Ad

বর্তমান দুনিয়ায় একমাত্র মুসলমানদের কাছেই আল্লাহ তাআলার কালাম সম্পূর্ণ অবিকৃত ও অপরিবর্তিত

 

ভাববার বিষয়

বর্তমান দুনিয়ায় একমাত্র মুসলমানদের কাছেই আল্লাহ তাআলার কালাম সম্পূর্ণ অবিকৃত ও অপরিবর্তিত অবস্থায় বর্তমান আছে। কুরআনের যে শব্দ আল্লাহর নবীর প্রতি নাজিল হয়েছিল, আজ পর্যন্ত অবিকল তা-ই আছে। এ দিক দিয়ে দুনিয়ার মুসলমানগণ ভাগ্যবান জাতি, তাতে সন্দেহ নেই। আবার দুনিয়ার এ মুসলমানই একমাত্র হতভাগ্য; যাদের কাছে আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম এর আসল অবস্থায় বর্তমান থাকা সত্ত্বেও এর বরকত ও অফুরন্ত নিয়ামত হতে তারা বঞ্চিত।

কুরআন শরীফ তাদের ওপর এজন্য নাজিল হয়েছিল যে, তারা এটা পড়বে, বুঝবে, তদনুযায়ী কাজ করবে। এটা এসেছিল তাদেরকে শক্তি এবং সম্মান দান করার জন্য। এটা তাদেরকে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রকৃত ‘খলিফা’ বানাতে এসেছিল। আর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, যতদিন তারা কুরআনের হেদায়াত অনুযায়ী চলেছে, ততদিন এটা তাদেরকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ নেতা বানিয়ে রেখেছে। কিন্তু আজকাল তারা কুরআন দ্বারা জ্বিন-ভূত তাড়ান ছাড়া আর কোনো কাজই করছে না। এর আয়াত লিখে তারা গলায় বাঁধে, তা লিখে ও গুলে পানি খায়, আর শুধু পূণ্য সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে না বুঝে পাঠ করে, তারা আজ এর কাছে হিদায়াত চায় না। তাদের ধর্ম বিশ্বাস কি রকম হবে, তা তারা কুরআনের কাছে জিজ্ঞেস করে না। তাদের কাজ-কর্ম কিরূপ হওয়া উচিত, তাদের চরিত্র কিরূপ হওয়া দরকার, তারা এ দুনিয়ায় কিরূপে জীবন যাপন করবে, লেন-দেন কিভাবে করবে, কোন্ নিয়ম অনুসারে তারা মানুষের সাথে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা করবে, আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদের প্রতি এবং তাদের নিজেদের প্রতি তাদের কর্তব্য কি, আর তা কিভাবেই বা পালন করবে, দুনিয়ায় কার হুকুম মানবে আর কার হুকুম অমান্য করবে, কার সাথে সম্বন্ধ রাখা উচিত, কার সাথে নয়, তাদের মিত্র কে আর শত্রুই বা কে, কিসে তাদের সম্মান ও সফলতা হবে, কোন্ কাজে ধন-দৌলত লাভ হবে, তাদের ব্যর্থতা এবং ক্ষতিই বা কিসে হতে পারে-কুরআনের নিকট এ সমস্ত প্রশ্নের জবাব চাওয়া মুসলমানগণ এখন ছেড়ে দিয়েছে। এখন তারা কাফের, মুশরিক, গোমরাহ ও স্বার্থপর লোকদের কাছে এবং নফসরূপ শয়তানের কাছে এ সমস্ত বিষয়ে পরামর্শ চায়, আর এদের পরামর্শ অনুযায়ীই তারা কাজ করে। কাজেই আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের হুকুম অনুসারে কাজ করার যে পরিণাম হতে পারে, তাই হয়েছে। আর সেই ফলই তারা আজ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ ও এক এক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাড়ে হাড়ে ভোগ করছে।কুরআন শরীফ সমস্ত মঙ্গলের উৎস, লোকেরা যে রকমের এবং যে পরিমানের মঙ্গল এক কাছে চাবে, কুরআন তাই এবং ততটুকুই দান করবে। জ্বিন-ভূত তাড়ান, সর্দি-কাশির চিকিৎসা, মামলা-মোকদ্দমায় জয়লাভ, চাকুরী লাভ আর এ ধরনের সব ছোট ছোট ও নিকৃষ্ট জিনিস যদি তারা এর কাছে চায়, তবে তাই দান করবে। আর যদি দুনিয়ার বাদশাহী এবং সারাজাহানের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব পেতে চায়, তবে তাও তাদেরকে দেবে। এমন কি, যদি আল্লাহর আরশের কাছে পৌছতে চায়, তবে কুরআন তাদেরকে সেখান পর্যন্ত পৌছিয়ে দেবে। মূলত তা তার পাত্রের যোগ্যতার ওপরই নির্ভর করে। তারা আজ মহাসমুদ্রের কাছে হতে মাত্র দু'ফোটা পানি নিচ্ছে, অথচ সমুদ্র তাদেরকে বড় নদী দান করতে পারে।

আমাদের মুসলমান ভাইগণ আল্লাহর পাক কিতাবের সাথে যে ধরনের অসংগত ব্যবহার করে থাকে, তা এতই হাস্যকর ব্যাপার যে, এরা নিজেরা যদি দুনিয়ার কোনো কাজে অন্য কোনো লোককে সে ধরনের ব্যবহার করতে দেখতো তবে তারা বিদ্রূপ করতে ত্রুটি করতো না, বরং তারা তাকে পাগল মনে করতো। কোনো ব্যক্তি যদি ডাক্তারের কাছ হতে ঔষধের তালিকা লিখে এনে কাপড়ে জড়িয়ে গলায় বেঁধে রাখে, কিংবা পানিতে ধুয়ে তা পান করে, তবে আপনারা তাকে কি বলবেন? আপনারা কি তার কাজ দেখে হাসবেন না এবং তাকে নিতান্ত আহাম্মক মনে করবেন না? কিন্তু সবচেয়ে বড় ডাক্তার আপনাদের রোগের চিকিৎসা ও আপনাদেরকে নিরাময় করার উদ্দেশ্যে যে অতুলনীয় তালিকা লিখে দিয়েছেন, তার সাথে দিন-রাত আপনাদের চোখের সামনেই এ ধরনের ব্যবহার হচ্ছে। অথচ সেই জন্য কারো এতটুকু হাসির উদ্রেক হয় না। একথা কেউই ভেবে দেখেন না যে, ওষুধের তালিকা গলায় বাঁধার বা ধুয়ে খাবার জিনিস নয়, এর বিধান অনুযায়ী ওষুধ বানিয়ে ব্যবহার করার জন্যই তা লিখিত হয়েছে।

কোনো রুগ্ন ব্যক্তি যদি একখানা ডাক্তারী কিংবা হেকিমী বই নিয়ে পড়তে শুরু করে আর মনে করে যে, এ বইখানা পড়লে সব রোগ আপনা আপনি দূর হয়ে যাবে। তবে আপনারা তাকে কি বলবেন? আপনারা কি বলবেন না যে, তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, তাকে পাগলখানায় পাঠিয়ে দাও? কিন্তু হায়! একমাত্র মহা চিকিৎসক আল্লাহ তাআলা আপনাদের রোগের চিকিৎসার জন্য যে মহান কিতাব পাঠিয়েছেন, তার সাথে আপনাদের ব্যবহার ঠিক একই রকম হচ্ছে। আপনারা তা পড়েন আর মনে করেন যে, এটা পড়লেই সব রোগ দূর হয়ে যাবে-এর বিধান মতো কাজ করার কোনোই দরকার নেই। আর এ কিতাব যেসব জিনিসকে ক্ষতিকর মনে করে বর্জন করতে বলে তা বর্জন করারও কোনো দরকার মনে করেন না। তাহলে রোগ দূর করা জন্য যে ব্যক্তি শুধু বই পড়াই যথেষ্ট মনে করে, তার সম্পর্কে আপনারা যে মত প্রকাশ করে থাকেন, আপনাদের নিজেদের সম্পর্কে সেরূপ মত প্রকাশ করেন না কেন?

আপনি জানেন না এমন কোনো ভাষায় যদি আপনার কাছে কোনো চিঠি আসে তবে আপনি অমনি এর অর্থ জানার জন্য ঐ ভাষা যে ব্যক্তি জানে তার কাছে দৌড়ে যান। এর অর্থ যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি জানতে না পারেন, ততক্ষণ আপনার বিন্দুমাত্র শান্তি থাকে না। সাধারণ কায়-কারবারের চিঠি নিয়ে আপনি এই প্রকার অস্থির হয়ে পড়েন; এতে আপনার হয়ত দু’চার পয়সারই উপকার হতে পারে, তার বেশী নয়। কিন্তু সারাজাহানের মালিক আল্লাহর কাছ হতে যে চিঠি আপনার কাছে এসেছে, আর যার মধ্যে আপনার ইহকাল ও পরকালের সমস্ত মঙ্গল নিহিত আছে তাকে আপনি অবহেলা করে ফেলে রাখেন, এর অর্থ জানার কোনো আগ্রহ বা অস্থিরতাই আপনার মধ্যে জাগে না। এটা কি বাস্তবিকই আশ্চর্যের ব্যাপার নয়?এসব কথা আমি হাসি-তামাশার জন্য বলছি না। আপনারা যদি একথা চিন্তা করে দেখেন তবে আপনাদের অন্তরই বলে দেবে যে, দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় অবিচার হচ্ছে আল্লাহর এ মহান কিতাবের প্রতি। আর এ অবিচার শুধু তারাই করছে, যারা এ কিতাবের প্রতি ঈমান রাখে বলে দাবী করে এবং এর জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত বলে প্রচার করে। আর আল্লাহর কালামের প্রতি যুলুম করার ফল তো সকলেরই জানা আছে। খুব ভাল করে বুঝে নিন, আল্লাহর কালাম মানুষের কাছে এ জন্য আসেনি যে, এটা পেয়েও সে দুর্ভাগ্য ও দুঃখ-মুসিবতের মধ্যে পড়ে থাকবে। পবিত্র কুরআন তো সৌভাগ্য ও সার্থকতা লাভ করার একমাত্র উৎস; এটা দুর্ভাগ্য ও হীনতা লাভের কোনো কারণ হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা নিজেই বলে দিয়েছেন:

طه (١) مَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لِتَشۡقَىٰٓ (٢)

“ত্ব-হা--হে নবী! তোমার প্রতি কুরআন এ জন্য নাযিল করিনি যে, এটা সত্ত্বেও তুমি হতভাগ্য হয়ে থাকবে।” (সূরা ত্ব-হা: ১-২)

এর দ্বারা মানুষের ভাগ্য খারাপ হওয়ার এবং সকলের অপেক্ষা নিকৃষ্ট হওয়ার কোনোই আশংকা নেই। কোনো জাতির কাছে আল্লাহর কালাম বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তার লজ্জিত ও লাঞ্চিত হওয়া, পরের অধীন হওয়া, অপমানিত ও পদদলিত হওয়া, গোলামীর নাগপাশে বন্দী হওয়া, তার সমস্ত কর্তৃত্ব অপরের হাতে ন্যস্ত হওয়া এবং পরের দ্বারা জন্তু-জানোয়ারের মত বিতাড়িত ও নির্যাতিত হওয়া একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। এমন দুঃখপূর্ণ অবস্থা সেই জাতির ঠিক তখনই হতে পারে যখন তারা আল্লাহর কালামের ওপর যুলুম করতে শুরু করে। বনী ইসরাঈলের অবস্থা আপনাদের অজানা নয়। তাদের প্রতি তাওরাত ও ইনজীল নাযিল করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল:

٦٦ وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ مِنْ رَبِّهِمْ لَأَكَلُوا مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ أَرْجُلِهِمْ ۚ مِنْهُمْ أُمَّةٌ

“তাওরাত, ইনজীল এবং অন্যান্য যেসব কিতাব তাদের প্রতি নাজিল করা হয়েছিল, তারা যদি তা অনুসরণ করে চলতো, তবে তাদের প্রতি আকাশ হতে রিজিক বর্ষিত হতো এবং যমীন হতে খাদ্যদ্রব্য ফুটে বের হতো।” (মায়েদা: ৬৬)

কিন্তু তারা আল্লাহ তাআলার এসব কালামের প্রতি যুলুম করেছিল, আর তার ফলে:

وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَاءُوا بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ ۗ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۗ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ

“লাঞ্ছনা এবং পরমুখাপেক্ষিতা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং আল্লাহর গযবে তারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছিল। এর কারণ এই যে, তারা আল্লাহর বাণীকে অমান্য করতে শুরু করেছিল, আর পয়গাম্বরগণকে অকারণে হত্যা করেছিল। তাছাড়া আরও কারণ এই যে, তারা আল্লাহর অবাধ্য হয়েছিল এবং তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা যে সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, তা তারা অতিক্রম করে গিয়েছিল।” (সূরা বাকারা: ৬১)

অতএব, যে জাতি আল্লাহর কিতাব ধারণ করে থাকা সত্ত্বেও দুনিয়ায় লাঞ্ছিত, পদদলিত এবং পরের অধীন ও পরের তুলনায় শক্তিহীন হয়, নিঃসন্দেহে মনে করবেন যে, তারা নিশ্চয়ই আল্লাহর কালামের ওপর যুলুম করছে। আর তাদের ওপর এই যে, দুঃখ-বিপদের তুফান আসছে, তার মূল কারণই হচ্ছে এছাড়া আর কোনো উপায় থাকতে পারে না। তারা আল্লাহর কালামের প্রতি যুলুম করা ত্যাগ করবে এবং এর ষোলআনা ‘হক’ আদায় করতে চেষ্টা করবে। আপনারা যদি এ মহাপাপ হতে ফিরে না থাকেন, আপনাদের এ হীন অবস্থার কিছুতেই পরিবর্তন হবে না। (তা আপনারা গ্রামে গ্রামে কলেজ-ই খুলুন, আপনাদের প্রত্যেকটি সন্তান গ্রাজুয়েট হোক, আর ইহুদীদের মত সুদী কারবার করে কোটিপতিই হোক না কেন, তার ফল প্রকৃতপক্ষে কিছুই নয়)।

মুসলমান কাকে বলে এবং মুসলিম শব্দের অর্থ কি, একথা প্রত্যেক মুসলমানকে সর্বপ্রথমেই জেনে নিতে হবে। কারণ মনুষ্যত্ব কাকে বলে এবং মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য কি, তা যদি মানুষের জানা না থাকে, তবে সে জানোয়ারের মতো কাজ করতে শুরু করবে- সে তার মনুষ্যত্বের মূল্য বুঝতে পারবে না। অনুরূপভাবে যদি কেউ একথা জানতে না পারে যে, মুসলমান হওয়ার অর্থ কি এবং মুসলমান ও অমুসলমানের মধ্যে কেমন করে পার্থক্য করা যায়, তবে সে তো অমুসলমানের মতো কাজ-কর্ম করতে শুরু করবে এবং তার মুসলমানীর কোনো সম্মানই সে রক্ষা করতে পারবে না। অতএব, প্রত্যেক মুসলমানকে এবং মুসলমানের প্রত্যেকটি সন্তানকেই ভালো করে জেনে নিতে হবে যে, সে যে নিজেকে নিজে মুসলমান মনে করে এ মুসলমান হওয়ার অর্থ কি? মুসলমান হওয়ার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে কি পরিবর্তন ও পার্থক্য হয়ে যায়? তার ওপর কি কর্তব্য ও দায়িত্ব এসে পড়ে? ইসলামের কোন সীমার মধ্যে থাকলে মানুষ মুসলমান থাকতে পারে এবং কোন্ সীমা অতিক্রম করলেই বা সে মুসলমানী হতে খারিজ হয়ে যায়? এসব কথা না জানলে মুখ দিয়ে সে মুসলমানীর যতই দাবী করুক না কেন, তার মুসলমান থাকা সম্ভব নয়।

ইসলাম অর্থ আল্লাহর আনুগত্য করা ও হুকুম পালন করে চলা। নিজেকে আল্লাহ তাআলার কাছে সোপর্দ করে দেয়ার নাম হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহর সম্মুখে নিজের আযাদী ও স্বাধীনতাকে স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করার নাম ইসলাম। আল্লাহর বাদশাহী এবং আনুগত্যকে মাথানত করে স্বীকার করে নেয়ার নাম ইসলাম। যে ব্যক্তি নিজের সমস্ত কাজ-কারবারকে আল্লাহর হাতে সঁপে দেয়, সেই ব্যক্তি মুসলমান। আর যে ব্যক্তি নিজের সব ব্যাপারে নিজের ইচ্ছামত সম্পন্ন করে কিংবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও হাতে তা সোপর্দ করে সে মুসলমান নয়। আল্লাহর হাতে সঁপে দেয়ার তাৎপর্য এই যে, তিনি তাঁর কিতাব এবং তাঁর নবীর মারফত যে হেদায়াত ও সৎপথের বিধান পাঠিয়েছেন, মানুষ তাকে পুরোপুরি কবুল করবে এবং তাতে বিন্দুমাত্র আপত্তি করতে পারবে না। জীবনের প্রত্যেকটি ব্যাপারে এবং কাজে শুধু পবিত্র কুরআন হাদীসের নিয়ম অনুসরণ করে চলবে। যে ব্যক্তি নিজের বুদ্ধি, দুনিয়ার প্রথা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সকলকেই-সবকিছু পশ্চাতে ফেলে রেখে এবং প্রত্যেক ব্যাপারেই কেবল আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদীসের কাছে পথের সন্ধান জানতে চায়-জিজ্ঞেস করে যে, আমার কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয়, আর সেখান হতে যে নিয়মই পাওয়া যাক না কেন বিনা আপত্তিতে তা মেনে নেয়, তার বিপরীত যা তা সবই সে অস্বীকার করে শুধু সেই ব্যক্তি মুসলমান। কারণ সে তো নিজেকে আল্লাহর কাছে একেবারে সঁপে দিয়েছে। আর এভাবে আল্লাহর হাতে নিজেকে সঁপে দিলেই মানুষ মুসলমান হতে পারে। এর বিপরীত- যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন ও হাদীসের ওপর মোটেই নির্ভর করে না, বরং নিজের মন যা বলে তাই করে, কিংবা বাপ-দাদা হতে চলে আসা নিয়ম-কানুনের অনুসরণ করে চলে, কিংবা দুনিয়ায় যা কিছু হচ্ছে সে-ও তাই করে, নিজের কোনো ব্যাপারেই সে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের বিধান জেনে সে বলে ওঠে যে, আমার বুদ্ধি তা গ্রহণ করতে চায় না, তাই আমি তা মানি না, অথবা বাপ-দাদার কাল হতে তার উল্টা নিয়ম চলে আসছে কাজেই তার অনুসরণ করব না; কিংবা দুনিয়ার নিয়ম তার বিপরীত, তাই আমি সেই নিয়ম অনুসারেই চলবো-তবে সেই ব্যক্তি কিছুতেই মুসলমান নয়। যদি সে নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেয়, তবে সে মিথ্যাবাদী সন্দেহ নেই।

আপনি যখন কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলল্লাহ’ পড়েন এবং মুসলমান হওয়ার কথা স্বীকার করেন, তখন আপনি তার মধ্য দিয়ে একথাও স্বীকার করে থাকেন যে, আপনার আল্লাহর আইন আপনার জন্য একমাত্র আইন; আল্লাহ তাআলাই আপনার প্রভু ও আদেশ কর্তা। তখন আপনার শুধু আল্লাহরই আনুগত্য করতে হবে। আপনার কাছে শুধু সেই বিধানই সত্য বিধানরূপে স্বীকৃতি পাবে যা আল্লাহর কিতাব এবং তার রাসূলের সাহায্যে পাওয়া যায়। এর অর্থ এই যে,আপনি মুসলমান হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর সামনে নিজের আযাদী বিসর্জন দিয়েছেন।

অতপর আপনার নিজের স্বতন্ত্র মত বলতে কিছুই থাকতে পারে না, দুনিয়ার বিভিন্ন প্রথা বা পারিবারিক নিয়মরীতিরও কোনোও গুরুত্ব থাকতে পারে না অথবা অমুক হযরত এবং অমুক বুজর্গ সাহেব কি বলেছেন, আল্লাহর কালাম এবং তাঁর রাসূলের সুন্নাতের মোকাবিলায় এ ধরনের কোনো কথাই আপনি এখন পেশ করতে পারেন না। আপনার প্রত্যকটি বিষয়ই পবিত্র কুরআন ও হাদীসের সামনে পেশ করাই এখন আপনার একমাত্র কাজ। যা তার অনুরূপ হবে না আপনি তা উঠিয়ে দূরে নিক্ষেপ করবেন- তা যারই প্রথা হোক না কেন। নিজেকে মুসলমান বলা এবং তারপর পবিত্র কুরআন ও হাদীসকে বাদ দিয়ে নিজের মত, দুনিয়ার প্রথা কিংবা মানুষের কোনো কথা বা কাজের অনুসরণ করা সম্পূর্ণরূপে পরস্পর বিরোধী। কোনো অন্ধ ব্যক্তি যেমন নিজেকে চোখওয়ালা বলতে পারে না, কোনো নাকহীন ব্যক্তি যেমন নিজেকে নাকওয়ালা বলতে পারে না, ঠিক তেমনি যে ব্যক্তি নিজের সমস্ত কাজ-কর্ম পবিত্র কুরআন হাদীস অনুসারে সমাধা করে না, বরং তা পরিত্যাগ করে নিজের বুদ্ধি বা দুনিয়ার প্রথা অথবা কোনো ব্যক্তি বিশেষের কথা বা কাজের অনুসরণ করে চলে- সে কিছুতেই নিজেকে মুসলমান বলতে পারে না।

কেউ যদি নিজে মুসলমান থাকতে না চায়, তবে তার মুসলমান থাকার জন্য তার ওপর জোর-জবরদস্তি করতে পারে না। যে কোনো ধর্ম গ্রহণ করা এবং যে কোনো নাম ধারণ করার স্বাধীনতা প্রত্যকটি মানুষেরই রয়েছে। কিন্তু কোনো মানুষ যখন নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেয়, তখন তার একথা খুব ভালো করেই বুঝে নেয়া উচিৎ যে, সে ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলমান থাকতে পারে, যতক্ষণ সে ইসলামের সীমার মধ্যে থাকবে। আল্লাহর কালাম এবং তাঁর রাসূলের হাদীসকে সত্য ও মঙ্গলের একমাত্র মাপকাঠিরূপে গ্রহণ করা এবং তার এর বিরোধী প্রত্যেকটি জিনিসকে বাতিল ও মিথ্যা মনে করাই হচ্ছে ইসলামের সীমা। এ সীমার মধ্যে যে থাকবে সে মুসলমান; এটা যে লংঘন করবে সে ইসলাম হতে বিচ্যূত-বহির্ভূত হয়ে পড়বে। তার পরেও সে যদি নিজেকে মুসলমান বলে মনে করে এবং মুসলমান বলে দাবী করে। তারপরও সে যদি নিজেকেও ধোঁকা দিচ্ছে আর দুনিয়াকেও ধোঁকা দিচ্ছে সন্দেহ নেই।

وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ

“যে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না সে কাফের।” -(সূরা আল মায়েদা: ৪৪)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url