Ad

মুখ ও মনকে একসাথে কাজ লাগাবেন কিভাবে।

 

মুখ ও মনকে একসাথে কাজ দিতে হবে

এ তিক্ত অভিজ্ঞতা সবারই আছে যে নামায পড়া, তাসবীহ জপা এবং যিকর করার সময় মুখে ঠিকই উচ্চারণ করা হচ্ছে, কিন্তু মনে অন্য কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। দেহ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে সূরা পড়ছে আর মন কোথায় ছোটাছুটি করছে। মুখে তসবীহ উচ্চারণ করা হচ্ছে এবং হাতের আঙ্গুলও তসবীহ দানা টেনে নিচ্ছে বটে কিন্তু মন অন্য বিষয় ভেবে চলেছে।

অথচ বক্তৃতা করার সময় মুখ যা বলছে মনও তা-ই বলছে। বই পড়ার সময় মুখ ও মন একসাথেই চলে। কারো বক্তৃতা বা কথা শোনার সময় মন দিয়েই শোনা হয়। এই যে এখন আমি লিখছি মন দিয়েই লিখছি। মন যা লিখতে বলছে তাই লিখছি। এ সব ব্যাপারে মনোযোগ ঠিকই থাকে। কিন্তু নামায, তসবীহ, যিকরের বেলায় মন বিয়োগ হয়ে যায় কেন?

এটা আমাদের শিক্ষার ত্রুটি। নামাযে যা যা মুখে পড়তে হয় তা শেখানোর সময় মনে কী ভাবতে হবে সে কথা শেখান হয় না। মুখে যা পড়া হয় এর অর্থ জানা থাকা সত্ত্বেও মনোযোগের অভাব হতে পারে ঐ শিক্ষার ত্রুটির কারণে। তেমনি তসবীহ ও যিকরের ব্যাপার। মুখ ও মনকে একই সাথে চলতে হবে। মুখে যা উচ্চারণ করা হচ্ছে মনে এর ভাব জাগরুক থাকতে হবে। নইলে নামায, তসবীহ, ও যিকর প্রাণহীন হয়ে থাকবে। মৃত নামায দ্বারা উপরে বর্ণিত শিক্ষা লাভ হতে পারে না।

মুখে যা উচ্চারণ করা হয় তা মনকে দিয়েও বলাবার পদ্ধতি সম্পর্কে একটু আলোচনা প্রয়োজন। মুখে যা পড়া হয় এর অর্থের দিকে খেয়াল রাখলে মনে অন্য ভাব জাগার পথ পায়না। কিন্তু এ খেয়াল স্থায়ী রাখা কঠিন। এর জন্য মনের আবেগ যোগ হওয়া বিশেষ জরুরি। রাসূল (সা.) ইবাদতের সময় ইহসান এর যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাই আবেগের ভিত্তি। তিনি ইহসানের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, এমনভাবে ইবাদত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ। যদি এমনটা নাও পার, তাহলে অন্তত খেয়াল কর যে, তিনি তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন।

এ আবেগ সৃষ্টির প্রয়োজনেই নামাযের শুরুতে তাওয়াজ্জুহ (ইন্নি অজ্জাহাতু… মুশরিকীন ) পড়া হয়। পড়ার সময় মনে এ ভাব জাগ্রত করতে হবে যে, আমার মা’বুদ আমার সামনেই হাজির আছেন। সিজদায় মুখে যখন বলা হয় ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ তখন এর অর্থের দিকে খেয়াল করলে আবেগ সৃষ্টি হবে যে, আমি তো আমার মহান রবের কোলেই আশ্রয় পেলাম। এভাবে নামাযের প্রতিটি অংশে আবেগ যুক্ত হলে মন নামাযের বাইরে ছুটাছুটি করার ফুরসতই পাবে না।

এমন নামাযই জীবন্ত। জীবন্ত নামাযই মুমিনের জীবনকে গড়ার যোগ্যতা রাখে। শুধু অনুষ্ঠান হিসেবে নামায আদায় করা হলে তা দ্বারা নামাযের কোন উপকারই পাওয়া সম্ভব নয়। অনেকের জীবনে এ কারণেই নামাযের উদ্দেশ্য সফল হতে দেখা যায় না। রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক নেক আমলের কমপক্ষে ১০ গুণ এবং বেশির পক্ষে ৭০০ গুণ বদলা দেবেন। একই জামায়াতে নামায আদায় করেও কেউ ১০, কেউ ৫০, কেউ ১০০, কেউ ৭০০ পাওয়ার কারণ কী? একই কাজের মজুরী এত বেশ-কম করে কেন দেওয়া হবে? নামাযে কে কতটা মনকে হাজির রাখতে সক্ষম হলো, কার জযবা ও আবেগ কী পরিমাণ ছিল,কে কতটা মহব্বতের সাথে মনিবের নিকট নিজেকে সমর্পণ করল ইত্যাদির তারতম্যের ভিত্তিতে পুরস্কারের পরিমাণ কম বেশি হবে।

নামায, তসবীহ ও যিকরের ব্যাপারে কমপক্ষে এতটুকু চেষ্টা করতে হবে যে, মুখে যখন উচ্চারণ করা হয়, তখন যেন তা মনের অগোচরে না হয়। মনের দিকে খেয়াল রেখেই মুখে পড়তে হবে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে, বুকের বাম পাশে যেখানে হার্ট বা হৃদপিন্ড থাকে সেদিকে খেয়াল রেখে ধীরে ধীরে মুখে পড়তে থাকলে মনকে নামাযের মধ্যেই আটক রাখা সহজ হয়। এ দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে মনকে নামাযের বাইরে যেতে দেব না। আমার এ অভিজ্ঞার ভিত্তি হলো সুফী সাধকদের ‘কালবী যিকর’ সম্পর্কে ধারণা। তাঁরা কালবের অবস্থান বুকের বামদিকেই নির্ধারণ করেন। মুখে যেমন আল্লাহ উচ্চারণ করা হয় তেমনি তারা কালবেও তা উচ্চারণ করা অনুশীলন করে থাকেন। এমনকি সেখান থেকে এ উচ্চারণের আওয়াজও বের হয়। এটা তো দীর্ঘ অনুশীলনের বিষয়। রাসূল (সা) সাহাবায়ে কেরামকে এ অনুশীলনের শিক্ষা দিয়েছেন বলে আমি এখনও জানতে পারিনি। কিন্তু কালবে উচ্চারণ না করেও কালবের দিকে খেয়াল রেখে মুখে উচ্চারণ করলে যে একাগ্রতা সৃষ্টি হয় এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। এ খেয়াল যত গভীর হয় মনোযোগ ততই মযবুত হয়। গভীর মনোযোগকেই সুফীগণ মুরাকাবাহ বলেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url