Ad

তাগূতের অর্থ, তাগূতের পরিচয়, কালেমায়ে তাইয়েবা তাগূত বিরোধী,

 

তাগূতের অর্থ

 

তাগূত শব্দের অর্থ সীমালঙ্ঘনকারী। আল্লাহ তায়ালা আয়াতুল কুরসীতে তার সার্বভৌম গুণাবলি উল্লেখ করে তারপর বলেনঃ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

 

অতএব যে কেউ তাগূতকে অস্বীকার করে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে, সে এমন মযবুত রশি ধরেছে যা কখনও ছিড়বে না। আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন। (সূরা বাকারাঃ ২৫৬)

 

আল্লহ তায়ালা গুণাবলি উল্লেখ করে এ আয়াতে যা বলা হয়েছে তা খুবই তাৎপর্যপূণ। বলা হয়েছে কেউ যদি উপর্যুক্ত গুণাবলিসম্পন্ন আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে চায় তাহলে প্রথমে তাকে তাগূতের কাফির হতে হবে। তাগূতের কাফির না হয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে তাগূতের চাপে ও দাপটে সে ঈমানের দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ হবে। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে আল্লাহর সাথে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তাগূতের চাপে ঐ সম্পর্ক বহাল থাকে না। তাগূতকে মানতে অস্বীকার করলে অর্থাৎ তাগূতের চাপকে অগ্রাহ্য করার হিম্মত করলে আল্লাহতর সাথে ঈমানের সম্পর্ক এমন মযবূত হয় যে তা আর ছিন্ন হয় না। আয়াতে ঈমানের এ সম্পর্কটিকে রশি বা রজ্জুর সাথে তুলনা করা হয়েছে।

 

এ কারণেই মযবুত ঈমানের শর্ত হিসেবে তাগূতকে অস্বীকার করতে হবে বা তাগূতের কাফির হতে হবে। তাই তাগূত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন বা তাগূতকে ঠিকমত চিনে নেওয়া দরকার।

 

তাগূত সম্পকর্কে তাফহীমুল কুরআনের টীকা পড়েও মনে তৃপ্তি বোধ না করায় সরাসরি মাওলানা মওদূদীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি যা বললেন তা নিম্নরুপ ঃ

 

আল্লাহতাআলা তার হুকুম মেনে চলার জন্য যেমন বাধ্য করেননি অমান্য করতেও বাধ্য করেননি। মানা ও না মানার ইখতিয়ার মানুষকে দিয়েছেন। আল্লাহর নাফরমানীর দুটো সীমা রয়েছে। প্রাথমিক সীমা হলো ফিসক আর চূড়ান্ত ও শেষ সীমা হচ্ছে কুফর। যে আল্লাহর হুকুম স্বীকার করে বটে কিন্তু পালন করে না সে ফাসিক। আর যে হুকুম কে স্বীকার করে না সে কাফির। যে নাফারমানীর এ দুটো সীমা লঙ্ঘন করে সেই তাগূত।

 

ব্যক্তিগত ভাবে কেউ ফাসিক বা কেউ কাফির হতে পারে। এটা যার যার ইখতিয়ার বা স্বাধীন ইচ্ছা। আল্লাহর নাফারমানীর এ দুটো সীমা রয়েছে। যে এ সীমাও লঙ্ঘন করে সে হলো তাগূত। এ দুটো সীমা লঙ্ঘন করার মানে কী? কেমন করে এ সীমা লঙ্ঘন করা হয়? এটা বুঝলেই তাগূতকে চেনা সহজ হবে।

 

যে নিজে ফাসিক এবং অন্য মানুষকেও ফাসিক বানানোর চেষ্টা করে সেই তাগূত। সে নাফরমানীর প্রাথমিক সীমা লঙ্ঘন করলো। যে নিজে কাফির এবং অন্যকেও কাফির বানানোর চেষ্টা করে সেই তাগূত। যে আল্লাহর নাফরমানীর শেষ সীমাও লঙ্ঘন করলো।

 

এখানে একটি কথা বিশেষভাবে বোঝার আছে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষকে নিজস্ব সত্তা দিয়ে আলাদাভোবে পয়দা করেন। যে দুনিয়ায় আসার সময় যেমন একা আসে, যাওয়ার সময়ও একাই যায়। আখিরাতে তাকে তার কৃতকর্মের ফল আলাদাভাবেই দেওয়া হবে।

 

তার শাস্তি সে একাই ভোগ করবে। পুরস্কারও যে একাই পাবে। তার কর্মের জন্য সেই দায়ী হবে। তাই তাকে আল্লাহর হুকুম অমান্য করার ইখতিয়ার এককভাবেই দেওয়া হয়েছে। অন্য মানুষকে আল্লাহর নাফরমান এবং বানানোর কোন ইখতিয়ার কাউকে দেওয়া হয়নি। যারা নিজে নাফরমানীর সীমা লঙ্ঘন করেÑ এরাই তাগূত।

 

তাগূতের পরিচয়

 

তাগূতকে মানতে অস্বীকার করতে হলে কে কে তাগূত তা জানতের হবে। কুরআনে তালাশ করলে ৫ প্রকার তাগূত পাওয়া যায়।

 

১.নাফস ও হাওয়া নাফস মানে প্রবৃত্তি, আর হাওয়া মানে কুপ্রবৃত্তি। দেহের যাবতীয় দাবিকে একসাথে নাফস বলা হয়। যে দাবি মন্দ তাকেই হওয়া বলে।

 

দেহের ভালো ও মন্দের কোনো ধারণা নেই। এ ধারণা আছে বিবেকের।রূহের সিদ্ধান্তই বিবেক। নাফস বা দেহের দাবি মন্দ বলেই ধরে নিতে হবে। বিবেক যাচাই করে বলে দেয় কোন দাবিটা ভালো বা মন্দ। সূরা ইউসূফের ৫৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ   নিশ্চয়ই নাফস মন্দেরই হুকুম দেয়। আল্লাহর নাফরমানীয় জন্য তাগিদ দেয় বলেই নাফস তাগূত।

 

যদি কেউ সত্যিই আল্লাহর অনুগত বান্দাহ হতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই নাফসের কাফির হতে হবে। কেউ যদি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে চায় তাহলে প্রথমেই তাকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত দিতে হবে, আমি নাফসের কথা মেনে চলব না-না-না। অর্থাৎ আমি বিবেকের বিরুদ্ধে চলব না-না-না।

 

এ সিদ্ধান্ত না নিলে যে আল্লাহর প্রতি আনা সত্তেও নাফসের গোলামউ থেকে যাবে। সে আল্লাহকে ইলাহ বা হুকুমকর্তা স্বীকার করা সত্তেও নাফস বা হাওয়াকে ইলাহ হিসেবেই মেনে চলবে।

 

সূরা ফুরকানের ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,   أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ

 

সুরা জাছিয়ার ২৩নং আয়াতে আছে,  أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ   অর্থ: তুমি কি তাকে দেখেছ, যে তার কুপ্রবৃত্তিকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছে? কুরআনের অনুবাদে অনেকেই তাগূত অর্থ লিখেছেন শয়তান। শয়তান আল্লাহর নাফরমানী করার জন্য উসকে দেয় বলে শয়তান অবশ্যই তাগূত। কিন্তু তাগূত অর্থ শয়তান নয়। যারা তাগূতের অর্থ শয়তান লিখেছেন, তারা তাগূতের সঠিক পরিচয় জানেন না। আমি শয়তানকে পৃথকভাবে তাগূত গণ্য করি না। কারণ শয়তান মানুষের নাফসকে বিভ্রান্ত করেই নাফরমানীর জন্য ওয়সওয়াসা দেয়। তাই প্রথম নম্বর তাগূতের মধ্যেই শয়তান অন্তর্ভূক্ত। সে হিসেবে নাফস ও শয়তানকে একই সাথে তালিাকর ১নম্বরে রাখা যায়।

 

২.শরীআতবিরোধী প্রচলিত কুপ্রথা ও সামাজিক কুসংস্কার ও তাগূত। (Customs and traditions)

 

সূরা বাকারায় আল্লাহ বলেন:  وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا ۗ

 

যখন তাদেরকে বলা হলো যে, আল্লাহ যা (ওহীযোগে) নাযিল করেছেন তা মেনে চল, তখন তারা বলল, আমাদের বাপ দাদাকে যা মেনে চলতে দেখেছি,আমরা তাই মেনে চলব।(সূরা বাকারা : ১৭০)

 

সমাজে বহু কুপ্রথা প্রচলিত আছে যা শরীআত বিরোধী।ধর্মের নামেও বহু শরীআতবিরোধী প্রথা চালু আছে। বিয়ে শাদিতে তো কুপ্রথার ব্যাপক প্রচলন আছে। কুপ্রথাগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। এসবকে অমান্য করতে গেলে বিরাট বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কুপ্রথাগুলো আইনের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। আইন চালু করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার (Law Enforcement Agency) প্রয়োজন হয়। কুপ্রথা নিজেন শক্তি বলেই চালু থাকে। আইন করেও তা দুর করা সহজ নয়। এ কারণেই সামাজিক কুসংস্কারগুলোও তাগূত। এসবকে মানতে অস্বীকার না করলে ঈমারের দাবি পূরণ করা যায় না। এগুলো আল্লাহর হুকুমের বিরোধী। এসব কে মেনে চললে আল্লাহকে অমান্য করা হয়।

 

৪. শাসন শক্তিও তাগূত। শাসন শক্তি বললে শুধু গভর্নমেন্টই বোঝায় না। স্বামী স্ত্রী সংসারে স্বামীও শাসন শক্তি। পরিবারে পিতা শাসক শক্তি। কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শাসন শক্তি। কিছু লোকের উপর কতৃত্ব করার সুযোগ যার আছে সেই শাসক শক্তি। একটি দেশে সরকার হলো সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক শক্তি। কুরআনে ফিরাউন ও নমরুদকে শাসক শক্তি হিসেবেই তগিূত বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মূসা (আ) কে ফিরাউনের নিকট যাওয়ার আদেশ যে ভাষায় দিলেন সেখানেও ফিরাউনকে সীমালঙ্ঘনকারী বলেই উল্লেখ করেছেন।

 

اذْهَبْ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ

 

হে মূসা ফিরাউনের নিকট যাও। নিশ্চয়ই সে সীমালঙ্ঘন করেছে। সূরা ত্বাহা ঃ২৪

 

শাসক শক্তি প্রয়োগ করে অধীনস্থদের উপর আল্লাহর আইনের বিরোধী নিয়ম কানুন চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তারা আল্লাহর নাফারমানী করায় বাধ্য করতে পারে।তাই এসব তাগূত। আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবি হলো আল্লাহর নফারমানী করতে অস্বীকার করা। তা না করলে ঈমানে দুর্বলতাই প্রকাশ পায়।

 

৫. রিযক বন্ধ করার ভয় দেখানোর শক্তি ও তাগূত। এ তাগূতটি শাসন শক্তিরই অন্তর্ভুত।চাকরি থেকে সরিয়ে দিয়ে রিযক বন্ধ করার ক্ষমতা যাদের আছে তারা শাসক শক্তি বটে। তবু এটা পৃথকভাবে গণ্য করার যোগ্য তাগূত। শাসন শক্তি প্রয়োগ করে অন্যায়ভাবে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দিতে পারে ও বিভিন্নভাবে ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু চাকরি থেকে বরখাস্ত করার শাস্তিটি চরম যুলম বলেই রিযক বন্ধ করার ভয় দেখানোর শক্তিকে শাসন শক্তি থেকে আলাদাভাবে গণ্য করা হলো। এ শক্তি প্রয়োগ করে  অধীনস্থদেরকে আল্লাহর নফারমানী করতে বাধ্য করা যায় বলেই এটা ও তাগূত।

 

৬. অন্ধভাবে মেনে চলার দাবিদার শক্তিও তাগূত। সমাজে এমন কতক লোক আছে যারা তাদেরকে অন্ধভাবে মেনে চলার জন্য নৈতিক প্রভাব প্রয়োগ করতে সক্ষম। তাদের দাবি হলো বিনা যুক্তিতে তাদের কথা মেনে চলতে হবে। বিনা প্রশ্নে তাদের আনুগত্য করতে হবে।বিনা বাক্য ব্যয়ে তাদের হুকুম পালনের অধিকার তারা দাবি করে।

 

অথচ আল্লাহ ও রাসূল (সা) ছাড়া এ দাবি আর কারো অধিকার নেই। যেহেতু আল্লাহ নির্ভুল এবং রাসূল (স) আল্লাহর ওহী দ্বারা পরিচালিত বলে তিনিও নির্ভুল সেহেতু এ দু সত্তাকে বিনা দ্বিধায় শর্তহীন ভাবে মেনে চলতে হবে।

 

এছাড়া আর কারো এ জাতীয় আনুগত্যের দাবিদার হওয়ার অধিকার নেই। তাই যারা এ দাবি করে তারাও তাগূত। সুরা তওবার ৩১নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,   اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ

 

তারা তাদের ওলামা ও পীরদেরকে আল্লাহর বদলে তাদের রব হিসেবে গ্রহন করেছে।

 

হদীসে এর অর্থ বলা হয়েছে যে তাদেরকে অন্ধভাবে মেনে নিয়েছে। তারা হালাল ও হারামের ব্যাপারে যে ফায়সালাই দেয় তা অন্ধভাবে স্বীকার করে নেয়। অন্ধভাবে মেনে নেওয়ার দাবিদার শক্তি ধর্মীয় ক্ষেত্রে যেমন আছে, রাজনৈতিক ময়দানেও রয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত, নেতা বা নেত্রীর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক মনে হলেও অন্ধভাবে তা মানতে হয়, না মানলে দল থেকে তাড়িয়ে দিতে পারে, এ ভয়ে মেনে নিতে বাধ্য হয়। তাই এ জাতীয় শক্তিও তাগূত। তাদের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের কারণে দীনের পথে বাধার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন একপীর সাহেব মুরীদদেরকে বললেন যে, তোমরা মওলানা মওদূদীর বই পড়বে না। পীরের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের কারণে যারা বই পড়লো না, তারা ইকামাতে দীনের পথ চিনতে ব্যর্থ হলো। আমার কয়েকজন তাবলীগী ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে মাওলানা মওদূদূীর বই পড়তে দিয়েছিলাম। এক সপ্তাহ পর আরও বই নিয়ে গেলাম। আগের দেওয়া বই ফেরত চাইলাম। বই ফেরত দিলেন এবং আর কোনো বই নিতেই রাজি হলেন না।জিজ্ঞেস করলাম, বই কি পড়েছিলেন? জওয়াবে বললেন, এসব বই পড়তে মুরুব্বীরা মানা করেছেন। আমি বললাম, মুরুব্বীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন কেন? এর জওয়াবে যা বললেন তাতে বুঝলাম যে, এসব বই পড়েই আমি গুমরাহ হয়েছি বলে তাদেরকে পড়তে নিষেধ করেছেন। আমি বললাম, যদি কোনো বই পড়লেই ঈমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে এমন দুর্বল ঈমান কী করে রক্ষা করবেন?

 

আমার খুব আফসোস হলো। যাদেরকে বই পড়তে দিয়েছিলাম তারা তাবলীগ জামায়াতেআমার সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের একজন আমার হতেই রিক্রুট হয়েছেন। তারা তাগূতের খপ্পরে পড়ে ইকামাতে দীনের পথ চেনার সুযোগ না পাওয়ায় তাদের জন্য বেদনা বোধ করেছি। এ দীর্ঘ আলোচনায় পাঁচ রকমের তাগূত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল। মযবুত ঈমানের জন্য তাগূতকে অস্বীকার করা এ কারণেই অত্যন্ত জরুরি। সুরা নাহলের ৩৬ নং এ আয়াতটিতে আল্লাহ বলেন, আমি প্রত্যেক উম্মতের নিকট (এ নির্দেশ দিয়ে) রাসূল পাঠিয়েছি যে, তোমরা (একমাত্র) আল্লাহর দাসত্ব কর এবং তাগূত থেকে দুরে থাক।

 

নমরূদ ও ফিরাউন খোদায়ী দাবি করেছিল বলে বল হয়। কিন্তু তারা আসমান যমীন সৃষ্টি করার দাবি করেনি। তারা মানুষকে তাদের হুকুমের দাস বানিয়ে রেখেছিল। মানুষকে আল্লাহর দাস হতে বাধা দিয়ে নিজেদের দাস হতে বাধ্য করেছিল। এ অর্থেই তাদের সম্পর্কে বলা হয় যে, তারা খোদায়ী দাবি করেছিল। তারা আধুনিক যুগের পরিভাষায় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ছিল মাত্র। তাগূতের কাজই হলো, আল্লাহর দাসত্ব থেকে ফিরিয়ে রেখে তার দাসত্ব করতে বাধ্য করা। তাই যারা আল্লাহর দাসত্ব করতে আগ্রহী তাদেরকে সচেতন ভাবে সবরকম তাগূতী শক্তিকে পরিহার করে তাদের থেকে বেচে থাকতে হবে।

 

কালেমায়ে তাইয়েবা তাগূত বিরোধী

 

কালোমায়ে তাইয়েবা لَا اِلَهَ اِلاَّ اللهُ    এর মূল কথা হলো, আল্লাহই একমাত্র ইলাহ, আর কোন ইলাহ নেই।এ বক্তব্য প্রকাশ করার জন্য واحد اِلَهَ الله বললেই তো চলতো। তা না করে لَا   দিয়ে কেন শুরু করা হলো? لَا মানে নেই। নেই দিয়ে কেন শুরু করা হলো? মানব সমাজে বহু হুকুমকর্তা রয়েছে। মানবমনের উপর এরা রাজত্ব করে। মানব এদের হুকুম মেনে চলে; হয় বাধ্য হয়ে, না হয় লোভে পড়ে। এসব হুকুমকর্তা (ইলাহ) হলো আসলে তাগূত। তাই যারাই কালেমায় তাইয়েবা কবুল করতে চায়। তাদেরকে মহান আল্লাহর উপর ঈমান আনার আগেই তাগূতকে অস্বীকার করতে হবে। এতে প্রমাণিত হলো যে, সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতে যে ফরমে فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ    বলা হয়েছে সে ফরমেই প্রথমে অস্বীকার দ্বারা শুরু করা হয়েছে। ঐ আয়াতে আল্লাহর প্রতি ঈমার আনার আগেই তাগূতের কুফরী করতে বলা হয়েছে।আল্লাহ দ্বারা তাগূতকে অস্বীকার করার ঘোষণা দেওয়ার পরে   اِلاَّ اللهُ   বলে আল্লাহর প্রতি ঈমানের ঘোষণা দেওয়া হয়। এটা বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ। যারা তাগূতের পরিচয় জানে, তারা

 

লা ইলাহা’ দ্বারা কাদেরকে অস্বীকার করা হচ্ছে তা বুঝতেই পারে না। তারা না বুঝে তোতাপাখির মত কালেমা উচ্চারণ করে থাকে এবং তাগূদের দাসত্ব করতে থাকে।

 

একটি সহজ উদাহরণ

 

জমিতে ধানের বজি বপন করতে হলে প্রথমেই জমিকে আগাছামুক্ত করতে হবে।আগাছা দূর না করে ধান ফেললে ফসল তো দূরের কথ,বীজ ধানও ফিরে পাওয়া যাবে না।কৃষি জমি যেমন খালি থাকে না মানুষের মনের জমিও খালি থাকে না। ঐ রকম তাগূত মানবমন দখল করে থাকে। মনে ঈমানের বীজ ফেলতে হলে মন থেকে সব তাগূত কে তাড়াতে হবে। তা না হলে মনের যমীন ঈমানের বীজ বপনের জায়গাই হবে না।

 

তাগূতের সারকথা

 

আল্লাহ তআলা মানুষ ও জিনকে আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য পয়দা করেছেন। আল্লাহ সূরা আয যারিয়াতের ৫৬নং আয়াতে ঘোষনা করেন,   وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

 

‘আমি জিন ও ইনসানকে আমার দাসত্ব করা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি। ‘

 

এ কথার একটি মর্ম হলো,  আল্লাহ শুধু তারই দাসত্ব করার জন্য তাদের কে সৃষ্টি করেছেন আর কারো দাসত্ব করার জন্য নয়। তাই যারা আল্লাহর দাসত্বের বদলে কোনো সৃষ্টি দাসত্ব করে তারা নিজেদেরকেই হেয় করে এবং মানুষ হিসেবে মার্যাদা হারায় তারা পশুর পর্যায়ে গণ্য হয়।

 

ঐ কথাটির অপর মর্ম হলো,  যারা আল্লাহর দাসত্ব করার সীমাবদ্ধ না থেকে প্রভুত্ব করার অপচেষ্টা চালায় তারাই তাগূতে পরিণত হয়। তারা আল্লাহর বান্দাদেরকে তাদের বান্দাহ বানায়। শাসন শক্তি রিযক বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখানোর শক্তি ও অন্ধ আনুগত্যের দাবিদার শক্তি হিসেবে তারা আল্লাহর বন্দাহদের উপর প্রভুত্ব কায়েম করে চরম সীমালঙ্ঘনকারীতে পরিণত হয়।

 

এসব শক্তি আল্লাহর দাসত্ব করা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে এবং তাদের দাসত্ব করতে বাধ্য করে। তাই আল্লাহর দাসত্ব করতে হলে এসব শক্তি কে মানতে অস্বীকার করার সাহস থাকতে হবে। এ সাহস যাদের নেই তারা আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবিদার হলেও পদে পদে তাগূতের নিকট পরাজিত হতে থাকবে।

 

সূরা আনকবূতের প্রথম আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন - أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ

 

‘মানুষ কি মনে করে যে, আল্লাহর প্রতি ঈমন এনেছি বললেই তাদেরকে বিনা পরীক্ষায় ছেড়ে দেওয়া হবে?

 

ঈমানের পরীক্ষা আসে তাগূতের মাধ্যমে। তাগূতকে অমান্য করার সিদ্ধন্ত না থাকলে পরীক্ষায় অবশ্যই ফেল করবে।

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url