Ad

নূহ (আঃ) -ও তার জাতির বর্ণনা।

 

নূহ (আঃ) -এর জাতি

কোরআন সর্বপ্রথম যে জাতির উল্লেখ করেছে, তা হচ্ছে হযরত নুহ (আঃ)-এর জাতি। কোরআনের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, এরা আল্লাহ্র অস্তিত্বে অবিশ্বাসী ছিল না- তাঁর অস্তিত্ব অস্বীকার করতো না। হযরত নুহ (আঃ) -এর দাওয়াতের জবাবে তাদের এ উক্তি স্বয়ং কোরআনই নকল করছেঃ

————————————————– এ ব্যক্তি তো তোমাদেরই মতো একজন মানুষ বৈ কিছুই নয়, মূলত সে তোমাদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চায়। তা না হলে আল্লাহ যদি কোন রাসূল প্রেরণ করতে চাইতেন তবে ফেরেশতাই পাঠাতেন।

আল্লাহ যে খালেক-স্রষ্টা, প্রথম ও দ্বিতীয় অর্থে তিনি যে রব তাও তারা অস্বীকার করতো না। হযরত নূহ (আঃ) যখন তাদেরকে বলেছিলেনঃ

——————————– তিনিই তোমাদের রব। তাঁরই নিকট তোমাদের ফিরে যেতে হবে।

——————————————– তোমাদের রব-এর নিকট ক্ষমা চাও; তিনি বড়ই ক্ষমাশীল।

———————————————————————————– তোমরা কি দেখছো না যে, আল্লাহ কিভাবে স্তরে স্তরে সপ্ত আসমান সৃষ্টি করেছেন, আর তার মধ্যে চন্দ্রকে নূর ও সূর্যকে চেরাগ করেছেন, তোমাদেরকে পয়দা করেছেন যমীন থেকে। -নূহ-১৫-১৬

তখন তাদের কেউ এমন কথা বলেনি- আল্লাহ আমাদের রব নয় অথবা আসমান-যমীন ও আমাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেন নি অথবা আসমান-যমীনের এসব ব্যবস্থাপনা তিনি পরিচালনা করছেন না।

আল্লাহ তাদের ইলাহ-একথাও অস্বীকার করতো না। এজন্যেই হযরত নূহ (আঃ) তাদের সামনে তাঁর দাওয়াত পেশ করেছেন এ ভাষায়ঃ

———— ‘তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই’;

অন্যথায় তারা যদি আল্লাহ্কে ইলাহ বলে স্বীকার না করতো- তাহলে দাওয়াতের ভাষা হতোঃ

——————- ‘তোমরা আল্লাহকে ইলাহ বলে স্বীকার করো’।

এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, তাহলে তাদের সাথে হযরত নূহ (আঃ) -এর বিরোধ ছিলো কি নিয়ে-কোন বিষয়ে? কোরআনের আয়াত সন্ধান করে জানা যায় যে, বিরোধের কারণ ছিলো দুটিঃ

একঃ হযরত নূহ (আঃ) এর শিক্ষা ছিলো এই যে, যিনি রব্বুল আলামীন, তোমরাও যাকে তোমাদের ও সমগ্র বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা বলে স্বীকার করো, যাকে তোমরা সকল প্রয়োজন পূরণকারী বলে বিশ্বাস করো, কেবল তিনিই তোমাদের ইলাহ-অন্য কেউ নয়। তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তোমাদের অভাব-অভিযোগ পূরণ করতে পারে, সংকট-সমস্যা দূর করতে পারে, দোয়া শুনতে পারে এবং সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে-এমন কোন সত্তা নেই। সুতরাং তোমরা কেবল তাঁরই সামনে মস্তক অবনত করো-তাঁকেই আনুগত্য লাভের যোগ্য বলে স্বীকার করোঃ

————– হে আমার জাতির লোকেরা! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করো; তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই। ……….. কিন্তু আমি রাব্বুল আলামীনের তরফ থেকে রাসূল। আপন রব-এর পয়গাম তোমাদের নিকট পৌছাই।-আল-আরাফ-৫৯-৬০

অপর পক্ষে তারা জিদ ধরে বসেছিলো, আল্লাহ্র ব্যবস্থাপনায় অন্যদেরও কম-বেশী দখল আছে। তাদের সাথেও আমাদের নানাবিধ প্রয়োজন জড়িত রয়েছে। সুতরাং আমরা আল্লাহ্র সাথে অন্যদেরকেও ইলাহ স্বীকার করবোঃ

————————– তাদের নেতা-কর্তারা বললো, লোক সকল!তোমাদের ইলাহকে কিছুতেই ছাড়বে না-ছাড়বে না ওয়াদ্দ, সুয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসর-কে।-নূহ-২৩

দুইঃ আল্লাহ তাদের স্রষ্টা-খালেক, আসমান-যমীনের মালিক এবং বিশ্বজাহানের প্রধান ব্যবস্থাপক-নিয়ন্ত্রক-পরিচালক – কেবল এ অর্থেই তারা আল্লাহ্কে রব স্বীকার করতো। কিন্তু তারা এ কথা স্বীকার করতো না যে, নৈতিক চরিত্র, সমাজ, তমুদ্দুন, রাজনীতি ও জীবনের সকল ব্যাপারেও সার্বভৌমত্ব ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা লাভের অধিকার একমাত্র তাঁরই, তিনিই পথ প্রদর্শক, আইন প্রণেতা, আদেশ-নিষেধের অধিকার একমাত্র তাঁরই, তিনিই পথ প্রদর্শক, আইন প্রণেতা, আদেশ-নিষেধের অধিকারী; আনুগত্যও হবে একমাত্র তাঁরই, এসব ব্যাপারে তারা নিজেদের সর্দার ও ধর্মীয় নেতাদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছিলো। পক্ষান্তরে হযরত নূহ (আঃ) -এর দাবী ছিলো-রুবুবিয়াত অবিভাজ্য, তাকে বিভক্ত ও খন্ডিত করো না। সকল অর্থে কেবল আল্লাহ্কেই রব স্বীকার করো। তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে আমি তোমাদের যেসব আইন- বিধান পৌছাই, তোমরা তা মেনে চলোঃ

————————————————- আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহ্র বিশ্বস্ত রাসূল। সুতরাং আল্লাহ্ কে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। -আশ-শোয়ারা-১০৭-১০৮

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url