Ad

জ্ঞানের উৎস কী কী?

 

জ্ঞানের উৎস কী কী?

 

জ্ঞানের উৎস চারটি। যথা

 

১. ইন্দ্রিয়ঃ চক্ষু কর্ণ নাসিকা জিহ্বা ও ত্বকের সাহায্যে মানুষ জন্মের পর থেকেই জ্ঞান আহরণ করতে থাকে। এ জ্ঞান সরাসরি প্রত্যক্ষ পদ্ধতি তে অর্জিত হয়। এসব হাতিয়ার ও জানার বিষয়ের মাঝখানে আর কোনো মাধ্যম নেই। এ চারটি যন্ত্রের এক একটি দ্বারা বিশেষ ধরনের বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা যায়। এক যন্ত্র দিয়ে অপর যন্ত্রের উপযোগী বিষয় জানা যায় না। গন্ধের জ্ঞান শুধু নাক দিয়েই হাসিল করা যায়। অন্য চারটি যন্ত্রের সাহায্য তা জানার উপায় নেই। ইংরেজিতে এ সবকে ++++++ বলা হয়।

 

২. বুদ্ধিঃ আরবীতে আকল। মানুষ বুদ্ধির মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জ্ঞান আহরণ করে থাকে। জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণের জন্য বুদ্ধি ই সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। ইন্দ্রিয় দ্বারা যতটুকু জানা যায় এরপর বুদ্ধিই মানুষকে জ্ঞানের ময়দানে আরও এগিয়ে দেয়।

 

চোখ দিয়ে কোথাও ধোয়া দেখা গেল। বুদ্ধি বলে উঠলো আগুন লেগেছে। চোখ কিন্তু আগুন তখনো দেখেনি । বুদ্ধি জানে যে আগুন লাগলেই ধোয়া হয়। কার্যকারণের যুক্তি বুঝবার ও বিশ্লেষণ করার শক্তিকেই বুদ্ধি বলে। এ শক্তি বলেই মানুষ জ্ঞানের মহাসমুদ্র থেকে জ্ঞান ভান্ডার আহরণ করে। গবেষণা ও জ্ঞান সাধনার প্রধান হাতিয়ার বুদ্ধি। এ শক্তি বলেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মানুষ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সৃষ্টিজগৎ কে জানা এবং তাকে লাগাবার যোগ্যতা অর্জন করা বুদ্ধির সাহায্যেই সম্ভব হয়।

 

৩. ইলহামঃ এটা বুদ্ধির ঊর্ধ্বের এক বিশেষ উৎস। যারা যে বিষয়েই চিন্তা ভাবনা গবেষণা ও সাধনায় গভীরভাবে আত্মনিয়োগ করেন, কখনো কখনো হঠাৎ কোনো জ্ঞান তাদের বুদ্ধির নিকট এসে ধরা দেয়। হয়তো দীর্ঘদিন বুদ্ধির প্রয়োগ করেও কোনো তত্ত্ব আয়ত্ত করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না হঠাৎ ঐ তত্ত্বটি তার জ্ঞানে এসে গেল। এ ধরনের জ্ঞানকেই ইলহামী জ্ঞান বলাহয়। এর বাংলা পরিভাষা প্রজ্ঞা হতে পারে। ইংরেজিতে +++অর্থ অভিধানে যা পাওয়া যায় তা হলো ===অর্থাৎ যুক্তি ছাড়াই হাঠাৎ মনে কোনো ধারণা সুষ্টি হওয়া। আরবীতে ইলহাম শব্দটি আরও স্পষ্ট। বুদ্ধি শক্তি প্রয়োগ করেও যে তত্ত্বটির নাগাল পাওয়া গেল না হঠাৎ তা বুদ্ধির আওতায় এসে গেল। তাই আমরা জ্ঞানের এ উৎসটিকে ইলহাম বলেই উল্লেখ করা যাথর্থ মনে করি। বাংলায় এর অনুবাদের প্রয়োজন নেই।

 

এটা অবশ্যই সত্য যে যারা জ্ঞান সাধনায় লিপ্ত ইলহামী জ্ঞান তাদেরই আয়ত্তে আসে যদিও ঐ জ্ঞানটি সাধনার সরাসরি ফসল নয়।

 

এ জাতীয় জ্ঞানের কয়েকটি উদাহরণ

 

ক. ইমাম আবূ হানীফা (র) কুরআন ও হাদীস গবেষণ করে বাস্তব জীবনে পালন করার উদ্দেশ্য ইজতিহাদ করে মাসআলা মাসায়েল বের করেছেন। কোনো সময় এমন ঘটনা ঘটেছে যে দীর্ঘ সময় চিন্তা গবেষণা করেও যে মাসআলাটির মীমাংসা করতে পারেননি তা এক সময় হঠাৎ তার মনে ধরা দিল। সকল মুজাতাহিদের জীবনেই হয়তো এমন ঘটনা ঘটে।

 

খ. আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবে গণ্য মহাবিজ্ঞানী নিউটনের জীবনের একটা ছোট্র ঘটনা উল্লেখ করছি। তিনি আপেলের বাগানে বসে আছেন। তার সামনেই গাছ থেকে একটা আপেল মাটিতে খসে পড়লো। জীবনে বহুবার ই এমন দৃশ্য তিনি দেখেছেন। কিন্তু হঠাৎ সেদিন তার মনে এ প্রশ্ন বিরাট হয়ে দেখা দিল যে আপেলটি উপরে বা ডানে বায়ে না যেয়ে সোজা মাটির দিকে কেন আসল? চারদিকেই তো শূন্যতা বিরাজ করছে। কোনো দিকে না যেয়ে শুধু নিচের দিকে কেন এলো? তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি হলো যে নিশ্চয়ই এমন কোনো শক্তি রয়েছে যা আপেলটিকে মাটির দিকে টেনে এনেছে। এই হাইপথেসিস এর উপর চালিয়ে শেষ পযর্ন্ত তিনি বিখ্যাত মতবাদ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করেন।

 

গ. গ্রীক বিজ্ঞানী আকিমেডিসের ঘটনা। বিজ্ঞানের একটি সূত্র তালাশ করে না পেয়ে তিনি রীতিমতো বিষণ্ণ ও বিমর্ষ অবস্থায় পানির টবে গোসল করছিলেন। যারা পানি ভর্তি টবে গোসল করে তারা উলঙ্গ অবস্থায়ই পানিতে নাক জাগিয়ে শুয়ে থাকে। তিনিও ঐ অবস্থায়ই ছিলেন। হঠাৎ ঐ সূত্রটি তার জ্ঞানে এসে ধরা দিল। সাফল্যের আনন্দে তিনি টব থেকে নেমে ইউরেকা ইউরেকা (পেয়েছে, পেয়েছি) বলে চিৎকার করে উঠলেন। বস্ত্রহীন অবস্থায়ই তিনি বাথরুম থেকে বের হয়ে গেলেন। খুশির আতিশয্যে গায়ে জামা পরার হুশ ও রইল না।

 

৪. ওহীঃ জ্ঞানের এ মহা উৎসটি কোনো মানুষের আয়ত্তে নেই। আল্লহ তাআলা যাকে নবী রাসূল নিয়োগ করেন তার নিকটই তিনি বিশেষ পদ্ধতিতে ওহীর জ্ঞান পরিবেশন করেন। এজ্ঞান নবী রাসূলের চেষ্টা সাধনার ফসল নয়। সরাসরি তা আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা লাভ করেন।

 

হদীস থেকে জানা যায় যে কিভাবে রাসূল (সা) এর নিকট ওহীর জ্ঞান পৌছতো। কয়েক পদ্ধতি তে ওহী লাভ করতেন।

 

ক. স্বপ্নযোগে ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি জ্ঞান লাভ করতেন।

 

খ. কোনো কোনো সময় ঘণ্টার আওয়াজ শুনতে পেতেন। তখন তিনি স্থির হয়ে থাকতেন এবং ওহী লাভ করতেন। এ পদ্ধতিটি তার জন্য বেশ কষ্টকর হতো। তিনি প্রচন্ড চাপ বোধ করতেন। শীতের সময়ও তার চেহারা মুবারক থেকে ঘামের ফোটা টপকে পড়তো। উটের পিঠে বসা থাকলে চাপের কারণে উট মাটিতে বসে পড়তে বাধ্য হতো।

 

গ. কখনো কখনো হযরত জিবরাঈল (আ) মানুষের আকারে এসে রাসূল (সা) কে তিলাওয়াত করে শুনিয়ে দিতেন।

 

ঘ. রাসূল (সা) এর মনে ওহীর জ্ঞান ঢেলে দেওয়া হতো।

 

দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদ্ধতিতে প্রাপ্ত জ্ঞনই ভাষাসহ নাযিল হতো এবং তা কুরআনের অংশ হিসেবে গণ্য হতো। এ প্রকারের ওহীকে ওহী মাতলূ বলা হয় যা তিলাওয়াত করা হয়।

 

প্রথম ও চতুর্থ পদ্ধতিতে যে ওহী আসতো তাতে রাসূল (সা) এর মনে আল্লাহর পক্ষ থেকে ভাবের আকারে জ্ঞান দেওয়া হতো। কুরআনের আয়াতের মতো ভাষায় নাযিল হতো না। রাসূল (সা) আল্লাহর দেওয়া ঐ সব ভাবকে নিজের ভাষায় প্রকাশ করতেন। এসব জ্ঞানই হাদীস হিসেবে পরিচিত। এ ওহী হলো গাইরি মাতলূ যা কুরআনের মতো তিলাওয়াত করার জন্য নয়।

 

ওহীর জ্ঞান অত্যন্ত ব্যাপক। কুরআনের বাইরে ওহীর জ্ঞানের বিরাটা ভাণ্ডার রয়েছে। রাসূল (সাঃ) যা বলেছেন যা করেছেন ও সাহাবায়ে কেরামের যেসব কথা ও কাজকে আপত্তিজনক বলে উল্লেখ করেননি তা সবই ওহীর জ্ঞানের মধ্যে শামিল।

 

কুরআনে যা আছে এর ভাব ও ভাষা সম্পূর্ণ আল্লাহর। তাই কোনো কিছু মানতে অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যায়।আর বাকি ওহীর কোনো কথা যুক্তির ভিক্তিতে গ্রহন করতে অস্বীকার করলে কাফির বলে গণ্য করা হয় না। রাসূল (সা) এর কথা কাজ ও অনুমোদনকে হাদীস বলা হয়। হাদীস থেকে মুহাদ্দিসগণ ও ফকীহগণ যা সুন্নাহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন তা কুরআনেরই বাস্তব ব্যাখা।কুরআন ও সুন্নাহ মিলেই ইসলাম। যারা সুন্নহ কে অস্বীকার করে তারা মুসলিম হিসেবে গণ্য নয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url