Ad

মনকে বশে আনার উপায় জেনে নিন।

মনকে বশে আনার উপায়

১. পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতে নামায আদায় করা। দিন রাতে ২৪ ঘন্টার যাবতীয় কার্যক্রম নামাযকে কেন্দ্র করে রচনা করতে হবে। ফযরের নামায দিয়ে রুটিন শুরু। এর আগে আর কোন কাজ নয়। টয়লেট, অযু – গোসল তো নামাযেরই প্রস্তুতি।

কালেমা তাইয়্যেবার মাধ্যমে জীবনের যে পলিসি ঠিক করা হয়েছে তা হলো আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকা অনুযায়ী চলার সিদ্ধান্ত। নামায এ সিদ্ধান্ত অনুসারে চলারই ট্রেনিং। মন, মগজ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা নামাযে যা কিছু করা হয় তা সবই আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকা অনুযায়ী। এর অন্যথা হলে নামায বাতিল বলে গণ্য হয়।

নামাযের মাধ্যমে প্রধানতঃ তিনটি শিক্ষা দেয়া হয়ঃ

(ক) তুমি আল্লাহর গোলাম হিসাবে সব সময় সর্বাবস্থায় জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছ। তাই নামাযে যেভাবে তোমার মন, মগজ, দেহ আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরীকায় পরিচালনা করেছ নামাযের বাইরেও সেভাবে চলতে হবে।

(খ) তুমি যে আল্লাহর দাস সে কথা হামেশা মনে রাখার প্রয়োজনেই নামায আদায় করতে হয়। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা বলেন,  وَأَقِمِ الصَّلاةَ لِذِكري

‘আমার কথা স্মরণ রাখার জন্য নামায কায়েম কর’। (সূরা তোয়াহা: ১৪)

নামায শেষে হালাল রোজগারের জন্য যখন কর্মব্যস্ত হবে তখন আল্লাহকে ভুলে যাবে না। বরং وَاذكُرُوا اللَّهَ كَثيرًا ‘আরও বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো’। (সূরা জুমআ : ১০)

আল্লাহকে স্মরণ রাখার উদ্দেশ্যেই ২৪ ঘন্টার কার্যক্রমে প্রতিটি ফরয নামায জামায়াতে আদায় করতে হবে। এর জন্যই বাইরে কর্মব্যস্ত থাকা কালেও মনটাকে মসজিদেই ঝুলিয়ে রাখতে হবে। হাদীসে আছেঃ ৭ ব্যক্তি হাশরের ময়দানে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় থাকবে। তাদের একজন হলো

وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالمَسَاجِدِ

‘ঐ ব্যক্তি যার মন মসজিদে ঝুলন্ত।’ অর্থাৎ শত কাজের ঝামেলার মধ্যেও মসজিদে জামায়াতে ফরয নামায আদায়ের নেশায় লেগে থাকতে হবে। এভাবে ৫ ওয়াক্ত জামায়াতে নামায তার মনে আল্লাহর যিকর তাজা রাখে। নামায তাকে আল্লাহকে ভুলতে দেয় না। নামাযে মনকে আটকে রাখার চেষ্টা করতে থাকাই আমাদের কর্তব্য। বারবার মনোযোগ ছুটে গেলেও নিরাশ হওয়া উচিত নয়। ইচ্ছা করে অন্য চিন্তা না করলে এবং মনোযোগকে ধরে রাখার সাধ্য মতো চেষ্টা করতে থাকলে আশা করা যায় যে, অনিচ্ছাকৃতভাবে মনোযোগ ছুটে গেলেও আল্লাহ পাক ক্ষমা করবেন। কারণ আল্লাহ পাক সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপান না।

(গ) নামাযের তৃতীয় বড় শিক্ষা হলো অশ্লীল ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার যোগ্যতা অর্জন করা।

إِنَّ الصَّلاةَ تَنهىٰ عَنِ الفَحشاءِ وَالمُنكَرِ ۗ

‘নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও হারাম কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে।’ (সূরা আনকাবুত: ৪৫)

নামাযীকে তাই সব সময় সচেতন থাকতে হয় যে, অশ্লীল ও হারাম কাজ যেন হয়ে না যায়, তাহলে তো আল্লাহ তার নামায কবুল করবেন না। ঐ নামাযই আল্লাহর নিকট কবুল হবার যোগ্য যে নামায অশ্লীল ও হারাম কাজ থেকে ফিরাতে পারে। উপরের আয়াতে এ কথাই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

২. শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়া: এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ ناشِئَةَ اللَّيلِ هِيَ أَشَدُّ وَطئًا وَأَقوَمُ قيلًا

“আসলে রাত জাগা নাফসকে দমন করার জন্য খুব বেশি ফলদায়ক এবং কুরআন ঠিকমতো পড়ার জন্য বেশি উপযোগী।” (সূরা আল মুজ্জাম্মিল ৬ আয়াত) তাহাজ্জুদের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে মহব্বতের যে ঘনিষ্ঠতা জন্মে এর কোন বিকল্প নেই। এ মহব্বতের হাতিয়ারই মনকে ইবলিশের হামলা থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দুনিয়া যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন ঘুমের মজা ত্যাগ করে যে মনিবের দুয়ারে ধরণা দেয়, তার মনে আল্লাহর মহব্বত বৃদ্ধি পায়। রাসূল (সা) তাহাজ্জুদের নামায সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন ‘এটা সালেহ লোকদের তরীকা, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়, অতীত-গুনাহর কাফ্ফরা ও ভবিষ্যৎ-গুনাহর নিরাপত্তা।’

তাহাজ্জুদের নামায আদায়ের ফাঁকে ফাঁকে বা শেষে নিজের গুনাহ মাফের জন্য তাওবা করলে চোখের পানির বৃষ্টিতে মনের আকাশে জমাট গুনাহর মেঘ কেটে যায় এবং ঈমানের সূর্য আগের চেয়েও উজ্জ্বল হয়। আল্লাহর দরবারে কাঁদতে পারার স্বাদই আলাদা। তাওবার পর মনিবের কাছে চাওয়ার পালা। দ্বীন ও দুনিয়া এবং আখিরাতের সবকিছুই চাইতে হবে।

বিশেষ করে মাবুদের নিকট গোলাম হিসাবে স্বীকৃতি দাবী করে কাঁদতে আরও মজা লাগে।

৩. রমযানের রোযা, প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ এ তিন দিনের রোযা, শাওয়াল মাসে এ তিনটি ছাড়া আরও তিনটি রোযা, আশুরার দুটো এবং আরাফার দিনের রোযা সারা বছর রোযাদারকে নাফসের উপর নিয়ন্ত্রণের যোগ্য বানায়।

৪. সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ রাখাঃ এর জন্য রাসূল (সা) যে সহজ পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন তা হলো প্রত্যেক অবস্থায় এর উপযোগী দোয়া পড়া। রাসূল (সা) এর শেখানো আরবী দোয়া অর্থসহ শিখতে পারলে তো কোন কথাই নেই। অন্ততঃ দোয়ার অর্থটুকু মনে জাগরুক রাখা দরকার। ঘুমানোর আগে ও ঘুম থেকে জাগার সময়, টয়লেটে যাবার ও ফিরে আসার সময়, অযুর শুরু ও শেষে, খাওয়ার শুরু ও শেষে, বাড়ি থেকে বের হবার ও বাড়িতে ফিরে আসার সময়, বাজারে চলার সময়, যানবাহনে উঠার ও নামার সময় ইত্যাদি সর্বাবস্থায়ই রাসূল (সা) দোআ পড়তেন।

৫. রাসূল (সা) মনকে সব সময় আল্লাহর যিকরে (স্মরণ ) মশগুল রাখার উপায় হিসাবে জিহ্বাকেও যিকরে ব্যস্ত রাখার উপদেশ দিয়েছেন। যখনি ইতিবাচক চিন্তা -ভাবনা থেকে মনটা খালি হয়ে যায় তখনি তিন তসবীহ, কালেমা তাইয়্যেবা, দরূদ ইত্যাদি মুখে জারি রাখার সাথে সাথে মনে ও সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এভাবে মনকে সব সময় কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখতে হবে। শয়তান থেকে মনকে বাঁচানোর জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url