Ad

যেভাবে কুরআন অধ্যয়নের করতে হয়।

 

কুরআন অধ্যয়নের পদ্ধতি

 

কুরআন একটি অসাধারন গ্রন্থ। দুনিয়ার অসংখ্য মানুষ অসংখ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কুরআনের দিকে এগিয়ে আসে। এদের সবার প্রয়োজন ও উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টি রেখে কোন পরামর্শ দেয়া মানুষের পক্ষে সম্ভবপর নয়। এই বিপুল সংখ্যক অনুসন্ধানীদের মধ্যে যারা একে বুঝতে চান এবং এ কিতাবটি মানুষের জীবন সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ভুমিকা পালন করে এবং তাঁকে কিভাবে পথ দেখায়- একথা জানতে চান- আমি কেবল তাঁদের ব্যাপারেই আগ্রহী। এই ধরনের লোকদের কুরআন অধ্যয়নের পদ্ধতি সম্পর্কে আমি এখানে কিছু পরামর্শ দেবো। আর এই সংগে সাধারন লোকেরা এ ব্যাপারে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় তারও সমাধান করার চেষ্টা করবো। কোন ব্যক্তি কুরআনের উপর ঈমান রাখুন আর নাই রাখুন তিনি যদি এই কিতাবকে বুঝতে চান তাহলে সর্বপ্রথম তাঁকে তাঁর নিজের মন- মস্তিষ্ককে পূর্ব প্রতিষ্ঠিত চিন্তাধারা ও মতবাদ এবং অনুকূল – প্রতিকুল উদ্দেশ্য ও স্বার্থ চিন্তা থেকে যথাসম্ভব মুক্ত করতে হবে। এ কিতাবটি বুঝার ও হৃদয়ঙ্গম করার নির্ভেজাল ও আন্তরিক উদ্দেশ্য নিয়ে এর অধ্যয়ন শুরু করতে হবে। যারা মনের মধ্যে বিশেষ ধরনের চিন্তাধারা পূর্বে রেখে এ কিতাবটি পড়েন তারা এর বিভিন্ন ছত্রের মাঝখানে নিজেদের চিন্তাধারাই পড়ে যেতে থাকেন। আসল কুরআনের সামান্য বাতাসটুকুও তাঁদের গায়ে লাগেনা। দুনিয়ার যেকোন বই পড়ার ব্যাপারেও এ ধরনের অধ্যয়ন রীতি ঠিক নয়। আর বিশেষ করে কুরআন তো এই ধরনের পাঠকদের জন্যে তাঁর অন্তর্নিহিত সত্য ও গভীর তাৎপর্যময় অর্থের দুয়ার কখনোই উন্মুক্ত করে না।

 

তারপর যে ব্যক্তি কুরআন সম্পর্কে ভাসাভাসা জ্ঞান লাভ করতে চায় তাঁর জন্য সম্ভবত একবার পড়ে নেয়াই যথেষ্ট। কিন্তু যে এর অর্থের গভীরে নামতে চায় তাঁর জন্যে তো দুইবার পড়ে নেয়াও যথেষ্ট হতে পারে না। অবশ্যই তাঁকে বার বার পড়তে হবে। প্রতি বার একটি নতুন ভংগিমায় পড়তে হবে। একজন ছাত্রের মতো পেন্সিল ও নোট বই সাথে নিয়ে বসতে হবে। জায়গা মতো প্রয়োজনীয় বিষয় নোট করতে হবে। এভাবে যারা কুরআন পড়তে প্রস্তুত হবে, কুরআন যে চিন্তা ও কর্মধারা উপস্থাপন করতে চায় তাঁর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনটা যেন তাঁদের সামনে ভেসে উঠে- কেবলমাত্র এই উদ্দেশ্যেই তাঁদের অন্ততপক্ষে দুইবার এই কিতাবটি পড়তে হবে। এই প্রাথমিক অধ্যয়নের সময় তাঁদের কুরআনের সমগ্র বিষয়বস্তুর ওপর ব্যাপক  ভিত্তিক জ্ঞান লাভ করার চেষ্টা করতে হবে। তাঁদের দেখতে হবে, এই কিতাবটি কোন কোন মৌলিক চিন্তা পেশ করে এবং সে চিন্তাধারার উপর কিভাবে জীবন ব্যবস্থার অট্টালিকার ভিত গড়ে তোলে? এ সময়কালে কোন জায়গায় তাঁর মনে যদি কোন প্রশ্ন জাগে বা কোন খটকা লাগে, তাহলে তখনি সেখানেই সেসম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং সেটি নোট করে নিতে হবে এবং ধৈর্যসহকারে সামনের দিকে অধ্যয়ন জারী রাখতে হবে। সামনের দিকে কোথাও না কোথাও তিনি এর জবাব পেয়ে যাবেন, এরি সম্ভাবনা বেশী। জবাব পেয়ে গেলে নিজের প্রশ্নের পাশাপাশি সেটি নোট করে নেবেন। কিন্তু প্রথম অধ্যয়নের পর নিজের কোন প্রশ্নের জবাব না পেলে ধৈর্য সহকারে দ্বিতীয় বার অধ্যয়ন করতে হবে। আমি নিজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, দ্বিতীয় বার গভীর মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করার পর কালেভদ্রে কোন প্রশ্নের জবাব অনুদঘাটিত থেকে গেছে।

 

এভাবে কুরআন সম্পর্কে একটি ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গী লাভ করার পর এর বিস্তারিত অধ্যয়ন শুরু করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পাঠককে অবশ্যি কুরআনের শিক্ষার এক একটি দিক পূর্ণরূপে অনুধাবন করার পর নোট করে নিতে হবে। যেমন মানবতার কোন ধরনের আদর্শকে কুরআন পসন্দনীয় গণ্য করেছে অথবা মানবতার কোন ধরনের আদর্শ তাঁর কাছে ঘৃণার্হ এবং প্রত্যাখ্যাত এ কথা তাঁকে বুঝার চেষ্টা করতে হবে। এ বিষয়টিকে ভালোভাবে নিজের মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্যে তাঁকে নিজের নোট বুকের মধ্যে একদিকেলিখতে হবে ‘পসন্দনীয় মানুষ’ আবার আওন্নদিকে লিখতে হবে ‘অপসন্দনীয় মানুষ’ এবং উভয়ের নীচে তাঁদের গুনাবলী ও বৈশিষ্ট্য লিখতে রাখতে হবে। অথবা যেমন, তাঁকে জানার চেষ্টা করতে হবে, কুরআনের দৃষ্টিতে মানুষের কল্যাণ ও মুক্তি কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল এবং কোন কোন জিনিসকে সে মানবতার জন্যে ক্ষতিকর ও ধংসাত্নক গণ্য করে – এ বিষয়টিকেও সুস্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে জানার জন্যে আগের পদ্ধতিই অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ নোট বইতে কল্যাণের জন্য ‘অপরিহার্য বিষয় সমূহ’ এবং ক্ষতির জন্য ‘অনিবার্য বিষয় সমূহ’ – এই শিরোনাম দুটি পাশাপাশি লিখতে হবে। অতঃপর প্রতিদিন কুরআন অধ্যয়ন করার সময় সংশ্লিষ্ট বিষয় দুটি সম্পর্কে নোট করে যেতে হবে। এ পদ্ধতিতে আকীদাহ-বিশ্বাস, চরিত্র-নৈতিকতা, অধিকার, কর্তব্য, সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, আইন, দলীয় সংগঠন- শৃঙ্খলা, যুদ্ধ, সন্ধি এবং জীবনের অন্যান্য বিষয়াবলী সম্পর্কে কুরআনের বিধান নোট করতে হবে এবং এর প্রতি বিভাগের সামগ্রিক চেহারা কী দাড়ায়, তারপর এগুলোকে একসাথে মেলালে কোন ধরনের জীবন চিত্র ফুটে ওঠে, তা অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে। আবার জীবনের বিশেষ কোন সমস্যার ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে হলে এবং সে ব্যাপারে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে হলে সেই সমস্যা সম্পর্কিত প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্য গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে হবে। এই অধ্যয়নের মাধ্যমে তাঁকে সংশ্লিষ্ট সমস্যার মৌলিক বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে জেনে নিতে হবে। মানুষ আজ পর্যন্ত সে সম্পর্কে কি কি চিন্তা করেছে এবং তাঁকে কিভাবে অনুধাবন করেছে? কোন কোন বিষয় এখনো সেখানে সমাধানের অপেক্ষায় আছে? মানুষের চিন্তার গাড়ি কোথায় গিয়ে আটকে গেছে? এই সমাধানযোগ্য সমস্যা ও বিষয়গুলোকে সামনে রেখেই কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে। কোন বিষয় সম্পর্কে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি জানার এতিই সবচেয়ে ভালো এবং সুন্দর পথ। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, এভাবে কোন বিষয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে অধ্যয়ন করতে থাকলে এমন সব আয়াতের মধ্যে নিজের প্রশ্নের উত্তর পাওয়ায় যাবে, যেগুলো ইতোপূর্বে কয়েকবার পড়া হয়ে থাকলেও এই তত্ত্ব সেখানে লুকিয়ে আছে একথা ঘুনাক্ষরেও মনে জাগে নি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url