Ad

ইসলামের অনুসরণ করিদের বাস্তব জীবনে মুনাফিকী নীতি পরিত্যাগ করার আহবান।

 

মুনাফিকীর মূলকথা

 

দ্বিতীয়তঃ আমরা এই দাওয়াতও দেই যে, যাহারা ইসলামের অনুসরণ করিয়া চলার দাবী করে, কিংবা যাহারা ইসলাম গ্রহণ করিয়াছে, তাহারা যেন বাস্তব জীবনে মুনাফিকী নীতি পরিত্যাগ করে এবং নিজেদের জীবনকে যেন আভ্যন্তরীণ বৈষম্য ও কর্মীয় বৈষম্য (Inconsistencies) হইতে পবিত্র রাখে। ‘মুনাফিকী নীতি’ বলিতে বুঝায় সেই অবস্হাকে, যখন মানুষ নিজের ঈমান ও দ্বীন এর সম্পূর্ণ বিপরীত ধরনের জীবন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করিতে আদৌ চেষ্টা করে না বরং সাম্প্রতিক ফাসিকী ও খোদাদ্রোহীমূলক জীবন ব্যবস্থাকে নিজের অনূকূল মনে করিয়া উহাতে নিজের মঙ্গলময় ‘ভবিষ্যত’ রচনার চিন্তায় মশগুল হয়। তাহা পরিবর্তনের চেষ্টা করিলেও তাহার উদ্দেশ্য ফাসিকী জীবন-ব্যবস্থার পরিবর্তন করিয়া দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করা নহে, বরং এক ধরনের ফাসিকী রাস্ট্র-ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করাই তাহার উদ্দেশ্য হইয়া থাকে। 

আমাদের মতে এই কর্মণীতি সম্পূর্ণ মুনাফিকী কর্মনীতি ছাড়া আর কিছুই নহে। কারণ এক প্রকার জিবন-ব্যবস্থার প্রতি ঈমান রাখা এবং কার্যত উহার বিপরীত ধরণের জীবন-ব্যবস্হার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা সুস্পষ্টরূপে পরস্পর বিরোধি ব্যাপার। নিষ্ঠাপূর্ণ ঈমানের পরিচয় এই যে, যে জীবন ব্যবস্হার প্রতি ঈমান আনা হইবে উহাকেই বাস্তব জীবনের বিধান ও আইন হিসাবে চালু করিতে হইবে এবং এই জীবন ব্যবস্হা অনুযায়ী বাস্তব জীবন যাপনের পথে যত বাধা প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন, উহার প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আমাদের প্রাণ কাতর ও ব্যাকুল হইয়া উঠিবে। প্রকৃত ঈমান উহার বিকাশ পথেই এই ধরনের সামান্যতম বাধা বরদাশত করিতেও প্রস্তুত হয় না। আর সমগ্র দ্বীনকে বিপরীত ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্হার অধীন থাকিতে দেখার এবং তাহা সহ্য করার তো কোন প্রশ্নই উঠিতে পারে না। কারণ, এই অবস্থায় তাহার দ্বীন এর কোন অংশেরই বাস্তবায়ন সম্ভব নহে।

 কোন কোন দেশে বিজয়ী ও প্রতিষ্ঠিত জীবন ব্যবস্হা ইসলামের বিশেষ কয়েকটি অংশকে অক্ষতিকর মনে করিয়া অনুগ্রহ স্বরূপ চলিতে দেয় বটে, কিন্তু মানব জীবনের অন্যান্য সমগ্র ব্যাপারই দ্বীন-ইসলামের বিপরিত নিয়ম-নীতি অনুযায়ী চলিয়া থাকে। এই অবস্হায় ও সেখানে ঈমানের কোনই ক্ষতি হয় না বলিয়া যাহারা মনে করে, তাহাদের ভ্রান্তি সুস্পষ্ট। সেখানে কাফিরী ব্যবস্হাকে এক স্হায়ী নিয়তি মনে করিয়াই অন্যান্য কাজ সম্পর্কে চিন্তা করা হয়। ফিকাহ শাস্ত্রের বাহ্যিক দৃষ্টিতে এই ধরনের ঈমানের যত মূলই হোক না কেন, কিন্তু দ্বীন-ইসলামের দৃষ্টিতে প্রকৃত মুনাফিকী ও এই ধরনের ঈমানের মধ্যে কোন পাথর্ক্য নাই। কুরআনের অসংখ্য আয়াতও ইহাকে মুনাফিকী বলিয়াই অভিহিত ও প্রমাণিত করে। পূর্বোক্ত অর্থ অনুযায়ী যাহারাই খোদার বন্দেগী কবুল করার প্রতিশ্রুতি দিবে, তাহাদের সকলেরই জীবনকে এইরূপ মুনাফিকী হইতে পবিত্র করিয়া তোলাই হইল আমাদের এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য; খোদার বন্দেগীর সঠিক ধারনা অনুযায়ী ঐকান্তিক নিষ্ঠার সহিতই অবিশ্রান্তভাবে আমাদের এই চেষ্টা চালাইয়া যাইতে হইবে। 

কারণ আমরা চূড়ান্তভাবে এই সিদ্ধান্ত করিয়াছি যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁহার নবীদের মারফতে যে জীবন পদ্ধতি, আইন-কানুন এবং তামাদ্দুন, নৈতিক চরিত্র, সমাজ, রাজনীতি, অথর্নীতি এবং চিন্তা ও কর্মের যে বিধান প্রেরণ করিয়াছেন, আমরা আমাদের পরিপূর্ণ জীবনে তাহাই অনুসরণ করিয়া চলিব এবং এক মুহুর্তের জন্য জীবনের কোন একটি কাজকেও- কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যপারেও- খোদার দেওয়া সত্য জীবন বিধানের পরিবর্তে অপর কোন আদর্শ ও নীতির বিন্দুমাত্র প্রভাবও স্বীকার করিব না। বাতিল জীবন ব্যবস্হার সামান্য ব্যাপারে, সেখানে উহাতে সন্তুষ্ট হওয়া, উহার প্রতিষ্টা ও স্হিতির চেষ্টায় অংশগ্রহণ করা কিংবা এক প্রকারের বাতিল ব্যবস্হার পরিবর্তে অন্য এক প্রকারের বাতিল বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করিতে চেষ্টা করা যে প্রকৃত ঈমানের কত বিপরীত, তাহা কাহারও অজ্ঞাত থাকা উচিত নহে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url