Ad

কুরআন,পঠন ভঙ্গির পার্থক্যের কারনে অর্থের কোন পার্থক্য হয় না।

 

পঠন ভঙ্গির পার্থক্যের কারনে অর্থের কোন পার্থক্য হয় না

 

আরবী***

 

৭০। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- জিব্রাঈল ( আঃ ) প্রথমে আমাকে এক রীতিতে কুরআন পড়িয়েছেন। অতপর আমি তাঁর কাছে বার বার দাবী তুললাম যে, কুরআন মাজীদ ভিন্ন রীতিতেও পাঠ করার অনুমতি দেয়া হোক। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন এবং তা সংখ্যায় সাতরীতি পর্যন্ত পৌছাল। অধঃস্তন রাবী ইবনে শুহাব যুহরী বলেন, যে সাত হরফে ( রীতি ) কুরআন পাঠ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে—তা সংখ্যায় সাত হওয়া সত্ত্বেও যেন একটি রীতিরই বিকল্প ব্যবস্থা ছিল। এই একাধিক রীতিতে কুরআন পাঠ করলে ( কথা একই থাকে) হালাল-- হারামের মধ্যে পরিবর্তন সূচীত হয় না। ------- ( সহীহ বুখারী ও মুসলিম )

 

  সাত রীতিতে কুরআন পড়ার ব্যাখ্যা ইতিপূর্বেই করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিরলস প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে যখন ইসলামী সমাজ এবং রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়ে উঠলো, তখন এই সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব সমূহের মধ্যে একটি ছিল জনগণকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। কেননা মুসলমান এবং জাহেলিয়াত দুটি জিনিসের একই দর্পণ হতে পারে না। প্রাথমিক অবস্থায় ইসলামী রাষ্ট্র জনগণকে মৌখিক পদ্ধতিতে দীনের শিক্ষা দান করেছে। কিন্তু এর সাথে সাথে গোটা জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত ছিল। সুতরাং খেলাফতে রাশেদার যুগে এতো ব্যাপক আকারে শিক্ষা সম্প্রসারনের কাজ চলে যে, একটি তথ্যের ভিত্তিতে সে সময় শতকরা একশো জন লোকই অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিলো। লোকেরা যেন কুরআন পড়তে সক্ষম হয়ে যায় এই লক্ষ্য সামনে থাকায় এরূপ ফল সম্ভব হয়েছিলো। অর্থাৎ মুসলমানদের দৃষ্টিতে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হওয়ার সর্বপ্রথম গুরুত্ব এই ছিল না যে, লোকেরা যেন দুনিয়াবী ব্যাপারসমূহ লিখন ও পঠনে পারদর্শী হয়ে যাক। এতো কেবল একটা কর্মগত সুবিধা। আসল ফায়দা এই যে, লোকেরা কুরআন পড়ার যোগ্য হয়ে যায়। যখন তারা কুরআন পড়ার যোগ্য হবে না এবং সরাসরি জানতে পারবে না যে, তাঁর প্রতিপালক তাঁর উপর কি কি দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তাঁকে কোন পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন এবং সে পরীক্ষায় তাঁর সফল হওয়ারই বা পথ কি, আর বিফল হওয়ার কারন সমূহই বা কি—ততক্ষন তারা একজন মুসলমানের মতো জীবন যাপন করার যোগ্য হতে পারবে না। এ জন্য জনগণকে শিক্ষিত করে তোলার ব্যবস্থা ইসলামী সমাজে মৌলিক গুরুত্বের দাবীদার। ইসলামী খেলাফত এই কাজকে নিজের মৌলিক কর্তব্য বিবেচনা করেই আঞ্জাম দিয়েছে। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাথমিক যুগেই মদিনায় শিক্ষা সম্প্রসারনের কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। বদরের যুদ্ধের ঘটনায় জানা যায়, যখন কুরাইশ গোত্রের লোক বন্দী হয়ে আসলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের বললেন- তোমাদের মধ্যে যে লেখাপড়া জানে সে এখানে এতজন বালককে লেখাপড়া শেখাবে। তাহলে কোনরূপ বিনিময় ব্যতিরেকে তাঁকে মুক্ত করে দেয়া হবে। এ থেকেই অনুমান করা যায়, স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামের দৃষ্টিতে লোকদেরকে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করে তোলা কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

 

জনগণকে যখন শিক্ষিত করে গড়ে তোলা সম্ভব হল এবং তারা লেখাপড়ার উপযুক্ত হয়ে গেলো, এরপর বিভিন্ন আঞ্চলিক উচ্চারনে কুরআন পড়ার অনুমতি রহিত করে দেয়া হল এবং শুধু কুরাইশদের ভাষার প্রচলন অবশিষ্ট রাখা হয়। কেননা কুরআন মাজীদ কুরাইশদের আঞ্চলিক ভাষায় নাযিল হয়েছিলো। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরও মাতৃভাষা ছিল। তাঁর নিয়ম ছিল, যখনই কুরআন মাজীদ নাযিল হতো, তখন প্রথম অবসরেই তিনি কোন লেখাপড়া জানা সাহাবীকে ডেকে তা শিখিয়ে দিতেন। এখানে বলা প্রয়োজন যে, কুরাইশদের মধ্যে প্রচলিত বাক্যরীতি ছাড়াও প্রথম দিকে আরবের অপরাপর এলাকার বাক্যরীতি অনুযায়ী কুরআন পাঠ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিলো। পরবর্তীকালে এই অনুমতি রহিত করে দেয়া হয়। আর প্রথম থেকেই কুরআন মাজীদ কুরাইশদের মধ্যে প্রচলিত অভিধান অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url