Ad

মানব জীবনে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কী?

 

মানব জীবনে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কী?

 

সরাসরি জ্ঞানের উৎস হলো পাঁচটি ইন্দ্রিয়। এ দ্বারা অতি সামান্য জ্ঞানই হাসিল করা যায়। শুধু এটুকু জ্ঞানের দ্বারা মানুষের জীবন চলে না। সামান্য কিছু ক্ষেত্র ছাড়া মানুষকে বিশ্বাসের উপর নির্ভর করেই চলতে হয়।

 

১. শৈশবে মা বলে দিয়েছেন যে, অমুক আমার বাবা। বিশ্বাস করেছি। এ বিষয়ে সরাসরি জ্ঞানের কোনো সুযোগ নেই।

 

২. বাংলা ভাষা শিখার জন্য অ,আ, ক, খ, তে বিশ্বাস করেই এ ভাষা শিখতে হয়েছে।

 

৩. অসুখ হলে ডাক্তারের উপর বিশ্বাস না করলে চিকিৎসা পাওয়া অসম্ভব।

 

৪. ফসল হবে এ কথা বিশ্বাস না হলে কৃষক চাষাবাদই করতে পারবে না।

 

৫. বিচারকের মনে সাক্ষী প্রমাণ নিয়ে আসামি দোষি বলে বিশ্বাস সৃষ্টি হলেই শাস্তি দেয়, বিশ্বাস না হলে বা সন্দেহে হলে শাস্তি দেয় না।

 

৬. যে কোন সময় মৃত্যু আসতে পারে। তবু মানুষ আরও বেঁচে  থাকবে বিশ্বাস করে বলেই জীবন সচল আছে।

 

৭. মানুষে মানুষে সম্পর্ক বিশ্বাসের উপরই কায়েম থাকে। স্বামীস্ত্রীর সম্পর্ক, ভাই –ভাইয়ে সম্পর্ক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক, ব্যবসায়-বাণিজ্যের সম্পর্ক সবই বিশ্বাসনির্ভর।

 

হিসাব করলে দেখা যাবে যে, বিশ্বাস ছাড়া একদিনও মানুষ চলতে পারে না। বিশ্বাসই গোটা জীবনকে ঘিরে রেখেছে।

 

না দেখে বিশ্বাস করি না

 

আজব মগজের এমন কিছু লোক আছে, যারা বহু বিষয়েই বাধ্য হয়ে বিশ্বাস করে, কিন্তু আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বসের বেলায় বলে, ‘না দেখে বিশ্বাস করি না’।

 

মযবুত ঈমান সম্পর্কে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমাবেশ আলোচনাকালে ‘না দেখে বিশ্বাস করি না’ কথাটার অসারতা প্রমাণ করার জন্য একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে থাকি। আমার হাতের মুঠোয় এক গুচ্ছ চাবি রেখে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে বলি, ‘আমি দাবি করে বলছি যে, আমার হাতে এক গুচ্ছ চাবি আছে, তোমরা কি এ কথা বিশ্বাস কর’? ছেলেরা বলে, হ্যাঁ; বিশ্বাস করি। আবার জিজ্ঞেস করি, কেন বিশ্বাস কর? জবাবে বলে, আমরা বিশ্বাস করি যে, আপনি মিথ্যা বলেন না। তাই আপনি যখন বলছেন, চাবি আছে তখন আমরা এ কথা বিশ্বাস করি।

 

মুষ্টি খুলে চাবিটি দেখিয়ে আবার জিজ্ঞেস করি, এটা চাবি তা বিশ্বাস কর? তখন কেউ কেউ বলে ফেলে, হ্যাঁ; বিশ্বাস করি। আমি বলি, যখন চাবিটি অদৃশ্য ছিল তখনই বিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল। চাবিটি দেখার পর বিশ্বাসের আর প্রয়োজন রইল না। যারা দেখার পরও বিশ্বাস করি বলেছ তারা বিশ্বাসের বাজে খরচ করেছ। দেখলে আর বিশ্বাসের দরকার হয় না। না দেখলেই বিশ্বাসের প্রয়োজন হয়। তাই ‘না দেখে বিশ্বাস করি না’  কথাটি একেবারেই হাস্যকর ও অযৌক্তিক। বোকাদের পক্ষেই এমন কথা বলা সম্ভব। কোনো নাস্তিকও তার মাকে এ কথা বলতে পারবে না, মা ছোট সময় না বুঝে তোমার কথা মেনে নিয়ে বিশ্বাস করেছি যে, অমুক আমার বাবা, এখন আমি না দেখে কোনো কিছু বিশ্বাস করি না। তাই আমাকে দেখাও কেমন করে ঐ লোক আমার বাবা। এ কথা না দেখেও বিশ্বাস করে। শুধু আল্লাহর বেলায় না দেখে সে বিশ্বাস করে না।

 

বাস্তব জীবনে বিশ্বাস ছাড়া মানুষ একদিনও চলতে পারে না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে ও তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য বিশ্বাসের আশ্রয় নিতে হয়। এ অবস্থায় আল্লাহ, ওহী, রাসূল, আখিরাত ইত্যাদি বিরাট বিরাট বিষয়ে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার না করা বুদ্ধিমানের লক্ষণ নয়।

 

জ্ঞান চর্চা বিশ্বাস দিয়েই শুরু হয়

 

সকল জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই নিকট রয়েছে। প্রত্যেক বিষয়ে জ্ঞানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু আল্লাহই জানেন।  তিনিই শুরু, তিনিই শেষ। যে কোনো জ্ঞান চর্চা করতে হলে প্রথমেই কতক বিষয়কে বিশ্বাস করতে হয়। A,B,C,D বা ক,খ,গ, যেভাবে লেখা আছে এগুলোকে বিনা যুক্তিতে মেনে নিয়েই ভাষা শেখা শুরু করতে হয়। কেই যদি তর্ক করে যে, এভাবে কেন, অন্যভাবে লিখলে দোষ কী? তাহলে তার ভাষা শেখা শুরু করাই সম্ভব হবে না।

 

জ্যামিতি পড়তে হলে প্রথমেই কতক Axiom বা স্বতঃসিদ্ধ বিষয়ে বিশ্বাস করতে হয় । যেমন বিশ্বাস করতে হয় যে, বিন্দুর (Pount) দৈর্ঘ্য, প্ৰস্থ, উচ্চতা কোনটাই নেই, তবু বিন্দুর অস্তিত্ব আছে। যদিও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী এটা একেবারেই অযৌক্তিক। তথাপি এটা বিশ্বাস না করলে জ্যামিতি শেখা শুরুই করা যায় না।

 

বিজ্ঞান চর্চা প্ৰথমে হাইপথেসিস (কল্পনা, অনুমান) দিয়েই শুরু হয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কারক নিউটন সম্পর্কে জানা যায় যে, ফলের বাগানে বসা অবস্থায় তাঁর সামনে গাছ থেকে একটা আপেল নিচে পড়লো। এর আগেতো বহুবার তিনি আপেল পড়তে দেখেছেন; কিন্তু সেদিন তাঁর মনে প্রশ্ন জাগলো যে, উপরেও শূন্য নিচেও শূন্য। তাহলে ফলটি উপরের দিকে না যেয়ে নিচের দিকে নামল কেন? তাঁর মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যে, পৃথিবীর মধ্যে এমন কোন শক্তি আছে যা বস্তুকে আকর্ষণ করে। এভাবে বিশ্বাসের ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সূচনা হয়।

 

জ্ঞানের ময়দানে কোন বিষয়েই জ্ঞানের শুরু বা শেষ মানুষের আয়ত্তে নেই। প্ৰথমে বিশ্বাস দিয়ে জ্ঞান চর্চা শুরু হয় এবং একটি পৰ্যায় পর্যন্ত যেয়ে চর্চা থেমে যায়। জ্ঞানের শেষ পর্যন্ত পৌছার সাধ্য মানুষের নেই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url