Ad

অবিচল ঈমানের অধিকারী সাহাবী।

 

অবিচল ঈমানের অধিকারী সাহাবী

 

নবীর প্রিয় পাত্র খোদার অনুগৃহীত

 

আরবী****

 

৬৯। হযরত উবাই ইবনে কা’ব ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ( একদিন ) আমি মসজিদে নববীতে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নামায পড়তে লাগলো। সে নামাযের মধ্যে এমনভাবে কিরআত পাঠ করলো যে, আমার কাছে আশ্চর্যজনক মনে হল। অতপর আরো এক ব্যক্তি আসলো। সে এমনভাবে কিরআত পাঠ করলো যে, প্রথম ব্যক্তির কিরআত থেকে তা ভিন্নতর ছিল। আমরা নামায শেষ করে সবাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেলাম। আমি বললাম, এই ব্যক্তি এমনভাবে কিরআত পড়েছে যা আমার কাযহে সঠিক মনে হয়নি। আর এই দ্বিতীয় ব্যক্তিও ভিন্ন ধরনের কিরআত পাঠ করেছে ( এটা কেমন ব্যাপার )? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের উভয়কে ( নিজ নিজ পন্থায় ) কুরআন পাঠ করার নির্দেশ দিলেন। অতএব তারা কুরআন পাঠ করলো। তিনি উভয়ের পাঠকে সঠিক বললেন। এতে আমার অন্তরে মিথ্যার এমন কুমন্ত্রনার উদ্রেক হল যা জাহেলী যুগেও কখনো আমার মনে জাগেনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আমার এ অবস্থা লক্ষ্য করলেন, তিনি আমার বুকে সজোরে হাত মারলেন, ( মিয়া, চেতন হও, কি চিন্তা করছ? )। তিনি হাত মারতেই আমি যেন ঘামে ভেসে গেলাম, আমার বুক যেন চৌচির হয়ে গেলো এবং ভয়ের চোটে আমার মনে হল যেন আমি স্বয়ং আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন- হে উবাই, আমার কাছে যখন কুরআন পাঠানো হয় তখন আমাকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, আমি যেন তা এক হরফে ( একই উচ্চারন ভঙ্গিতে ) পাঠ করি ( এবং সেটি ছিল কুরাইশদের উচ্চারন ভংগি )। আমি প্রতি উত্তরে বললাম, আমার উম্মতের সাথে নমনীয় ব্যবহার করা হোক। অতপর আআমকে দ্বিতীয়বার বলা হল, দুই হরফে কুরআন পাঠ করতে পারো। আমি প্রতি উত্তরে আরজ করলাম, আমার উম্মতের সাথে নরম ব্যবহার করা হোক। তৃতীয় বারের জবাবে বলা হল, আচ্ছা কুরআনকে সাত রকমের    ( আঞ্চলিক ) উচ্চারন ভঙ্গিতে পাঠ করতে পারো। আরো বলা হল, তুমি যতবার আবেদন করেছো ততবারই জবাব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তোমাকে তিনটি দোয়া করারও অধিকার দেয়া হল, তুমি তা এখন করতে পারো ( এবং তা কবুল করা হবে ) এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি আরজ করলাম, “হে আল্লাহ, আমার উম্মতকে মাফ করে দিন, হে আল্লাহ, আমার উম্মতকে মাফ করে দিন ”। আর তৃতীয় দোয়াটি আমি সেদিনের জন্য রেখে দিয়েছি যেদিন সমস্ত সৃষ্টিকুল আমার শাফায়াত লাভের আশায় চেয়ে থাকবে—এমনকি ইবরাহীমও ( আঃ )। ---------- ( সহীহ মুসলিম )

 

  হযরত উবাই ইবনে কা’ব ( রাঃ ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেহায়েত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন সাহাবী ছিলেন। তিনি প্রবীন এবং প্রাজ্ঞ সাহাবাদের মধ্যে গণ্য ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবাদের প্রত্যেকের সম্পর্কে জানতেন যে, কার মধ্যে কি যোগ্যতা এবং কামালিয়াত রয়েছে। হযরত উবাই ইবনে কা’বের কামালিয়াত ছিল এই যে, তাঁকে কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী মনে করা হতো। এই উবাই ইবনে কা’বের সামনেই এমন ঘতাওনা ঘটলো যে, দুই ব্যক্তি ভিন্ন দুই পন্থায় কুরআন পাঠ করলো যা তাঁর জানামতে সঠিক ছিল না। তিনি তাঁদের উভয়কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাযির করলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের উভয়ের পাঠকেই সঠিক বলে স্বীকৃতি দিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর অন্তরে এক কঠিন এবং মারাত্মক অসওয়াসার ( বিভ্রান্তি ) উদ্রেক হয়। তা এতই মারাত্মক ছিল যে, তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, জাহেলী যুগেও এতো জঘন্য বিভ্রান্তি আমার মনের মধ্যে সৃষ্টি হয়নি যা এসময় আমার মধ্যে উদয় হয়েছিলো। তাঁর মনে যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিলো তা হচ্ছে- এই কুরআন কি খোদার তরফ থেক এসেছে না কোন মানুষের রচিত জিনিস—যা পাঠ করার ব্যাপারে এ ধরনের অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে।

 

অনুমান করুন, এই হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী এ ধরনের একজন সুউচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন সাহাবীর মনে এ ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে জানা গেল যে, সাহাবায়ে কেরামগনও মূলত মানুষই ছিলেন, ফেরেশতা ছিলেন না এবং মানবীয় গুনাবলী থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র ও মুক্ত ছিলেন না। তাঁদের কামালিয়াত ছিল এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্যে থেকে কোন মানুষ যতটা উত্তম ফায়দা উঠাতে পারে তা তারা উঠিয়েছেন। তাঁর প্রশিক্ষনের আওতায় সাহাবাদের এমন একটি দল তৈরি হয়ছিল যে, মানব জাতির ইতিহাসে কখনো এ ধরনের মানুষ দেখা যায় নি। কিন্তু তা সত্যেও তারা তো মানুষই ছিলেন। এজন্য যখন এমন একটি ব্যাপার সামনে আসলো যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া আল্লাম ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় দুই ব্যক্তির কুরআন পাঠ শুনছেন আবার দুটোকেই সহীহ বলে স্বীকৃতি দিচ্ছেন, তখন হঠাৎ করে ঐ সাহাবীর মনে এমন খেয়াল আসলো যার উল্লেখ আলোচ্য হাদীসে রয়েছে।

 

 এখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি দেখুন। মুখমন্দলের অবস্থা দেখেই তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর মনে কি সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। সাথে সাথে তিনি তাঁকে সাবধান এবং সতর্ক করার জন্য তাঁর বুকে হাত মারলেন, মিয়া, সচেতন হও। কি চিন্তায় মগ্ন হয়েছ?

 

একথাও বুঝে নেয়া দরকার যে, মনের মধ্যে অসওয়াসা সৃষ্টি হলেই মানুষ কাফের হয়ে যায় না এবং গুনাহগারও হয় না। অসওয়াসা এমন এক মারাত্মক জিনিস যে, আল্লাহ তায়ালা যদি তা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে বাঁচার উপায় আছে, অন্নথায় কোন মানুষই তা থেকে বেঁচে থাকতে পারে না। হাদীস সমূহের বর্ণনায় এসেছে, সাহাবাগন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাযির হয়ে আরজ করতেন, হে আল্লাহর রাসুল, কখনো কখনো আমাদের মনের মধ্যে এমন সংশয় সৃষ্টি হয় যে, তাতে আমাদের মনে হয় আমাদের পরিনতি খারাপ হয়ে গেছে। আমাদের আখেরাত নষ্ট হয়ে গেছে। একথার পরিপ্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আসল ব্যাপার তা নয় যে, তোমাদের মনে অসওয়াসা আসবে না। বরং আসল ব্যাপার হচ্ছে তা এসে তোমাদের মনে যেন স্থায়ী হতে না পারে। কোন খারাপ ধারনা মনের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে তা শেষে হয়ে গেলে আল্লাহ তায়ালার দরবারে এজন্য পাকড়াও করা হবে না। কিন্তু যদি নিকৃষ্ট খেয়াল আসার পর তোমরা এটাকে নিজেদের মনে স্থান দাও এবং এর পোষকতা করতে থাকো, তাহলে এটা এমন জিনিস যা মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে থাকে।

 

  হযরত উবাই ইবনে কা’বের মনের মধ্যে একটি ঘৃণ্য এবং বিপর্যয়কর অসওয়াসা সৃষ্টি হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে সাথেই অনুভব করলেন যে, তাঁর মনে এই অসওয়াসা এসেছে। এজন্যে তিনি তাঁর বুকে চপেটাঘাত করলেন। তিনি চপেটাঘাত করতেই উবাই ( রাঃ ) সংবিত ফিরে পেলেন এবং সাথে সাথে তিনি অনুভব করতে পারলেন যে, আমার মনে কতো নিকৃষ্ট অসওয়াসা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি স্বয়ং বর্ণনা করেছেন, এটা অনুভব করতেই আমার মনের মধ্যে এমন কম্পন সৃষ্টি হল, মনে হল আল্লাহ তায়ালা আমার সামনে উপস্থিত এবং ভয়ের চোটে আমার ঘাম ছুটে গেলো।

 

তাঁর এই দ্রুত প্রতিক্রিয়া মূলত তাঁর অবিচল ঈমান এবং পূর্ণতার আলামত বহন করে। তাঁর ঈমান যদি এই পর্যায়ের শক্তিশালী না হতো তাহলে তাঁর মধ্যে এরূপ কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হতো না।

 

কোন ব্যক্তির ঈমান যদি মজবুত হয় এবং তাঁর অন্তরে কোন খারাপ অসওয়াসা আসে তাহলে সে কেপে যাবে এবং সে দ্রুত নিজের ভ্রান্তি বুঝতে পারবে। কিন্তু কোন ব্যক্তির ঈমানে যদি বক্রতা থেকে থাকে তাহলে তাঁর অন্তরে খারাপ অসওয়াসা আসবে এবং তা তাঁর ঈমানকে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে চলে যাবে। অতপর সে নিজের ঈমানের দুর্বলতার কারনে এ ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে যাবে। অতপর সেই কুমন্ত্রনা আবারো তাঁর মনে জাগ্রত হবে এবং তাঁর ঈমানকে আর একটা নাড়া দিয়ে চলে যাবে। এমনকি একসময় তাঁর পুরা ঈমানকেই নড়বড় করে দিয়ে চলে যাবে। কিন্তু মজবুত এবং সবল ঈমানের অধিকারী ব্যক্তির অবস্থা এরূপ হয় না। সে কুমন্ত্রনা জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে সতর্ক হয়ে যায়। হযরত উবাই ইবনে কা’বের   ( রাঃ ) প্রতিক্রিয়া সেকথারই সাক্ষ্য বহন করে। হযরত উবাই ইবনে কা’বের ( রাঃ ) সতর্ক হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বুঝানোর পর পরিস্কার করে বললেন, প্রথমে কুরআন মাজীদ যখন নাযিল হয় তখন তা কুরাইশদের মধ্যে প্রচলিত বাক্যরীতি ও উচ্চারন ভংগি অনুযায়ী নাযিল হয়। এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরও মাতৃভাষা ছিল। কিন্তু তিনি নিজে আল্লাহ তায়ালার দরবারে আবেদন করলেন যেন তা অনুরূপ উচ্চারন ভংগিতেও পাঠ করার অনুমতি দেয়া হয়। আবেদনের ভাষা ছিল নিম্নরুপঃ “হাব্বেন আলা উম্মাতি----- আমার উম্মাতের সাথে নম্র ব্যবহার করুন।” তাঁর অনুভূতি ছিল, আমার মাতৃভাষা সাড়া আরবে প্রচলিত ভাষা নয়, বরং বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী গোত্র সমূহের মধ্যে কিছুটা স্থানীয় বাক্যরীতিরও উচ্চারন প্রচলিত রয়েছে। এজন্য সব লোকের জন্য যদি কেবল কুরাইশদের মধ্যে প্রচলিত ভাষার রীতি অনুযায়ী কুরআন পাঠ করা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয় তাহলে তারা কঠিন পরিক্ষায় নিমজ্জিত হবে। তাই তিনি আল্লাহ তায়ালার দরবারে আরজ করলেন, আমার উম্মতের প্রতি নম্রতা প্রদর্শন করা হোক। সুতরাং প্রথম আবেদনের জবাবে দুই রকম বাক্যরীতি ও উচ্চারন ভঙ্গিতে কুরআন পাঠ করার অনুমতি দেয়া হল।

 

নিজ বান্দার সাথে আল্লাহ তায়ালার ব্যবহারও আশ্চর্যজনক। প্রথম দফা দরখাস্তের জবাবে সাত রকম পন্থায় কুরআন পাঠ করার অনুমতি দেয়া হয় নি। অথচ সাত রকম পন্থায় পাঠ করতে দেয়ার ইচ্ছাই ছিল। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফা আবেদন করার অপেক্ষা করলেন। এভাবে একদিকে মনে হয়, রাসুলুল্লাহকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্য ছিল যে, নবী হিসাবে তাঁর মধ্যে নিজের দায়িত্ব পালনের কতটা অনুভূতি রয়েছে। এজন্য প্রথমে একক ভংগিতেই কুরআন নাযিল করা হয়। কিন্তু যেহেতু তাঁর মনে এই অনুভূতি জাগ্রত ছিল যে, আরবের লোকদের হেদায়াত করাই আমার সর্ব প্রথম দায়িত্ব। আর আরবদের ভাষায় স্থানীয় পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। যদি কুরআন মাজীদের একটি মাত্র অঞ্চলের বাক্যরীতি অনুযায়ী পাঠ করার অনুমতি দেয়া হয় তাহলে লোকেরা কঠিন বিপদে পড়ে যাবে। তাই তিনি আল্লাহ তায়ালার দরবারে আরজ করলেন, আমার উম্মতের সাথে নরম ব্যবহার করা হোক। জবাবে দুই আঞ্চলিক রীতিতে তা পাঠ করার অনুমতি দেয়া হল। তিনি পুনরায় আরজ করলেন, আমার উম্মতের সাথে আরো নম্র ব্যবহার করা হোক। এভাবে তাঁর দুই দফা আবেদন করার পর সাত রীতিতে কুরআন পাঠ করার অনুমতি দেয়া হল। এরপর আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, যেহেতু তুমি আমার কাছে তিনবার দরখাস্ত করেছো এবং আমি তিনবারই জবাব দিয়েছি—এজন্য এখন তোমাকে আমার কাছে অতিরিক্ত তিনটি দোয়া করার অনুমতি সেয়া হল। পরম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দান করার এই ধরন আপনি লক্ষ্য করুন। এ জিনিসটিকেই তিনি কুরআন মাজীদে বলেছেন-

 

“রহমাতী অয়াসিয়াত কুল্লা শাইয়েন------ আমার অনুগ্রহ প্রতিটি সৃষ্টির উপর প্রসারিত হয়ে আছে।” ( সূরা আরাফ ; ১৫৬ )

 

এই হচ্ছে রহমতের ধরন যে, তুমি যেহেতু তোমার উম্মতের সাথে নম্র ব্যবহার করার জন্যে আমার কছে তিনবার আবেদন করেছে—তাই তোমার দায়িত্ব পালনের এ পদ্ধতি আমার পছন্দ হয়েছে। এজন্য তোমাকে এখন আরো তিনটি আবেদন করার অধিকার দেয়া হল। আমি তা অবশ্যই কবুল করবো।

 

 এখন দেখুন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুইবার দোয়া করে তৃতীয় বারের দোয়াটি আখেরাতের জন্য হাতে রেখে দিয়েছেন। অন্য দুটি দোয়াও তিনি কোন পার্থিব স্বার্থ, ধন-দৌলত এবং ক্ষমতা ও কৃতিত্ব হাসিল করার জন্য করেন নি। বরং তিনি দোয়া করলেন, আমার উম্মতের সাথে ক্ষমা সুন্দর ব্যবহার করা হোক। তিনি বলেছেন- “ইগফিরলি উম্মাতি------ আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন।” আরবী ‘মাগফিরাত’ শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে ক্ষমা করা, অপরাধ উপেক্ষা করা, অপরাধ দেখেও না দেখা ইত্যাদি।  ‘মিগফার’ বলা হয় এমন শিরস্ত্রানকে যা মাথাকে ঢেকে রাখে, গোপন করে রাখে। সুতরাং ‘ইগফিরলি উম্মাতি’- বাক্যাংশের অর্থ হচ্ছে- আমার উম্মাতের সাথে ক্ষমা, নম্রতা ও উদারতা পূর্ণ ব্যবহার করা হোক।

 

এরকম ব্যবহার তো হচ্ছে এই যে, কোন ব্যক্তি অপরাধ করলো এবং দ্রুত তাঁকে শাস্তি দেয়া হল। আরেক রকম ব্যবহার হচ্ছে এই যে, আপনি অপরাধ করেছেন আর আপনার অপরাধকে উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং আপনাকে সতর্ক হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আপনি পুনরায় অপরাধ করছেন এবং আপনাকে সংযত হওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এভাবে পুনঃ পুনঃ আপনার অপরাধ উপেক্ষা করে আপনাকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আপনি যেন শেষ পর্যন্ত সংশোধন হতে পারেন এবং নিজেকে সংযত করতে পারেন।

 

ঘটনা হচ্ছে, মুসলমান যে জাতির নাম—তাঁদের কাছে আল্লাহ তায়ালার সর্বশেষ কালাম কুরআন মাজীদ অবিকল মওজুদ রয়েছে। এর মধ্যে আজ পর্যন্ত কোন প্রকার রদবদল হতে পারেনি। আবার মুসলমানরাই সেই জাতি যাদের কাছে মহানবী ( সাঃ ) এর সীরাত, তাঁর বানী এবং তাঁর পথনির্দেশ অবিকল ও অপরিবর্তিত অবস্থায় সম্পূর্ণ সংরক্ষিত আছে। তাঁদের খুব জানা আছে হক কি এবং বাতিল কাকে বলে। তারা এও জানে যে, আমাদের কাছে আমাদের প্রতিপালকের দাবী কি। আমাদের প্রিয় নবী ( সাঃ ) কোন পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের একটি জাতি যদি ব্যক্তিগতভাবে অথবা সামস্টিগতভাবে নাফরমানী বা অসাদাচরন করে বসে কিন্তু তা সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালা তাঁদের ডলে- পিষে শেষ করে না দেন--- তাহলে এটা তাঁর সীমাহীন রহমত, বিরাট ক্ষমা এবং অনুগ্রহ ছাড়া আর কি? এক ধরনের অপরাধ তো হচ্ছে- অপরাধী জানতেই পারেনা যে, সে অপরাধ করেছে এবং সে আবারো অপরাধ করে বসলো। এ অবস্থায় সে এক ধরনের নম্র ব্যবহার পাওয়ার উপযোগী। কিন্তু এক ব্যক্তির জানা আছে আইন কি? এই আইনের দৃষ্টিতে কোন জিনিসটি অপরাধ তা তাঁর জানা আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে আইন ভঙ্গ করে। এর অর্থ হচ্ছে- এই ব্যক্তি কঠোর শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত। বর্তমান কালের মুসলমানদের দৃষ্টান্ত হল এটাই। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেখুন আজ তের- চৌদ্দশত বছরে আল্লাহ তায়ালার ব্যাপক শাস্তি আজ পর্যন্ত মুসলমানদের উপর নাযিল হয়নি। যদিও কোন কোন স্থানে পরীক্ষামুলক ভাবে বিপর্যয় এসেছে তবে অন্য স্থান সামলিয়ে নিয়েছে। এতো সেই দোয়ারই ফল যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার দরবারে আবেদন করেছিলেন- আমার উম্মতকে ক্ষমা করুন, তাঁদের অপরাধ উপেক্ষা করুন, তাঁদের সাথে কঠোরতা না করুন। সুতরাং তাঁর সেই দোয়া বাস্তবিকই কবুল হয়েছে।

 

এখানে একথাও ভালো করে বুঝে নেয়া দরকার যে, ‘ইগফির লি উম্মাতি’ বাক্যের দ্বারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কখনো উদ্দেশ্য এই ছিল না যে, আমার উম্মত যে কোন ধরনের খারাপ কাজই করুক না কেন তা সবই ক্ষমা করে দেয়া হবে। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তির নিজের কাধে বকরী বহন করে নিয়ে আসবে তা ভ্যা ভ্যা করতে থাকবে। সে আমাকে দাকবে – ইয়া রাসুলুল্লাহ, ইয়া রাসুলুল্লাহ।। -- আমি তাঁকে কি জবাব দেব? আমি বলব- এখন আমি তোমার কোন উপকারে আসবো না। কারন পূর্বেই আমি তোমার কাছে খোদার বিধান পৌছে দিয়েছি।” অর্থাৎ তোমরা যদি এমন অপরাধ করে আসো যার শাস্তি অবশ্যই পাওয়া উচিৎ--- তাহলে তোমরা আমার শাফায়াত লাভের অধিকারী হতে পারবে না। কিয়ামতের দিনের শাফায়াতের অর্থ এই নয় যে, সে যেহেতু আমার লোক, সুতরাং দুনিয়াতে জুলুম- অত্যাচার করেই আসুক না কেন জনগনের অধিকার আত্মসাৎ করেই আসুক না কেন কিন্তু তাঁকে ক্ষমা করিয়ে দেয়া হবে। আর অন্যরা জুলুম করলে তাঁদের গ্রেফতার করা হবে। কিয়ামতের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফায়াতের অর্থ কখনো এটা নয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url