী জাতির শারীরিক শক্তি ক্রমশ কত দ্রুতবেগে কমিয়া যাইতেছে। এই অধপতনের কারণগুলির মধ্যে রতিজ দুষ্ট ব্যাধি একটি বিশেষ কারণ ছিল। প্রথম মহাযুদ্ধের প্রথম দুই বৎসর যে সমস্ত সৈনিককে সিফিলিস ব্যাধির জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়, তাহাদের সংখ্যা ছিল পঁচাত্তর হাজার। মাত্র একটি মধ্যম শ্রেণীর সামরিক ছাউনিতে একই সময়ে ২৪২ জন সৈনিক এই রোগে আক্রান্ত হয়। একদিকে সেই সংকটসংকুল অবস্থার দিকে লক্ষ্য করুন, যখন ফরাসী জাতি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দোদুল্যমান ছিল, গোটা জাতির অস্তিত্ত্বের জন্য প্রতিটি সৈনিকের প্রাণপণ চেষ্টার প্রয়োজন ছিল, একটি ফ্রাঙ্ক অত্যন্ত মূল্যবান ছিল। সময়, শক্তি, যাবতীয় উপায়-উপাদান ও প্রত্যেক বস্তু অত্যধিক পরিমাণে দেশরক্ষার কাজে ব্যয়িত হওয়ার প্রয়োজন ছিল; অন্য দিকে এই জাতির যুবকদের প্রতি লক্ষ্য করুন, তাহাদের মধ্যে হাজার হাজার যুবক যৌন বিলাসে কারণে শুধু দীর্ঘকাল ধরিয়া কাজের অযোগ্যই হইয়া পড়িল না বরং এই সংকট মুহূর্তে জাতির অর্থ ও উপায়-উপাদান চিকিৎসার জন্য ব্যয় করিয়া ফেলিল।

একজন ফরাসী বিশেষজ্ঞ ডাঃ ল্যারেড (Dr. Laredde) বলেন যে, ফ্রান্সে প্রতি বৎসর শুধু সিফিলিস এবং তজ্জনিত ব্যাধিতে ত্রিশ হাজার লোক প্রাণত্যাগ করে। জ্বর রোগের পর ইহাই মৃত্যুর সর্ববৃহৎ কারণ। একটি রতিজ ব্যাধির এই অবস্থা! ইহা ব্যতীত এ ধরনের আরও অনেক ব্যাধি আছে।

পারিবারিক শৃঙ্খলার বিলোপ সাধন

এই বল্গাহীন যৌন উন্মাদনা ও লাম্পট্যপ্রিয়তার সার্বজনীন প্রচলন ফরাসী সভ্যতার যে দ্বিতীয় বিরাট আপদ ডাকিয়া আনিয়াছিল, তাহা হইল পারিবারিক শৃঙ্খলার বিলোপ সাধন। নারী-পুরুষের যে স্থায়ী ও সুদৃঢ় সম্পর্কের দ্বারা পারিবারিক শৃঙ্খলা স্থাপিত হয়, তাহার নাম বিবাহ। এই সম্পর্কের দ্বারাই মানব জীবনে শান্তি, সম্প্রীতি, স্থৈর্য ও স্থায়িত্ব স্থাপিত হয়। এই বস্তুই তাহার ব্যক্তিগত জীবনকে সামাজিক জীবনে পরিবর্তিত করিয়া দেয়। ইহাই বিশৃঙ্খলার অভিসম্পাতকে দমন করিতে তাহাদিগকে সভ্যতার দাস বানাইয়া দেয়। এই শৃঙ্খলার সীমারেখার মধ্যে প্রেম, শান্তি এবং ত্যাগের এমন শান্ত ও সুমহান আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়, যাহাতে নূতন বংশধর সঠিক চরিত্র, নির্ভুল শিক্ষা ও নির্মল চরিত্র গঠনের সঙ্গে প্রতিপালিত ও পরিবর্ধিত হইতে পারে। কিন্তু যেখানে নারী-পুরুষের অন্তর হইতে বিবাহ ও তাহার মহান উদ্দেশ্যের ধারণা একেবারে বিদূরিত হইয়াছে, যেখানে কামরিপু চরিতার্থ করা ব্যতীত যৌন সম্পর্কের অপর কোন উদ্দেশ্যই মনে স্থান পায় না এবং যেখানে কামপিপাসু ও কামপিপাসিনীর দল ভ্রমরের ন্যায় পুষ্পে পুষ্পে মধু পান করিয়া বেড়ায়, সেখানে এই শৃঙ্খলা স্থাপিত হইতে পারে না এবং থাকিতে পারে না। যেখানে নারী-পুরুষের এই যোগ্যতাই থাকে যে, তাহারা দাম্পত্য জীবনের গুরু দায়িত্ব, তাহার অধিকার, কর্তব্য ও নৈতিক নিয়মনীতির গুরুভার বহন করিবে, তাহাদের মানসিক ও নৈতিক অবস্থার ফল এই হয় যে, প্রত্যেক বংশধরের শিক্ষা পূর্বতন বংশ হইতে নিকৃষ্টতর হইয়া পড়ে। লোকের মধ্যে স্বার্থপরতা ও স্বেচ্ছাচারিতা এত বাড়িয়া যায় যে, সভ্যতার বন্ধন ছিন্ন হইতে থাকে। লোকের মধ্যে রূপ পরিবর্তন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইতস্ততকরণ এত বাড়িয়া যায় যে, জাতীয় রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোন স্থিরতা বিদ্যমান থাকে না। পারিবারিক শান্তি না থাকার কারণে তাহাদের জীবন তিক্ত হইতে তিক্ততর হইতে থাকে এবং একটি চিরন্তন দুর্ভাবনা তাহাদিগকে মুহূর্তের জন্যও শান্তি দান করিতে পারে না। ইহাই ইহলৌকিক জাহান্নাম, যাহা লোকে নির্বুদ্ধিতাসুলভ ভোগলালসার উন্মাদনায় ক্রয় করিয়া লয়।

ফ্রান্সে প্রতি বৎসর হাজারে সাতআটজন নারী পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এই অনুপাত এত নগণ্য যে, ইহার দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায়, ফরাসী অধিবাসিদের কেমন একটা বিরাট অংশ অবিবাহিত রহিয়া যায়।

আবার যে নগণ্য সংখ্যক লোক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাহাদের মধ্যেও অতি অল্প এমন পাওয়া যায়, যাহারা সৎ ও পবিত্র জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে বিবাহ করে। এই একটি উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যও তো তাহাদের থাকে। এমন কি যে নারী অবৈধ সন্তান প্রসব করিয়াছে, তাহাকে বিবাহ করত তাহার সন্তানকে বৈধ ঘোষণা করা জনসমাজে প্রচলিত এক কাম্য বস্তু ছিল। পল ব্যুরো বলেনঃ

ফ্রান্সের শ্রমিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইহা সাধারণভাবে প্রচলিত ছিল যে, বিবাহের পূর্বে বিবাহেচ্ছু নারী তাহার ভাবী স্বামীর নিকট হইতে এই প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে যে, সে তাহার অবৈধ সন্তানকে নিজের বৈধ সন্তান বলিয়া স্বীকার করিয়া লইবে।

১৯১৭ খৃস্টাব্দে সীনের (Saine) দেওয়ানী আদালতে জনৈকা নারী নিম্নোক্ত বিবৃতি দান করেঃ

আমি বিবাহের পূর্বেই আমার স্বামীকে এ বিষয়ে সাবধান করিয়া দিয়াছিলাম, আমার বিবাহের একমাত্র উদ্দেশ্য এই যে, অবিবাহিতা অবস্থায় আমি যে সন্তান প্রসব করিয়াছিলাম, তাহাকে বৈধ বলিয়া ঘোষণা করিতে হইবে। এখন প্রশ্ন এই যে, আমি তাহার সঙ্গে আর স্বামী-স্ত্রী রূপে বসবাস করিব কি না। এইরূপ ইচ্ছা আমার তখনও ছিল না, এখনও নাই। এইজন্যই যেদিন আমাদের বিবাহ হয় সেইদিনই সাড়ে পাঁচ ঘটিকায় আমি আমার স্বামীর সহিত বিবাহ বিচ্ছেদ করি। আজ পর্যন্ত তাহার সঙ্গে মিলিত হই নাই। কারণ দাম্পত্য জীবনের দায়িত্ব পালনের কোন ইচ্ছাই আমার ছিল না।

             -পল ব্যুরোর পূর্ব বর্ণিত গ্রন্থ, পৃঃ ৫৫

প্যারিসের একটি বিশিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষ পল ব্যুরোর নিকট এই বলিয়া মন্তব্য করেন যে, সাধারণত নব্য যুবকদের বিবাহের একমাত্র উদ্দেশ্য আপন গৃহেও একটি রক্ষিতার সেবা গ্রহণ করা। দশ বার বৎসর তাহারা চতুর্দিকে স্বাধীনভাবে রসাস্বাদন করিয়া বেড়ায়। তারপর এমন এক সময় আসে, যখন তাহারা এইরূপ উচ্ছৃঙ্খলতা ও লাম্পত্যে ক্লান্ত শ্রান্ত হইয়া একটি নারীকে বিবাহ করিয়া বসে, যেন গৃহের শান্তিও কিয়দংশ লাভ করা যায় এবং স্বাধীন আনন্দ সুখবিলাসীর ন্যায় আনন্দ সম্ভোগও করিতে পারে।   -উক্ত গ্রন্থ দ্র.

ফ্রান্সে বিবাহিত লোকের ব্যভিচার করা মোটেই দূষণীয় এবং নিন্দার্হ নহে। কেহ স্ত্রী ব্যতীত গৃহে কোন রক্ষিতা রাখিলে তাহা গোপন রাখিবার প্রয়োজন হয় না। সমাজও ইহাকে এক সাধারণ সম্ভাব্য বিষয় মনে করে।

  -উক্ত গ্রন্থ, পৃঃ ৭৬-৭৭

এইরূপ অবস্থায় বৈবাহিক সম্পর্ক এত ক্ষীণ হইয়া পড়িয়াছে যে, কথায় কথায় তাহা ছিন্ন হইয়া পড়ে। অনেক সময় এই সকল হতভাগ্যের দাম্পত্য জীবন কয়েক ঘন্তার বেশি তিকিয়া থাকে না। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় যে, ফ্রান্সের এক সম্মানিত ব্যক্তি যিনি কয়েকবার মন্ত্রিত্বের আসনও অলংকৃত করিয়াছেন, তিনি বিবাহের মাত্র পাঁচ ঘণ্টা পরে আপন স্ত্রীর সহিত বিবাহ বিচ্ছেদ করেন। এমন সব তুচ্ছ তুচ্ছ ব্যাপারে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘতিয়া থাকে যে, তাহা শ্রবণ করিলে হাসি পায়। যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেহ শয়নকালে ঘুমের ঘোরে নাক ডাকিলে অথবা একে অপরের কুকুরকে ভাল না বাসিলে বিচ্ছেদ অনিবার্য হইয়া পড়ে। সীনের দেওয়ানী আদালতে একবার একই দিবসে দুইশত চুরানব্বইটি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ১৮৪৪ খৃস্টাব্দে যখন বিবাহের নূতন আইন পাশ হয়, তখন চারি সহস্র তালাক সম্পাদিত হয়। ১৯০০ খৃস্টাব্দে এই সংখ্যা সাড়ে সাত সহস্রে, ১৯১৩ খৃস্টাব্দে ষোল সহস্রে ও ১৯৩১ খৃস্টাব্দে একুশ সহস্রে পৌঁছে।

বংশ হত্যা

সন্তান প্রতিপালন একটি উন্নত ধরনের নৈতিক কার্য। যাহার জন্য প্রয়োজন হয় প্রবৃত্তির সংযম, লালসা-বাসনার জলাঞ্জলী, দুঃখকষ্ট ও শ্রম স্বীকার এবং ধন প্রাণের উৎসর্গীকরণ। স্বার্থপর ও প্রবৃত্তির দাস যাহারা, তাহারা এই মহান কার্যের জন্য মোটেই প্রস্তুত নহে। কারণ একাকিত্ব বা সংশ্রবহীনতা ও পশুত্ব তাহাদিগকে পাইয়া বসে।

প্রায় শতাব্দীকাল হইতে ফরাসী দেশে গর্ভনিরোধ আন্দোলন চলিয়া আসিতেছে। এই আন্দোলনের ফলে ফরাসী দেশের প্রত্যেক নরনারী এমন কৌশল শিক্ষা করিয়াছে যাহাতে তাহারা মদানন্দ উপভোগ করিয়াও তাহার স্বাভাবিক পরিণতি গর্ভসঞ্চার, সন্তান প্রসব ও বংশ বৃদ্ধি হইতে রক্ষা পাইতে পারে। এমন কোন নগর, উপনগর বা গ্রাম নাই, যেখানে গর্ভনিরোধের ঔষধাবলী ও সরঞ্জমাদি প্রকাশ্যে বিক্রয় করা হয়না। ফলে এই  সবের ব্যবহার শুধু উচ্ছৃঙ্খল যৌনামোদীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং বিবাহিত নরনারীও ইহা প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে এবং ইহাই কামনা করে যে, সন্তান ভূমিষ্ট হইয়া যেন তাহাদের সুখ সম্ভোগে কোন প্রকার বাধার সৃষ্টি করিতে না পারে। ফরাসী দেশের জন্মহার যে পরিমাণে হ্রাস পাইতেছে তাহা লক্ষ্য করিয়া বিশেষজ্ঞগণ অনুমান করিয়াছেন যে, গর্ভনিরোধের এই ব্যাপক মহামারী প্রতি বৎসর অন্ততপক্ষে ছয় লক্ষ সন্তানের জন্ম গ্রহণে বাধা দান করে। এই সকল কৌশল সত্ত্বেও যে সকল গর্ভসঞ্চার হয়, গর্ভনিপাত করিয়া তাহা নষ্ট করা হয়। এইরূপে আরও তিন চারি লক্ষ্য মানব সন্তানের  পৃথিবীতে আগমন বন্ধ হইয়া যায়।গর্ভনিপাত শুধু অবিবাহিত নারীই করেনা, , বরং বিবাহিতা নারীও এই ব্যপারে তাহাদের সমতুল্য। নৈতিকতার দিক দিয়া এই কার্যকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে এবং নারীর অধিকার মনে করা হয়। মনে হয় দেশের আইন এই বিষয়ে চক্ষু বন্ধ করিয়া আছে। যদিও আইন গ্রন্থে ইহা এখনও অপরাধজনক বলিয়া লিপিবদ্ধ আছে,তথাপিও ব্যাপার এই যে, তিন শত জনের মধ্যে কোনক্রমে একজনকে এই অপরাধে চালান দেয়া হয়। যাহাদের চালান দেওয়া হয়, তাহাদের মধ্যেও শতকরা পঁচাত্তর জন কোর্ট হইতে মুক্তি লাভ করে।গর্ভনিপাতের ডাক্তারি কৌশল এত সহজ ও সর্বজনপরিচিত যে,অধিকাংশ নারী নিজেই গর্ভনিপাত করিতে পারে। যাহারা ইহা করিতে পারে না,তাহাদের ডাক্তারের সাহায্য লাভে বেগ পাইতে হয়না। ভ্রুণ হত্যা বা গর্ভস্থ সন্তান হত্যা করা তাহাদের নিকট যন্ত্রণাদায়ক দন্ত উৎপাটনের ন্যায় এক সাধারণ ব্যাপার হইয়া পড়িয়াছে ।

এইরূপ মানসিকতা মাতৃ-প্রকৃতিকে করিয়া দিয়াছে যে,যাহারা প্রেম ও স্নেহবাৎসল্যকে জগতে চিরকালেই পরম ও চরম বলিয়া স্বীকার করিয়া লইয়াছে সেই মাতা স্বীয় সন্তানাদির প্রতি শুধু বিরাগভাজন ও বিষণ্ণই নহে, বরং তাহাদের শত্রু হইয়া পড়িয়াছে।গর্ভনিরোধ নিপাতের নিষ্ফল চেষ্টার পরও যে সকল সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তাহাদের প্রতি নির্মম আচরণ করা হয়। পল ব্যুরো এই বেদনাদায়ক তথ্যটি নিম্নরূপ ভাষায় প্রকাশ করিতেছেনঃ

প্রতিদিন সংবাদ-পত্রাদিতে ঐ সকল সন্তানের দুর্দশা প্রকাশিত হয়, যাহাদের প্রতি তাহাদের মাতাপিতা নির্মম অমানুষিক আচরণ করিয়াছে। সংবাদপত্রেও কেবল অসাধারণ ঘটনাগুলির উল্লেখ করা হয়, কিন্তু লোকে ইহা ভালভাবেই জানে যে, সাধারণত এই সকল হতভাগ্য অনভিপ্রেত অতিথির প্রতি তাহাদের পিতামাতা কিরূপ নির্মম ব্যবহার করে। তাহাদের জনক-জননী তাহাদের প্রতি এইজন্য বিষণ্ণ ও উদাসীন যে, এই হতভাগ্যের দল তাহাদের জীবনের সুখ-সম্ভোগ একেবারে বিনষ্ট করিয়া দিয়াছে। সাহসিকতার স্বল্পতা অনেক ক্ষেত্রে গর্ভনিপাতে বাধা দান করে এবং এই সুযোগে নিরপরাধ শিশু জগতের বুকে পদার্পণ করে। কিন্তু তাহার আগমনের পরেই তাহাকে পরিপূর্ণ শাস্তি ভোগ করিতে হয়।           -উক্ত গ্রন্থ, পৃ.৭৪

সন্তানের প্রতি এতোদৃশ বিতৃষ্ণা ও ঘৃণা এমন চরমে পৌছিয়াছে যে, একদা একটি নারীর ছয় মাসের শিশুর মৃত্যু হইলে সে তাহার মৃত সন্তানের শবদেহ সম্মুখে রাখিয়া নৃত্য-গীতের অনুষ্ঠান করিল এবং প্রতিবেশীদের সম্মুখে বলিতে লাগিলঃ

এখন আমরা দ্বিতীয় সন্তান হইতে দিব না। এই সন্তানটির মৃত্যুতে আমি ও আমার স্বামী পরম শান্তি লাভ করিয়াছি। চিন্তা করিয়া দেখ তো, সন্তান কোন বস্তু? সে সর্বদা ঘ্যানর ঘ্যানর করিয়া কাঁদে, নোংরামি সৃষ্টি করে এবং ইহা হইতে কি বাঁচিবার উপায় আছে?        -উক্ত গ্রন্থ, পৃ.৭৫

ইহা অপেক্ষা অধিকতর বেদনাদায়ক ব্যাপার এই যে, প্রসূত হত্যা এক সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় বিস্তার লাভ করিতেছে। ফরাসী সরকার ও তথাকার বিচারালয়গুলি গর্ভনিপাতের ন্যায় এই মারাত্মক অপরাধকেও উপেক্ষা করিয়া চলিয়াছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় যে, ১৯১৮ খৃস্টাব্দে ‘Loir’ আদালতে দুইজন নারীকে শিশু হত্যার অপরাধে হাযির করা হয় এবং উভয়কেই পরে মুক্তি দেওয়া হয়। তাহাদের একজন তাহার শিশু সন্তানকে পানিতে ডুবাইয়া মারিয়াছে। তাহার প্রথম সন্তান এক আত্মিয়ের দ্বারা প্রতিপালিত হইতেছে এবং সে দ্বিতীয় সন্তান প্রতিপালনেরও ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু মাতা সিদ্ধান্ত করে যে, এমন শত্রুর সে নিপাত করিয়াই ছাড়িবে। আদালতে তাহার অপরাধ ক্ষমার যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হয়। দ্বিতীয় নারী তাহার সন্তানকে প্রথমত গলা টিপিয়া মারে। ইহাতে তাহার জীবনবায়ু একেবারে নিঃশেষিত হয় নাই মনে করিয়া সে তাহাকে দেওয়ালে নিক্ষেপ করিয়া মস্তক চূর্ণ করিয়া দেয়। জজ ও জুরীদের মতে সে মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হয় নাই। এই বৎসরেই সীনের আদালতে একটি নর্তকীকে অনুরূপ অপরাধের জন্য হাযির করা হয়। সে তাহার সন্তানের জিহ্ববা টানিয়া বাহির করিবার চেষ্টা করে অতপর তাহার মস্তক চূর্ণ করিয়া এবং গলা কাটিয়া দিয়া তাহাকে হত্যা করে। এই নারীকেও নিরপরাধ বলিয়া জজ ও জুরীগণ রায় দান করে।

যে জাতি স্বীয় বংশধরের শত্রুতা সাধনে এমন চরমে উপনীত হইতে পারে, পৃথিবীর কোন সুব্যবস্থাই তাহাদিগকে ধ্বংসের কবল হইতে রক্ষা করিতে পারে না। নতুন বংশধরের জন্মলাভ একটি জাতির স্থিতিপরস্পরা অক্ষুন্ন রাখিবার জন্য অনিবার্য। যে জাতি আপন বংশধরের শত্রু হয়, সে প্রকৃতপক্ষে নিজেরই শত্রু হইয়া পড়ে। সে আত্মহত্যা করিতে থাকে এবং তাহার কোন বহিশত্রু না থাকিলেও সে নিজেই নিজের অস্তিত্বকে বিলুপ্ত করিতে থাকে। পূর্বেই বর্ণিত হইয়াছে যে, বিগত ষাট বৎসর হইতে ফরাসীর জন্মহার ক্রমশ হ্রাস পাইতেছে। কোন বৎসর মৃত্যুহার জন্মহারকে অতিক্রম করে। কোন কোন বৎসর উভয়ই সমান থাকে। আবার কোন সময়ে জন্মহার মৃত্যুহারের তুলনায় অতি কষ্টে হাজারকরা একজনের অনুপাতে বাড়িয়া যায়। অপর দিকে ফরাসী দেশে বিজাতীয় বহিরাগতের সংখ্যা দিন দিন বাড়িয়াই চলিতেছে। ১৯৩১ খৃস্টাব্দে ফরাসী দেশের মোট চারি কোটি আঠার লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে আটাশ লক্ষ নব্বই হাজার বহিরাগত বিজাতীয় ছিল। এই অবস্থা যদি চলিতে থাকে তাহা হইলে বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ফরাসী জাতি যে স্বীয় মাতৃভূমিতেই সংখ্যালঘুতে পরিণত হইবে, তাহাতে আশ্চর্যের কিছুই নাই।

ইহাই ঐ সকল মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গীর পরিণাম ফল, যাহাকে ভিত্তি করিয়া উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভকালে নারী অধিকারের আন্দোলন পরিচালিত হইয়াছিল।

আরও কতিপয় উদাহরণ

আমরা শুধু ঐতিহাসিক ঘটনা পরস্পরা অক্ষুন্ন রাখিবার জন্যই ফরাসী দেশের মতবাদ এবং তথাকার পরিণাম ফল বর্ণনা করিয়াছি। কিন্তু এই ব্যাপারে ফরাসী দেশকেই একমাত্র দায়ী মনে করিলে অন্যায় করা হইবে। প্রকৃতপক্ষে যে সমস্ত দেশ তথাকথিত মতবাদ ও সামাজিকতার পূর্ববর্ণিত সামঞ্জস্যহীন নীতিসমূহ গ্রহণ করিয়াছে, তাহাদের অবস্থা প্রায়ই অনুরূপ। দৃষ্টান্তস্বরূপ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ব্যবস্থা ষোলকলায় প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে, তাহার কথাই ধরা যাউক।

তরুণদের উপর পারিপার্শ্বিক যৌন প্রভাব

বিখ্যাত জর্জ বেন লিন্ডসে (Ben Lindsey) একদা ডেনভারস্থ তরুণদের অপরাধের জন্য স্থাপিত বিচারালয়ের সভাপতি (Chairman of the Juvenile Court of Denver) ছিলেন। এই কারণে আমেরিকার তরুণ সম্প্রদায়ের নৈতিক অবস্থা তাঁহার ভালভাবে জানিবার সুযোগ হইয়াছিল। তিনি তাঁহার “Revolt of Modern Youth” নামক গ্রন্থে লিখিয়াছেন যে, আমেরিকার বালক-বালিকাগণ নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই সাবালক হইতে আরম্ভ করিয়াছে। অতি অল্প বয়সেই ইহাদের মধ্যে যৌনপ্রবণতার উন্মেষ হয়। তিনি দৃষ্টান্তস্বরূপ তিন শত বারজন বালিকার অবস্থা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পারেন যে, তাহাদের মধ্যে দুই শত পঞ্চাশ জন এগার হইতে তের বৎসর বয়সেই সাবালিকা হইয়াছে এবং তাহাদের এমন যৌন তৃষ্ণা ও দৈহিক চাহিদার লক্ষণ দেখা যায়, যাহা আঠার বৎসর বয়স্কা বালিকার মধ্যে হওয়া সম্ভব নহে।          -উক্ত গ্রন্থ, পৃ.৮২-৮৬

ডাঃ এডিথ হুকার (Edith Hooker) তাহার ‘Laws of Sex’ নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ

বিশিষ্ট ভদ্র ও ধনিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইহা এক অতি সাধারণ ব্যাপার যে, সাত-আট বৎসরের বালিকা সমবয়স্ক বালকদের সহিত প্রণয় সম্পর্ক স্থাপন করে এবং অধিকাংশ সময়ে যৌনক্রিয়াও করিয়া থাকে।

তিনি আরও বলেনঃ

কোন বংশের উজ্জ্বল রত্ন সাত বৎসরের একটি বালিকা তাহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ও কতিপয় বন্ধুর সঙ্গে সম্মিলিত হয়। আর একটি ঘটনা এই যে, দুইটি বালিকা ও তিনটি বালকের একটি দলকে পারস্পরিক যৌনকার্যে লিপ্ত দেখা যায়। তাহারা অন্য সমবয়স্ক বালক-বালিকাদিগকেও উক্ত কার্যের জন্য প্ররোচনা দেয়। এই দলের মধ্যে দশ বৎসর বয়স্কা বালিকাটিই সকলের বড় ছিল। কিন্তু তথাপিও সে বিভিন্ন প্রেমিকের প্রেম নিবেদন লাভ করিবার গৌরব অর্জন করে।        -উক্ত গ্রন্থ, পৃ.৩২৮

বালটিমোরের জনৈক ডাক্তারের রিপোর্ট হইতে জানা যায় যে, সেই শহরে বার বৎসরের কম বয়সের বালিকার সহিত যৌনকার্য করার অভিযোগে এক বৎসরে সহস্রাধিক মামলা দায়ের করা হয়।

       -উক্ত গ্রন্থ, পৃ.১৭৭

কামরিপু জাগ্রত করিবার যাবতীয় উপায় উপাদানে পরিপূর্ণ উত্তেজনাব্যঞ্জক পরিবেশের ইহাই প্রাথমিক পরিণাম ফল। আমেরিকার জনৈক গ্রন্থকার বলেনঃ

আমাদের অধিবাসীদের বৃহত্তর অংশ যে অবস্থায় কালাতিপাত করে, তাহা এত অস্বাভাবিক যে, দশ পনের বৎসর বয়সেই বালক-বালিকাদের মধ্যে একে অপরের সহিত প্রণয়াবদ্ধ হইবার মনোভাব জাগ্রত হয়। এইরূপ অকাল যৌনস্পৃহার পরিণাম অত্যন্ত মারাত্মক ও ভয়াবহ হওয়াই স্বাভাবিক। অন্ততপক্ষে ইহার পরিণাম ফল এই হয় যে, অল্পবয়স্কা তরুণীগণ বন্ধুদের সহিত গৃহ হইতে পলায়ন করে অথবা অল্প বয়সেই বিবাহিতা হয়। কিন্তু প্রেমের খেলায় যদি তাহারা অকৃতকার্য হয় তবে আত্মহত্যা করিয়া বসে।

বিদ্যালয়ে যৌন চর্চা

এইভাবে যে সমস্ত বালক-বালিকার মধ্যে অসময়ে যৌন প্রবণতা জাগ্রত হয়, তাহাদের প্রথম পরীক্ষাক্ষেত্র হয় বিদ্যালয়সমূহ। বিদ্যালয়গুলি দুই প্রকার হয়। এক প্রকার বিদ্যালয়ে শুধু একই শ্রেণীর শিক্ষার্থী ভর্তি হয় এবং আর এক শ্রেণীর বিদ্যালয়ে বালক-বালিকা উভয়েরই সহশিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

প্রথম শ্রেণীর বিদ্যালয়গুলিতে সমলৈঙ্গিক মৈথুন (Homo Sexuality) ও হস্তমৈথুনের (Masturbation) সংক্রামক ব্যাধি বিস্তার লাভ করিতেছে। কারণ শৈশবকালেই যে ধরনের আবেগ-অনুভূতিকে জাগ্রত করা হয় এবং চতুষ্পার্শ্বস্থ পরিবেশ যাহার পূর্ণ উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তাহাকে চরিতার্থ করিবার জন্য কোন না কোন পন্থা অবলম্বন অপরিহার্য হইয়া পড়ে। ডাক্তার হুকার বলেন যে, এই ধরনের শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে, কলেজে, নার্সদের ট্রেনিং স্কুলে, ধর্মীয় শিক্ষাগারসমূহে সর্বদাই এইরূপ ঘটনা সংগঠিত হয় যে, একই লিঙ্গের দুইজন পরস্পর যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হইয়াছে এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তাহার কোন আগ্রহই নাই।        -উক্ত গ্রন্থ, পৃ.৩৩১

এতদসম্পর্কে তিনি আরও অনেক ঘটনার উল্লেখ করিয়া বলেন যে, বালিকা বালিকার সহিত এবং বালক বালকের সহিত যৌনক্রিয়ায় সম্মিলিত হইয়া ভয়াবহ পরিনামের সম্মুখীন হইয়াছে। এই সমলৈঙ্গিক মৈথুন সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় কিরূপ দ্রুত প্রসার লাভ করিতেছে, তাহা অন্যান্য গ্রন্থ পাঠে জানা যায়। Dr. Lowry তাহার “Herselt” গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন যে, একবার এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক চল্লিশটি পরিবারের নিকট গোপন পত্র দ্বারা জানাইয়া দেন যে, তাহাদের সন্তানদিগকে আর স্কুলে রাখা সম্ভব নহে। কারণ তাহাদের মধ্যে চরিত্রহীনতার এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে।        -উক্ত গ্রন্থ, পৃ.১৭৯

এখন আমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর বিদ্যালয় সম্পর্কে আলোচনা করিব যেখানে বালক-বালিকার সহশিক্ষার ব্যবস্থা আছে। এখানে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টির উপাদান যেমন বর্তমান আছে, তাহা চরিতার্থ করিবার উপায়ও তেমনই বিদ্যমান রহিয়াছে। শৈশবে যে যৌনস্পৃহা ও প্রবনতার সঞ্চার হয়, এই ধরনের বিদ্যালয়ে আসিবার পর তাহা চরিতার্থ করিবার সুযোগ ঘটে। বালক-বালিকারা অতি জঘন্য ও অশ্লীল সাহিত্য অধ্যয়ন করিতে অভ্যস্ত হয়। প্রেমপূর্ণ গল্প-উপন্যাস-নামমাত্র আর্টের পুস্তিকাসমূহ, যৌন সমস্যা সম্বলিত অশ্লীল গ্রন্থাদি এবং গর্ভনিরোধ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য প্রবন্ধাদি স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের যৌন প্রভাবে সর্বাপেক্ষা এক আকর্ষণীয় বস্তু হইয়া পড়ে। খ্যাতনামা মার্কিন গ্রন্থকার হিনড্রিচ ভন লোয়েন বলেন, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে সকল সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা অধিক চাহিদা, তাহা সকল প্রকার অপবিত্রতা, অশুচিতা, অশ্লীলতা ও প্রগলভতার সংক্ষিপ্ত সার মাত্র। জনসাধারণের মধ্যে এই প্রকার সাহিত্য আর কোনকালেও এত স্বাধীনভাবে প্রচারিত হয় নাই।

এই সকল সাহিত্য হইতে যে সব জ্ঞান লাভ হয়, যুবক-যুবতীগণ সে সম্পর্কে স্বাধীনভাবে আলোচনা করতঃ প্রত্যক্ষ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়। বালক-বালিকা, যুবক-যুবতী মিলিয়া পেটিং পার্টিস-এর জন্য বাহির হয় এবং তথায় স্বাধীনভাবে মদ্য ও সিগারেট পান এবং নৃত্য-গীতের ভিতর দিয়া জীবনকে পরিপূর্ণরূপে উপভোগ করে।* লিন্ডসে সাহেবের অনুমান এই যে, হাই স্কুলের শতকরা ৪৫ জন ছাত্রী স্কুল ত্যাগ করিবার পূর্বেই চরিত্রভ্রষ্ট হইয়া পড়ে।

শিক্ষার পরবর্তী সোপানগুলিতে ইহার অনুপাত অনেক বেশী। লিন্ডসে সাহেব বলেন, হাই স্কুলের বালকগণ বালিকাদের তুলনায় যৌন তৃষ্ণার দিক দিয়া অনেক বেশী পশ্চাতে। সাধারণত বালিকাগণই কোন না কোন প্রকারে অগ্রগামিনী হয় এবং বালকগণ তাহাদের ইংগিতে নৃত্য করিতে থাকে।

তিনটি প্রধান প্ররোচক বিষয়

স্কুল কলেজে তবুও এক প্রকারের নিয়ম শৃঙ্খলা আছে, যাহার দ্বারা ছাত্রছাত্রীদের মেলামেশায় কিয়দংশে বাধার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই সকল নব্য যুবক-যুবতীর দল যখন যৌনক্ষুধার প্রজ্জ্বলিত অগ্নি ও উচ্ছৃঙ্খল স্বভাব লইয়া বিদ্যালয় ত্যাগ করতঃ জীবনক্ষেত্রে পদার্পণ করে, তখন তাহাদের আলোড়ন-উপদ্রব যাবতীয় বাধা-বন্ধনকেই অতিক্রম করে। এখানে তাহাদের যৌন প্রবণতা উত্তেজিত করিবার এক পরিপূর্ণ বারুদখানা বিদ্যমান থাকে এবং উত্তেজনা প্রশমিত করিবার উপায়-উপাদানও অনায়াসে লাভ করা যায়।

যে সমস্ত কারণে আমেরিকায় চরিত্রহীনতার অসাধারণ প্রচার প্রসার চলিতেছে, তৎসম্পর্কে একটি মার্কিন পত্রিকা নিম্নোক্ত মন্তব্য করেঃ

তিনটি শয়তানী শক্তি আছে এবং তাহাদের ত্রিত্ববাদ আজ আমাদের এই ভূভাগের উপর প্রভাব বিস্তার করত এক নরক সৃষ্টি করিয়াছে। এই তিনটি শক্তি হইতেছেঃ

১.অশ্লীল সাহিত্য, ইহা প্রথম মহাযুদ্ধের পর হইতে আশ্চর্যজনক দ্রুততার সহিত নির্লজ্জতার ব্যাপক প্রচার করিয়া আসিতেছে।

২.চলচ্চিত্র; ইহা শুধু সকাম প্রেম-প্রবণতাকে প্ররোচিত করিয়াই ক্ষান্ত হয় না, বরং উহার বাস্তব শিক্ষা দান করে।

৩.নারীদের অধঃপতিত চারিত্রিক মান; তাহাদের বেশ-ভূষা, অধিকাংশ সময়ে নগ্নতা, সিগারেট পানের ক্রমবর্ধমান অভ্যাস এবং পুরুষদের সহিত অবাধ মেলামেশা প্রভৃতি কারণে অপরিচিতের সহিতও তাহাদের যোগসূত্র প্রগাঢ় হয়।

এই তিনটি বস্তু আমাদের এখানে ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করিতেছে। ইহার ফলে খৃষ্টীয় সভ্যতা ও সমাজ ব্যবস্থার অবনতি এবং শেষ পর্যন্ত বিলোপ সাধন অবশ্যম্ভাবী হইবে। যদি এখনও আমরা ইহার গতিরোধ করিতে না পারি, তাহা হইলে যে প্রবৃত্তি পূজা ও যৌন উন্মত্ততা রোম এবং অন্যান্য জাতিকে তাহাদের মদ্য, নারী ও নৃত্যগীতসহ ধ্বংসের অতল গহ্ববরে নিক্ষেপ করিয়াছে, আমাদের ইতিহাসও অনুরূপভাবে লিখিত হইবে।

যে সকল যুবক-যুবতীর মধ্যে কণামাত্র উষ্ণ শোণিত বিদ্যমান আছে, সভ্যতা ও সমাজ ব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তারকারী এই তিনটি শয়তানী শক্তি তাহাদের আবেগ-অনুভূতির মধ্যে চিরন্তন আলোড়ন সৃষ্টি করে। বস্তুত অশ্লীলতার আধিক্যই এইরূপ আলোড়নের অবশ্যম্ভাবী পরিণাম ফল।

*. How I can get married, P.172

অশ্লীলতার আধিক্য

আমেরিকার যে সকল নারী বেশ্যাবৃত্তিকেই তাহাদের স্থায়ী জীবিকা স্বরূপ গ্রহণ করিয়াছে, তাহাদের সংখ্যা প্রায় চার হইতে পাঁচ লক্ষের মধ্যে।* কিন্তু আমেরিকার বেশ্যাদিগকে এতদ্দেশীয় বেশ্যাদের অনুরূপ মনে করা চলিবে না। ইহারা বংশানুক্রমিক বেশ্যা নহে। আমেরিকার বেশ্যা এমন এক নারী, যে গতকল্য পর্যন্ত কোন স্বাধীন পেশা অবলম্বন করিয়াছিল, অসৎ সংসর্গে থাকিয়া চরিত্রভ্রষ্ট-হইয়াছে এবং বেশ্যালয়ের শরণাপন্ন হইয়াছে। সে এখানে কিছুকাল কাটাইবে। অতপর বেশ্যাবৃত্তি পরিত্যাগ করতঃ কোন অফিস বা কারখানায় চাকুরী গ্রহণ করিবে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গিয়াছে যে, আমেরিকার বেশ্যাদের শতকরা পঞ্চাশজন গৃহপরিচারিকাদের (Domestic Servant) মধ্যে হইতে বেশ্যাবৃত্তি গ্রহণ করে। অবশিষ্ট পঞ্চাশজন হাসপাতাল, অফিস ও দোকানের চাকুরী পরিত্যাগ করতঃ বেশ্যালয়ে গমন করে। সাধারণত পনের-বিশ বৎসর বয়সে এই ব্যবসা আরম্ভ করা হয় এবং পচিশ-ত্রিশ বৎসর বয়স হইলে পুনরায় বেশ্যালয় পরিত্যাগ করিয়া কোন স্বাধীন ব্যবসা শুরু করে।**

আমেরিকার চার-পাঁচ লক্ষ বেশ্যার অস্তিত্বের মূলে কি তাৎপর্য রহিয়াছে, তাহা এই আলোচনা হইতে অনায়াসেই উপলব্ধি করা যায়।

পূর্ব অধ্যায় বর্ণিত হইয়াছে যে, পাশ্চাত্য দেশগুলিতে বেশ্যাবৃত্তি একটা সুসংগঠিত আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ে পরিণত হইয়াছে। আমেরিকার নিউইয়র্কে, রিউ-ডি জেনিরো, বুয়েন্স আয়ারস উক্ত ব্যবসায়ের কেন্দ্র বিশেষ। নিউইয়র্কের দুইটি বৃহৎ ব্যবসায় কেন্দ্রের প্রতিটির স্বতন্ত্র ব্যবস্থাপক সভা আছে, যাহার সভাপতি এবং সম্পাদক যথারীতি নির্বাচিত হয়। প্রতিটির একজন করিয়া আইন উপদেষ্টা তাহাদের পক্ষে ওকালতি করে। যুবতী নারীদিগকে ফুসলাইয়া অপহরণ করিবার জন্য হাজার হাজার দালাল নিযুক্ত আছে। তাহারা প্রতিটি স্থানে শিকার অন্বেষণে ঘুরিয়া বেড়ায়। এই সকল শিকারী কিরূপ দক্ষতাসম্পন্ন তাহা এই বর্ণনা হইতে অনুমান করা যায় যে, শিকাগো আগমনকারী বাস্তুত্যাগী সংঘের সভাপতি একবার পনর মাসের আগমনকারীদের সংখ্যা গণনা করেন। তাহাতে জানা যায় যে, এই সময়ের মধ্যে শিকাগো গমনেচ্ছু ৭,২০০ জন বালিকার এই মর্মে পত্র পাওয়া যায় যে, তাহারা শিকাগো পৌছিতেছে। কিন্তু মাত্র ১,৭০০ জন গন্তব্য স্থানে পৌঁছে। অবশিষ্ট বালিকাদের কোন সন্ধানই পাওয়া যায় নাই।

বেশ্যালয় ব্যতীতও তথায় বহু Assignation Houses ও Call Houses আছে। ইহার উদ্দেশ্যে এই যে,যদি সম্ভ্রান্ত পুরুষ ও নারী পরস্পর সম্মিলিত হইতে ইচ্ছা করে, তাহা হইলে উক্ত স্থানে তাহাদের জন্য যথারীতি সুব্যবস্থা করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গিয়াছে যে, একটি শহরেই ঐরূপ ৭৮টি গৃহ আছে। অপর দুইটি শহরে যথাক্রমে ৪৩টি ও ৩৩টি অনুরূপ গৃহ আছে।*

এই সমস্ত গৃহে যে শুধু অবিবাহিত নরনারীই গমন করে তাহা নহে; অনেক বিবাহিত নরনারীও তথায় গমন করে। জনৈক বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক মন্তব্য করেন ‘নিউইয়র্কের অধিবাসীদের এক তৃতীয়াংশ চারিত্রিক ও

­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­*.Prostitution in U.S.A., P. 64-69

**.Heself, P. 116

দৈহিক দিক দিয়া দাম্পত্য জীবনের দায়িত্ব প্রতিপালন করে না। নিউইয়র্কে ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অবস্থার মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নাই।**

আমেরিকার নৈতিক সংস্কারকদের একটি সভা ‘Committee of Fourteen’ নামে অভিহিত। এই সভার পক্ষ হইতে অসচ্চরিত্রের আড্ডাগুলির সন্ধান, দেশের নৈতিক অবস্থার তথ্যানুসন্ধান এবং নৈতিক সংস্কার সাধনের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থাবলম্বন ব্যাপকভাবে করা হয়। ইহার রিপোর্টগুলিতে বলা হইয়াছে যে, আমেরিকার যত নৃত্যশালা, নৈশ ক্লাব, সৌন্দর্যশালা [Beauty Saloons], হস্ত কমনীয়করণের দোকান [Manleure Shops], মালিশ কক্ষ [Massage Rooms] ও কেশবিন্যাসের দোকান [Hair Dressing saloons] আছে তাহা প্রায়ই বেশ্যালয়ে পরিণত হইয়াছে। এমন কি তাহা হইতে নিকৃষ্টতর বলিলেও অত্যুক্তি হিবে না। কারণ সেখানে যে সকল কুকার্য করা হয় তাহা অবক্তব্য।

রতিজ দুষ্টব্যাধি

যৌন উচ্ছৃঙ্খলতার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিই হইতেছে রতিজ দুষ্টব্যাধি। অনুমিত হইয়াছে যে, আমেরিকার শতকরা ৯০ জন অধিবাসী এই ব্যাধিতে আক্রান্ত। Encyclopedia Britannica হইতে জানা গিয়াছে যে, তথাকার সরকারী ঔষধালয়গুলিতে প্রতি বৎসর গড়ে দুই লক্ষ সিফিলিস ও এক লক্ষ ষাট হাজার প্রমেহ রোগীর চিকিৎসা করা হয়। পঁয়ষট্টিটি ঔষধালয় শুধু উক্ত ব্যাধিগুলির চিকিৎসার জন্যই নির্দিষ্ট রহিয়াছে। কিন্তু সরকারী ঔষধালয় অপেক্ষা বেসরকারী ডাক্তারের নিকটে রোগীর ভীড় বেশী হইয়া থাকে। এখানে শতকরা ৬১ জন সিফিলিস (গমি ঘা) ও ৮৯ জন প্রমেহ রোগীর চিকিৎসা করা হয়।              -উক্ত গ্রন্থ, খন্ড ২৩, পৃ.৪৫

প্রতি বৎসর ত্রিশ-চল্লিশ হাজার শিশু জন্মগত সিফিলিস রোগে মৃত্যুবরণ করে। কঠিন জ্বররোগ ব্যতীত অন্যান্য যত প্রকার ব্যাধিতে মৃত্যু ঘটে, তাহার মধ্যে সিফিলিস ব্যাধিজনিত মৃত্যুর হার অত্যাধিক।

সেই প্রমেহ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের ধারণা যে, যুবকদের শতকরা ৬০ জন এই ব্যাধিতে আক্রান্ত। ইহাদের মধ্যে বিবাহিত অবিবাহিত উভয়ই শ্রেণীই রহিয়াছে।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞগণ এই বিষয়ে একমত যে, যে সকল বিবাহিতা স্ত্রীলোকের দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়, তাহাদের শতকরা ৭৫ জনের মধ্যে সিফিলিসের জীবাণু পাওয়া যায়।*

­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­*.Prostitution in U.S.A., P. 64-69

**.Heself, P. 116

তালাক ও বিচ্ছেদ

এইরূপ অবস্থায় পারিবারিক শৃঙ্খলা ও দাম্পত্য সম্পর্কে কেমন করিয়া অক্ষুন্ন থাকিতে পারে? যে সমস্ত স্বাধীনজীবী নারী কামরিপু চরিতার্থ করিবার প্রয়োজন ব্যতিরেকে তাহাদের জীবনে পুরুষের আবশ্যকতা অনুভব করে না এবং বিবাহ না করিয়াই পুরুষ যাহাদের সহিত মিলিত হইতে পারে, তাহারা বিবাহকে একটি অনাবশ্যক বস্তু মনে করে। আধুনিক দর্শন ও জড়বাদী দৃষ্টিভঙ্গী তাহাদের অন্তকরণ হইতে এই ধারণা মুছিয়া ফেলিয়াছে যে, বিবাহ ব্যতিরেকে কোন পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কোন দোষ বা পাপ হইতে পারে। এই পরিবেশ সমাজকেও এমন চেতনাহীন করিয়া ফেলিয়াছে যে, এই ধরনের নারীকে সে ঘৃণা বা নিন্দনীয় মনে করে না। জর্জ লিন্ডসে আমেরিকার সাধারণ নারী জাতির মনোভাব নিম্নরূপ ভাষায় প্রকাশ করিয়াছেনঃ

বিবাহ আমি কেন করিব? আমার সঙ্গিনীদের মধ্যে যাহারা গত দুই বৎসরে বিবাহ করিয়াছে, তাহাদের দশজনের মধ্যে পাঁচজনের বিবাহই তালাকে পরিণত হইয়াছে। আমি মনে করি, বর্তমান যুগের প্রত্যেক মেয়ে প্রেমের ব্যাপারে স্বাধীন কার্যক্রম অবলম্বন করিবার স্বাভাবিক অধিকার রাখে। গর্ভনিরোধের যথেষ্ট জ্ঞান আমাদের আছে। ইহার দ্বারা আমাদের এই আশংকাও দূর হইয়াছে যে, কোন অবৈধ সন্তান জন্মলাভ করিয়া আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি জটিল করিয়া তুলিবে। আমাদের বিশ্বাস, আধুনিক পন্থানুযায়ী গতানুগতিক আচার পদ্ধতির পরিবর্তন সাধনই বিবেকের কাজ করিবে।

এইরূপ মনোভাবাসম্পন্ন নির্লজ্জ নারীকে বিবাহে উদ্বুদ্ধ করিতে পারে একমাত্র প্রবল প্রেমানুরাগ। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই এই প্রেমানুরাগ আন্তরিক হয় না, একটা সাময়িক উত্তেজনার বশে হইয়া থাকে। উত্তেজনার নেশা কাটিয়া যাইবার পর স্বামি-স্ত্রীর মধ্যে আর প্রেম অবশিষ্ট থাকে না। প্রকৃতি ও আচার ব্যব্হারের কিঞ্চিত বিসদৃশ্য উভয়ের মধ্যে ঘৃণার সঞ্চার করে। অবশেষে তালাক অথবা বিচ্ছেদের আবেদনসহ তাহারা বিচারালয়ের শরণাপন্ন হয়।

লিন্ডসে বলেনঃ

১৯২২ খৃস্টাব্দে ডেনভারের প্রতিটি বিবাহই বিচ্ছেদে পর্যবসিত হইয়াছিল এবং প্রতি দুইটি বিবাহের জন্য একটি করিয়া তালাকের মামলা দায়ের করা হইয়াছিল। ইহা শুধু ডেনভারেই সীমাবদ্ধ ছিল না, আমেরিকার প্রায় প্রতিটি নগরেই অনুরূপ ঘটনা ঘটিয়াছিল। তিনি আরও বলেনঃ তালাক এবং বিচ্ছেদ দিন দিন বাড়িয়াই চলিয়াছে। এই অবস্থা যদি চলিতে থাকে-এবং ইহার সম্ভাবনাও প্রচুর রহিয়াছে-তাহা হইলে দেশের প্রায় অধিকাংশ অঞ্চলেই বিবাহের জন্য যতটা লাইসেন্স দেওয়া হইবে, তালাকের জন্যও ঠিক ততটা মামলা আদালতে দায়ের করা হইবে।*

 একদা ডেট্রয়েটের (Detroit) ‘ফ্রি প্রেস’ নামক একটি সংবাদপত্রে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছিল। ইহার কিয়দংশ নিম্নে উদ্ধৃত করা হইলঃ

*. Laws of sex, P. 204

বিবাহের স্বল্পতা, তালাকের আধিক্য এবং বিবাহ ব্যতিরেকে স্থায়ী অথবা সাময়িক যৌন সম্পর্কের ব্যাপকতা ইহাই প্রমাণ করে যে, আমরা পশুত্বের দিকে দ্রুত ছুটিয়া চলিয়াছি। সন্তান উৎপাদনের প্রাকৃতিক কামনা বিলুপ্ত হইতেছে; নবজাত সন্তানের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মিতেছে; সভ্যতা ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের জন্য পারিবারিক ও গার্হস্থ সুশৃঙ্খলা যে অপরিহার্য, এই অনুভূতি মানুষের মন হইতে মুছিয়া যাইতেছে। পক্ষান্তরে সভ্যতা ও শাসন ক্ষমতার ভিতর দিয়া এক নির্মম অবহেলা দানা বাঁধিয়া উঠিতেছে।

তালাক ও বিচ্ছেদের ব্যাপকতা নিরসনের উপায় হিসাবে Companionate Marriage অর্থাৎ পরীক্ষামূলক বিবাহের প্রচলন করা হয়। কিন্তু এই সমাধান প্রকৃত ব্যাধি হইতে নিকৃষ্টতর প্রমাণিত হইয়াছে। পরীক্ষামূলক বিবাহের অর্থ এই যে, পুরুষ ও নারী ‘প্রাচীন ধরনের বিবাহে’ আবদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে কিয়ৎকাল একত্রে বসবাস করিবে। এইরূপ একত্রে বসবাস্কালে যদি তাহাদের মধ্যে মনের মিলন হইয়া যায়, তাহা হইলে উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইবে নতুবা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়া অন্যত্র ভাগ্যান্বেষণ করিতে থাকিবে। পরীক্ষামূলক সময়ে তাহাদিগকে সন্তান উৎপাদন হইতে বিরত থাকিতে হইবে। কারণ সন্তান উৎপাদিত হইলে তখন তাহাদের মধ্যে যথারীতি বিবাহ বন্ধন বাধ্যতামূলক হইয়া পড়িবে। ইহাই রাশিয়াতে Free Love অর্থাৎ ‘স্বাধীন প্রেম’ নামে অভিহিত।

জাতীয় আত্মহত্যা

প্রবৃত্তি পূজা, দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে বিতৃষ্ণা-পারিবারিক জীবন যাপনে বীতরাগ ও দাম্পত্য সম্পর্কের স্থিতিহীনতা নারীর প্রাকৃতিক মাতৃসুলভ আবেগ অনুরাগ প্রায়ই বিনষ্ট করিয়া দিয়াছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে ইহাই নারী জাতির মহানতম আধ্যাত্মিক অনুরাগ এবং ইহারই অস্তিত্বের উপর শুধু তাহযীব-তমদ্দুনই নহে, মানবতার অস্তিত্বও নির্ভরশীল। এই অনুরাগের অভাবেই গর্ভনিরোধ, গর্ভনিপাত ও প্রসূত হত্যার শয়তানী অনুরাগ জন্মলাভ করিয়াছে। আইনগত বাধা থাকা সত্ত্বেও আমেরিকায় প্রতিটি যুবতী নারী গর্ভনিরোধ সম্পর্কিত জ্ঞানের পূর্ণ অধিকারিণী। গর্ভনিরোধের ঔষধাবলী ও যন্ত্রপাতি স্বাধীনভাবে বাজারে বিক্রয় করা হয়। সাধারণ নারী তো দূরের কথা, স্কুল-কলেজের ছাত্রীগণও এই সকল উপাদান সঙ্গে রাখে, যাহাতে প্রণয়ী বন্ধু হঠাৎ ভুলবশত সঙ্গে না আনার কারণে মধুময় ‘সান্ধ্য অভিসার’ ফেলিয়া না যায়।

জর্জ লিন্ডসে বলেন

উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৯৫ জন বালিকা আমার নিকট স্বেচ্ছায় স্বীকার করিয়াছে যে, বালকদের সহিত তাহাদের যৌনক্রিয়ার প্রত্যক্ষ পরীক্ষা হইয়াছে। ইহাদের মধ্যে মাত্র ২৫ জনের গর্ভ সঞ্চার হয়। অন্যদের

*. Revolt of Modern Youth. P.211-214

মধ্যে কয়েকজন ভাগ্যক্রমে রক্ষা পায়। কিন্তু অধিকাংশই গর্ভনিরোধের যথেষ্ট জ্ঞান রাখিত। এই জ্ঞান তাহাদের নিকটে এমন সাধারণ বস্তু হইয়া পড়িয়াছিল যে, লোকে তাহা ধারণাই করিতে পারে না।

কুমারী মেয়েরা ঐসব ঔষধ ও যন্ত্রপাতি এইজন্য ব্যবহার করে যে, তাহাদের স্বাধীনতার পথে যেন কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয়। বিবাহিতা নারীদের তাহা ব্যবহার করার উদ্দেশ্য এই যে, সন্তান হইলে তাহার প্রতিপালন ও শিক্ষা-দীক্ষার দ্বায়িত্বই শুধু গ্রহণ করিতে হয় না, বরং ইহার কারণে স্বামীর তালাক দেয়ার পথও রুদ্ধ হইয়া যায়। এই সকল বিপদ এড়াইবার জন্যই বিবাহিতা নারী গর্ভনিরোধের ঔষধাবলী ব্যবহার করে। সকল নারীই এইজন্য সন্তানের মা হইতে ঘৃণাবোধ করে যে, জীবনকে পরিপূর্ণরূপে উপভোগ করিতে হইলে এই সন্তানরূপ বিপদ হইতে মুক্ত হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। উপরন্তু সন্তান প্রসবের ফলে তাহাদের সৌন্দর্যেও ভাটা পড়িয়া যায়।*

কারণ যাহা হউক না কেন, যাহাদের এইরূপ নারী-পুরুষের সম্পর্ক গড়িয়া উঠে, তাহাদের মধ্যে শতকরা ৯৫ জনের স্বাভাবিক পরিণাম ফলের পথ গর্ভপ্রতিষেধক দ্বারা রুদ্ধ করা হয়। অবশিষ্ট শতকরা ৫ জনের যদি দুর্ভাগ্যক্রমে গর্ভসঞ্চার হইয়া পড়ে তাহাদের জন্য ভ্রুণহত্যা ও প্রসূত হত্যার পথ উন্মুক্ত থাকিয়া যায়। জর্জ লিন্ডসে বলেন যে, আমেরিকায় প্রতি বৎসর পনের লক্ষ গর্ভনিপাত করা হয় এবং হাজার হাজার নবজাত সন্তানকে হত্যা করা হয়।               -উক্ত গ্রন্থ, পৃ.২২০

ইংল্যান্ডের অবস্থা

আমরা এইরূপ বিষয়কে আর বেশী দীর্ঘতর করিতে চাই না। কিন্তু জর্জ র‍্যালী স্কটের ‘বেশ্যাবৃত্তির ইতিহাস’ [A History of Prostitution] নামক গ্রন্থের কিয়দংশ উদ্ধৃত না করিয়া এই প্রসঙ্গ শেষ করা সমীচীন মনে করিতেছি না। গ্রন্থকার একজন ইংরেজ এবং তিনি স্বীয় মাতৃভূমির চিত্র নিম্নরূপ ভাষায় পরিস্ফুট করিয়াছেনঃ

যে সকল নারী দেহ ভাড়া দেওয়াকেই তাহাদের জীবিকার্জনের একমাত্র পন্থা হিসাবে গ্রহণ করিয়াছে, তাহাদের বাদ দিলেও আর এক শ্রেণীর নারী আছে- এবং ইহাদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়িয়া চলিয়াছে- ইহারা জীবনের আবশ্যক দ্রব্যাদি লাভ করিবার জন্য অন্যান্য পন্থাও অবলম্বন করিয়া থাকে এবং যাহাতে অতিরিক্ত দু’পয়সা অর্জন করিতা পারে, তাহার জন্য আনুষঙ্গিকরূপে ব্যভিচারেও লিপ্ত হয়। ব্যবসায়ী বেশ্যা ও ইহাদের মধ্যে কোনই পার্থক্য নাই। পার্থক্য শুধু এই যে, ইহাদিগকে বেশ্যা নামে অভিহিত করা হয় না। আমরা অবশ্য তাহাদিগকে Amateur Prostitutes অর্থাৎ ‘পেশাহীন বেশ্যা’ বলিয়া অভিহিত করিতে পারি।

এই সকল কামাতুর অথবা পেশাহীন বেশ্যার সংখ্যা আজকাল যে পরিমাণে দেখা যায়, তাহা অন্য সময়ে কখনও পরিদৃষ্ট হয় নাই। সমাজের উঁচুনিচু সকল স্তরেই এই শ্রেণীর নারী দেখা যায়। যদি এই সমস্ত সম্ভ্রান্ত মহিলাকে কখনও আকার ইঙ্গিতে বেশ্যা বলা হয়, তাহা হইলে তাহারা অগ্নিশর্মা হইয়া পড়ে।কিন্তু

*.Macfeddin manhood and Marriage hs.C

তাহাদের অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ প্রকাশে প্রকৃত ঘটনার কোন পরিবর্তন হয় না। প্রকৃত ঘটনা এই যে, তাহাদের ও পিকাডিলীর কুখ্যাতা ও নির্লজ্জ বেশ্যাদের মধ্যে কণামাত্র পার্থক্য নাই।

…….অসৎ চালচলন এবং এতদ্বিষয়ে নির্ভীকতা, এমন কি বাজারী চালচলন পর্যন্ত এখানকার যুবতী মেয়েদের এক ফ্যাশান হইয়া পড়িয়াছে। সিগারেট পান, তীব্র মদ্যপান, ওষ্ঠদ্বয় লাল রঙে রঞ্জিতকরণ, যৌন বিজ্ঞান ও গর্ভনিরোধ সম্পর্কিত জ্ঞানের অভিব্যাক্তি, অশ্লীল সাহিত্য লইয়া আলাপ-আলোচনা প্রভৃতি যাবতীয় বিষয়ই ইহাদের এক ফ্যাশন হইয়া পড়িয়াছে। …… বিবাহের পূর্বে নিঃসংকোচে অপরের সহিত যৌনসম্পর্ক স্থাপন করিয়াছে, এইরূপ বালিকা ও নারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়িয়াই চলিয়াছে। যে সকল সত্যিকার লাজনম্র কুমারী বালিকাকে গীর্জায় উৎসর্গীকরণ বেদীর সম্মুখে শপথ গ্রহণ করিতে দেখা যাইত, তাহারা আজকাল একেবারেই বিরল হইয়া পড়িয়াছে।

যে সকল কারণে পরিস্থিতি এতদূর গড়াইয়াছে, তাহার বর্ণনা প্রসঙ্গে গ্রন্থকার বলিতেছেনঃ

সাজসজ্জার তীব্র আকাঙ্ক্ষা বালিকাদের মধ্যে এক দুর্দমনীয় লালসার সঞ্চার করিয়াছিল এবং ইহারই বশবর্তী হইয়া তাহারা নব নব ফ্যাশানের মূল্যবান বেশভূষা ও সৌন্দর্য বর্ধনের নানাবিধ সামগ্রীর প্রতি মোহাবিষ্ট হইয়া পড়িয়াছিল। ইহা সেই নীতিবিরুদ্ধ বেশ্যাবৃত্তিরই অন্যতম প্রধান কারণ। মূল্যবান নয়নাভিরাম বেশভূষায় সজ্জিত শত সহস্র তরুণী ও যুবতী নারীকে নিত্যই পথে ঘাটে দেখিতে পাওয়া যায়। তাহাদিগকে দেখিয়া প্রত্যেক বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিই এই কথা বলিবে যে, সদুপায়ে অর্জিত অর্থ তাহাদের এহেন বেশভূষার ব্যয়ভার বহন করিতে পারে না। অতএব একথা বলিলে অত্যুক্তি হইবে না যে, একমাত্র পুরুষই তাহাদের বেশভূষা ক্রয় করিয়া দেয়।

এইরূপ উক্তি আজ হইতে পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে যেমন নির্ভুল ছিল, আজও তেমনই নির্ভুল; তবে পার্থক্য শুধু এই যে, পূর্বে যে সকল পুরুষ তাহাদের বস্ত্রাদি ক্রয় করিয়া দিত, তাহারা ছিল হয়ত তাহাদের স্বামী কিংবা পিতা কিংবা ভ্রাতা। কিন্তু এখন তাহাদের পরিবর্তে অন্য লোক তাহা ক্রয় করিয়া দেয়।

এইরূপ অবস্থার জন্য নারী স্বাধীনতাও বহুলাংশে দায়ী। বিগত কয়েক বৎসর হইতে মেয়েদের প্রতি পিতামাতার তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণ এত কমিয়া গিয়াছে যে, তাহার ফলে মেয়েরা আজাকাল যতখানি স্বাধীন ও বেপরোয়া হইয়া পড়িয়াছে, ত্রিশ চল্লিশ বৎসর পূর্বে বালকেরাও এতখানি হইতে পারে নাই।

সমাজের মধ্যে যৌন স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপক প্রসারতার একটি প্রধান কারণ এই যে, মেয়েরা ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, অফিসাদি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে চাকুরি গ্রহণ করিতেছে। এই সকল স্থলে রাত্রদিন পুরুষের সঙ্গে তাহাদের মেলামেশার সুযোগ হইতেছে। ইহা নারীপুরুষের নৈতিক মানকে অতি নিম্নস্তরে নামাইয়া দিয়াছে। পুরুষ অগ্রগামী হইয়া কিছু করিতে চাহিলে তাহা রোধ করিবার ক্ষমতা নারীর থাকে না। ফলে উভয়ের মধ্যে যৌন সম্পর্ক গড়িয়া উঠে এবং তাহা নৈতিকতার সকল বন্ধন অতিক্রম করে। এখন যুবতী নারীর মনে বিবাহ এবং পবিত্র জীবন যাপনের ধারণা স্থানই পায় না। যে মদানন্দময় সময়ের সন্ধান এক সময়ে শুধু লম্পটশ্রেণীর লোকই করিত, আজকাল প্রত্যেক তরুণী তাহারই কামনা করে। কুমারীত্ব ও সতীত্বকে আজকাল প্রাচীন যুগের প্রথা মনে করা হয় এবং আধুনিক যুগের মেয়েরা ইহাকে এক বিপদ মনে করিয়া থাকে। ইহাদের মতে জীবনের আনন্দই এই যে, যৌবনকালে যৌনসম্ভোগের রঙিন সুরা প্রাণ ভরিয়া পান করিতে হইবে। ইহার জন্যই ইহারা নৃত্যশালা, নৈশক্লাব, হোটেল, বেশ্যালয় প্রভৃতিকে কেন্দ্র করিয়া ঘুরিয়া বেড়ায়। ইহারই আশায় সম্পূর্ণ অপরিচিত পুরুষের সঙ্গে মোটরযোগে আনন্দ অভিসারে বাহির হইবার জন্য প্রস্তুত হয়। মোটকথা, ইহারা স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে নিজেদেরকে এমন এক পরিবেশের মধ্যে নিক্ষেপ করে  এবং করিয়া আসিতেছে, যাহা মানব মনে স্বভাবতই কামাগ্নি প্রজ্জলিত করিয়া দেয়। অতপর ইহার যে অবশ্যম্ভাবী প্রাকৃতিক পরিণাম ফল হয়, তাহার জন্য ইহারা মোটেই শঙ্কিত হয় না, বরং উহাকে অভিনন্দন জানায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url