Ad

ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ।

 

ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ


সুলতানি স্থাপত্যের এই ছোট সোনা মসজিদ বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পিরোজপুর গ্রামে নির্মিত। বঙ্গদেশে নির্মিত সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে এটি একটি, যে কারণে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের তাৎপর্য অনেকখানি বহন করে। সমগ্র মসজিদ মূলত পাথর, ইট, টেরাকোটা, এবং টাইলের ব্যবহার রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে খোঁদাই করা কাজই বেশি। 
গৌড়ের রত্ন ছোট সোনা মসজিদ যাত্রাপালা

মসজিদটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে শাহবাজপুর ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার, যেখানে বাস অথবা সিএনজিতে করে খুব সহজেই ৪৫ মিনিট বা ঘণ্টাখানেকের মধ্যে যাওয়া যায়। 


অবস্থান এবং ইতিহাস কথন

মসজিদের দরজার ওপর থেকে প্রাপ্ত একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় বঙ্গদেশের সুলতানি শাসনামলে সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ  এর শাসনামলে ওয়ালি মোহাম্মদ নামের এক ব্যাক্তি এই মসজিদের নির্মাণ করিয়েছিলেন। শিলালিপির একাংশ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে মসজিদের নির্মাণসাল সম্পর্কে জানা যায়নি। মসজিদটি কোতোয়ালী দরজা থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিনে। 

নামকরণ

সুলতানি আমলের নিদর্শন হওয়ার কারণে একে “সুলতানি আমলের রত্ন” এবং গৌড়ী নগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত হওয়ার কারণে একে ডাকা হয় “গৌড়ের রত্ন”। মসজিদের বাইরে ছিল সোনালি রঙের আবরণ, সূর্যের আলো গায়ে পরলে মসজিদটি স্বর্ণের মত ঝলমল করত, কালের পরিক্রমায় যেটি বর্তমানে ফিকে হয়ে গিয়েছে। 


গঠনপ্রণালী

বিশাল এক দিঘীর দক্ষিনপাড়ের পশ্চিম অংশ জুড়ে এর অবস্থান। ২০ ফুট উচ্চতার এই মসজিদ উত্তর দক্ষিনে ৮২ ফুট লম্বা এবং পূর্ব পশ্চিমে ৫২.৫ ফুট চওড়া। এর দেয়ালগুলো ইট দিয়ে তৈরি যেগুলোর ভিতরে এবং বাইরে রয়েছে পাথরের প্রলেপ। মসজিদের খিলান এবং গম্বুজগুলো ইটের তৈরি। অন্দরমহল কালো ব্যাসল্টের তৈরি ৮টি স্তম্ভে বিভক্ত। পুব দেয়ালের পাঁচটি দরজা বরাবর রয়েছে ৫টি মিহরাব, যার মধ্যে মাঝখানেরটি সবচেয়ে বড়। প্রতিটি মিহরাব অর্ধগোলাকার এবং রয়েছে পাথরের ওপর নকশার কাজ। মসজিদের ভিতরে রয়েছে ৮টি স্তম্ভ এবং দেয়ালের অপরে রয়েছে ১৫টি গম্বুজ। মাঝের মিহরাব ও পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজার মধ্যবর্তী অংশে ছাদের ওপর যে গম্বুজগুলো রয়েছে সেগুল চৌচালা গম্বুজ।  এর দুপাশের দুসারিতে ৩টি করে মোট ১২টি গম্বুজ রয়েছে, যেগুলো অর্ধবৃত্তাকার। এই রত্নমসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, বাইরের যেকোনো পাশ থেকে তাকালে মাত্র ৫টি গম্বুজ দেখা যায়, বাকি গম্বুজগুলো দৃষ্টিগোচর থাকে। 

মসজিদের কিছুদূর পশ্চিমে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক কয়েক বছর পূর্বে নির্মিত একটি আধুনিক দ্বিতল গেস্ট হাউস রয়েছে। গেস্ট হাউস ও দ্বিতল মসজিদের মধ্য দিয়ে দক্ষিনে একটি আধুনিক রাস্তা চলে গেছে যেটি দেখতে মনে হয় পুরনো আমলের কিন্তু রাস্তাটি একসময়ে কোতোয়ালী দরজা হয়ে দক্ষিনের শহরতলীর সাথে গৌড় – লখনৌতির সংজগ স্থাপন করেছিল। 

প্রধান প্রবেশ পথের উপরিভাগে স্থাপিত একটি শিলালিপি অনুযায়ী জনৈক মজলিস-ই-মাজালিস মজলিস মনসুর ওয়ালী মুহম্মদ বিন আলী কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয়। শিলালিপিতে নির্মানের সঠিক তারিখ সম্বলিত অক্ষরগুলি মুছে গেছে। তবে এতে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর নামের উল্লেখ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, মসজিদটি তার রাজত্বকালের (১৪৯৪-১৫১৯) কোন এক সময় নির্মিত। বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশের পুরাতন বিশ টাকার নোটে এই ঐতিহাসিক মসজিদটির ছবি স্থান পেয়েছিল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url