Ad

রাসূল (সাঃ) এর শেখানো পথ।

 

রাসূল (সাঃ) এর শেখানো পথ

আল্লাহ পাক মানুষের মধ্যে এ যোগ্যতা দান করেছেন যে, সে জীবনের জন্য যখন কোন একটা লক্ষ্য স্থির করে নেয় তখন ঐ লক্ষ্য হাসিলের জন্য যত শ্রম, সাধনা ও ত্যাগ তিতিক্ষা প্রয়োজন তা সে হাসিমুখে বরণ করে নিতে পারে। এ যোগ্যতা না থাকলে মানুষ জীবন সংগ্রামের কোন স্তরই অতিক্রম করতে পারতো না।

স্বাধীনতার সংগ্রামে দীর্ঘ কারাযন্ত্রণা ভোগ করা, এমনকি মৃত্যুর পরওয়া পর্যন্ত না করা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ও সাধনায় সকল আরামকে হারাম করে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করা, বড় ব্যবসায়ী হবার জন্য রাত দিন এক করে কঠোর পরিশ্রম করা ইত্যাদি এ কথাই প্রমাণ করে যে, লক্ষ্য স্থির করার সিদ্ধান্ত নিলে তা হাসিল করতে সবরকম কষ্ট বরণ করা সম্ভব।

আল্লাহর রাসূলগণ তাই প্রথমেই গোড়ায় হাত দিয়েছেন। মানুষকে তার জীবনের মূল লক্ষ্য স্থির করার ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ডাক দিয়েই তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। কুরআন পাকের কয়েকটি সূরা বিশেষ করে সূরা আল আ’রাফ ও সূরা হুদে বেশ কয়েকজন রাসূলের নাম উল্লেখ করে প্রমাণ করা হয়েছে যে, সকল রাসুল মানব সমাজকে একই কথা কবুল করার দাওয়াত দিয়েছেন। সে কথাটি হলো-

يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ

‘হে আমার কাওম! একমাত্র আল্লাহর হুকুম মেনে চল। কারণ তিনি ছাড়া আর কেউ হুকুমকর্তা হবার যোগ্য নেই।’ এ দাওয়াতই হলো তাওহীদের দাওয়াত।

এ ডাকে তারাই সাড়া দিয়েছে যারা আল্লাহকে একমাত্র হুকুমকর্তা মেনে চলার জন্য প্রস্তুত হয়েছে এবং আল্লাহর হুকুম বিরোধী কারো হুকুম না মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা রাসূলগণের এ প্রথম দফা দাওয়াত কবুল করেছে তাদেরকে যে দ্বিতীয় দাওয়াত দেয়া হয়েছে, তা বিভিন্ন সূরায় উল্লেখ রয়েছে। বিশেষ করে সূরা আশ-শুয়ারায় বিভিন্ন নবীর নাম উল্লেখ করে দেখানো হয়েছে যে, সকল নবীই এ দাওয়াত দিয়েছেন। এ দ্বিতীয় দফা দাওয়াতের ভাষা হলোঃ

فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطيعونِ

‘আল্লাহকে ভয় কর, তিনি যা অপছন্দ করেন তা থেকে বেঁচে থাক এবং আমাকে মেনে চল।’

দ্বিতীয় দফা দাওয়াতের মাধ্যমে রাসূলের নেতৃত্ব মেনে নেয়ার জন্যে ঐসব লোককে নির্দেশ দেয়া হলো যারা তাওহীদকে কবুল করে নিয়েছে। এ দ্বিতীয় দাওয়াতটি হলো রিসালাতের দাওয়াত। যে রিসালাতকে কবুল করলো সে এ সিদ্ধান্তেই নিল যে, আমি আল্লাহর হুকুম একমাত্র রাসূল থেকেই জেনে নেব এবং তিনি যেভাবে ঐ হুকুম পালন করা শিক্ষা দেন একমাত্র ঐ তরীকাই মেনে চলব। আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্য রাসূল ছাড়া আর কারো কাছ থেকে ভিন্ন কোন তরীকা গ্রহণ করব না।

যারা তাওহীদ ও রিসালাতকে কবুল করে নিল তাদেরকে সংগঠিত করে রাসূল (সা) এ দুটো দাওয়াত জনগণের মধ্যে প্রসারিত করতে লাগলেন। রাসূল (সা) নিজে এবং যারা তাঁর দাওয়াত কবুল করলেন তারা সবাই রাসূলের নেতৃত্বে তাওহীদ ও রিসালাতের দাওয়াতকে একটি আন্দোলনে রূপদান করেন। এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য হলো সমাজে আল্লাহর প্রভুত্ব ও রাসুলের নেতৃত্ব কায়েম করা অর্থাৎ দেশ ও সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব এমন লোকদের হাতে আনা প্রয়োজন, যারা আল্লাহর মর্জিমতো দেশকে চালাবে। যারা এভাবে রাসূলের নেতৃত্বে সংগঠিত হতে রাজি হলেন তাদেরকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া হলো যে, এ পথে সংগ্রাম করা ও আসল উদ্দেশ্য হলো আখিরাতের সাফল্য। দুনিয়ার সাফল্য আসল টার্গেট নয়। আখিরাতের টার্গেটকে সামনে রেখে যারা এ পথে চলবে একমাত্র তাদের উপরই আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন এবং পরকালে তারাই বেহেশতের চিরস্থায়ী সুখ শান্তি লাভ করতে পারবে।

তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত হলো রাসূলগণের মূল দাওয়াত। মানব সমাজ এর ভিত্তিতে পরিচালিত হলেই মানুষ দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি লাভ করতে পারবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তর ও পর্যায়ে যারা আগে থেকেই নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব দখল করে আছে তাদেরকে তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের দাওয়াত দেয়া হল। কারণ তারা এ দাওয়াত কবুল করলে বিনা বাধায় সমাজ রাসূলের দেখানো পথে চলতে পারবে। সব যুগেই নবীগণ নেতৃস্থানীয়দের এ উদ্দেশ্যেই বিশেষভাবে দাওয়াত দিয়েছেন।

কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে, নেতৃত্বের অধিকারীরা এ দাওয়াত কবুল করতে রাজি হয়নি বলে তাদের সাথে নবীদের সর্বাত্মক সংঘর্ষ হয়েছে। নবী ও তাঁর সাথীদের উপর হাজারো রকমের নির্যাতন চালানো হয়েছে। হক ও বাতিলের এ সংঘর্ষের মাধ্যমেই ইসলামী আন্দোলনে শরীক জনশক্তির মধ্যে প্রয়োজনীয় গুনাবলী সৃষ্টি হয়েছে, যা সমাজ ও রাষ্ট্রকে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন।

একটু ভেবে দেখুন-

নবী রাসূলগণের দাওয়াত কবুল করে ঐ পদ্ধতিতে যারা ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং বাতিল শক্তির মোকাবিলায় সদা সতর্ক থাকতে বাধ্য হয়, তাদের মন স্বাভাবিক কারণেই ভিন্ন চিন্তার জন্য কমই খালি থাকে। ইসলামী আন্দোলনের দেয়া পদ্ধতি অনুযায়ী তাদের ২৪ ঘন্টার রুটিন প্রণয়ন করতে হয়। নিজেদের জীবনকে এভাবেই আল্লাহর সৈনিক হিসাবে তারা গড়ে তুলবার চেষ্টা করেন। এর ফাঁকেই পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। পেশার ঝামেলা তো পোহাতে হয়ই। বাতিল শক্তির সৃষ্ট বাধা বিপত্তির প্রতিকারের উদেশ্যে আন্দোলন হঠাৎ করেই যেসব কর্মসূচী ঘোষণা করে তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে শ্রম, সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। তাদের মনে বাজে চিন্তা ঢুকবার অবকাশ কোথায়? যে পথে চলার সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন তা তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

যারা আন্দোলনে শরীক নয়, তাদের পক্ষে আল্লাহর পথের এ মুজাহিদের দৈহিক ও মানসিক ব্যস্ততা সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা কঠিন। তাদের মনে কুচিন্তা, বাজে খেয়াল, ভিন্ন ভাব ঢুকাবার জন্য ইবলিশের পক্ষে তেমন সুযোগ পাওয়ার কথা নয়।

তবু অনৈসলামী সমাজব্যবস্থার দরুণ তাদের ঈমান, আকীদা, রুচি ও পছন্দের বিরোধী পরিবেশে তাদের মনকে পবিত্র, রাখার জন্য সদা সতর্ক থাকতে হয়। পরিবারে, সামাজিক অনুষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, পথে-ঘাটে, যানবাহনে, হাটে-বাজারে তাদেরকে বিপরীত পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়। আর দশজনের মতোই রক্ত মাংসে গড়া দেহের দাবি তাদেরকেও তাড়া করে স্বাভাবিক। তাই এসব অবস্থায় মনকে পবিত্র রাখার জন্য বিশেষ যত্ম নিতে হয়। এখানে কবি রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা-আবিষ্কার’ নামক কবিতাটি থেকে চমৎকার উদাহরণ পাওয়া যায়। এক রাজা তার রাজ্যের ধুলাবালি থেকে পা দুটোকে রক্ষা করার জন্য রাজ দরবারে পরামর্শ চাইলেন। চামড়া দিয়ে সব রাস্তাঘাট ঢেকে দেয়ার পরামর্শসহ বিভিন্ন রকম মতামত প্রকাশ করা হয়। এভাবেই জুতা আবিষ্কার করা হয় বলে ঐ কবিতায় একটা রূপক গল্পের অবতারনা করা হয়েছে।

সমাজের সর্বত্র যে অপবিত্রতা বিরাজ করছে, তা থেকে মনকে বাঁচাবার উদ্দেশ্যে পবিত্রতার চামড়া দিয়ে মনের জন্য মোড়ক তৈরি করাই একমাত্র উপায়। এ ব্যাপারে রাসূল (সা) নিম্নরূপ ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন যা সত্যিই অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ও বাস্তবভিত্তিক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url