Ad

ইলাহ অর্থ কি ? রব কাকে বলে ?

 আরবে যখন কোরআন পেশ করা হয়, তখন প্রত্যেকেই জানতো ইলাহ অর্থ কি, রব কাকে বলা হয়। কারণ তাদের কথাবার্তায় এ শব্দদ্বয় পূর্ব হতে প্রচলিত ছিল।



তারা জানতো এ শব্দগুলোর অর্থ কি, কি এর তাৎপর্য। তাই তাদের যখন বলা হলো যে, আল্লাহ-ই একক রব ও ইলাহ, উলুহিয়্যাত ও রুবুবিয়্যাতে আদৌ কারো হিসসা নেই, তারা তখন ঠিক ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। স্পষ্টতই তারা বুঝতে পেরেছিল, অন্যের জন্যে কোন্ জিনিসটি নিষেধ করা হচ্ছে আর আল্লাহ্ র জন্যে কোন জিনিসটি করা হচ্ছে নিদিষ্ট। যারা বিরোধিতা করছিল, গায়রুল্লার উলুহিয়্যাত-রুবুবিয়্যাত অস্বীকৃতির আঘাত কোথায় কোথায় লাগে, তা জেনেশুনেই তারা বিরোধিতা করেছিল। এ মতবাদ গ্রহণ করে আমাদেরকে কি বর্জন করতে হবে আর কি গ্রহণ করতে হেব তা জেনেশুনেই তারা ঈমান এনেছিলো। অনুরূপভাবে ইবাদাত ও দীন শব্দও তাদের ভায়ায় প্রচালিত ছিলো পুর্ব হতে। তারা জানতো, আব্দ কাকে বলে, উবদিয়্যাত কোন্ অবস্থার নাম। ইবাদাতের উদ্দেশ্য কোন্ ধরনের আচরণ, দীনের তাৎপর্য কি? তাই তাদের যখন বলা হলো, সকলের ইবাদাত ত্যাগ করে আল্লাহ্ র ইবাদাত করো, সকল দীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর দীনে দাখিল হও, তখন কোরআনের দাওয়াত বুঝতে তাদের ভুল হয় নি। এ শিক্ষা আমাদের জীবন ব্যবস্থায় কোন্ ধরনের পরিবর্তন চায়, শোনামাত্রই তারা তা বুঝতে পেরেছিলো।

কিন্তু কোরআন অবতীর্ন হওয়ার সাময় এ শব্দগুলোর যে মৌল অর্থ প্রচালিত ছিল, পরবর্তী শতকে ধীরে ধীরে তা পরিবর্তিত হতে তাকে। শেষ পর্যন্ত এক- একটি শব্দ তার সম্পূর্ণ ব্যাপকথা হারিয়ে একান্ত সীমিত বরং অস্পষ্ট অর্থের জন্যে নিদিষ্ট হয়ে পড়ে। এর এক কারণ ছিলো আরবী ভাষার প্রতি সঠিক স্পৃহার অভাব, দ্বিতীয় কারণ ছিলো ইসলামী সমাজে যেসব ব্যক্তির উদ্ভব হয়েছে, তাদের কাছে ইলাহ, রব, দীন, ইবাদাতের সে অর্থ অবশিষ্ট ছিলো না, যা কোরআন নাযিল হওয়ার সময় অমুসলিম সামজে প্রচলিত ছিলো। এ কারণে পরবর্তী কালের অভিধান ও তাফসীর গ্রন্থে অধিকাংশ কোরানিক শব্দের ব্যাখ্যা করা হয়েছে আভিধানিক অথ্যের পরিবর্তে এমন সব অর্থে যা পরবর্তী কালের মুসলমানরা বুঝতো। যেমনঃ

ইলাহ শব্দকে মূর্তি ও দেবতার প্রায় সমার্থক করা হয়েছে। লালন-পালন কর্তা বা পরওয়ারদেগার-এর প্রতিশব্দ করা হয়েছে রবকে, ইবাদাতের অর্থ করা হয়েছে পূজা-উপাসনা, ধর্ম, মযহাব এবং রিলিজিয়ান (Religion) -এর সমার্থজ্ঞাপক শব্দ করা হয়েছে দীনকে। তাগুত- এর তর্জমা করা হয়েছে মূর্তি বা শয়তান।


ফল দাঁড়ালো এই যে, কোরআনের মৌল উদ্দেশ্য অনুধাবন করাই লোকের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়লো। কোরআন বলছে, ‘আল্লাহ ছাড়া কাউকে ইলাহ বানাবে না।’ লোকে মনে করছে, আমারা মূর্তি ও দেবতাকে ত্যাগ করেছি। সুতরাং কোরআনের উদ্দেশ্য পূর্ণ করেছি। অথচ ইলাহ এর অর্থ আরও যেসব ব্যাপারে প্রযোজ্য, তারা সে সবকে আঁকড়ে ধরে রয়েছে। গায়রুল্লাহকে যে ইলাহ বানাচ্ছে সে খবরও তাদের নেই। কোরআন বলছেঃ আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে রব স্বীকার করো না। লোকে বলছেঃ আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে আমরা পরওয়ারদেগার বলে স্বীকার করি না; সুতরাং আমাদের তাওহীদ পরিপুর্ণ হয়েছে। অথচ আরো যে সকল অর্থে রব শব্দ ব্যাবহৃত হয়, সে প্রেক্ষিতে অধিকাংশ ব্যক্তিই আল্লাহর পরিবর্ততে অন্যান্যের রুবুবিয়্যাত স্বীকার করে নিয়েছেন। কোরআন বলছেঃ তাগুত-এর ইবাদাত ত্যাগ করে শুধু আল্লাহর ইবাদাত কর। লোকেরা বলছেঃ আমরা মুর্তি পূজা করি না শয়তানের ওপর লানত করি, কেবল আল্লাহকেই সিজদা করি, সুতরাং আমরা কোরআনের এ দাবীও পূর্ণ করেছি। অথচ পাথরের মুর্তি ছাড়া অন্যান্য তাগুতকে তারা আঁকড়ে ধরে আছে, পূজা ব্যতীত অন্যান্য রকমের যাবতীয় ইবাদাত গায়রুল্লার জন্যে নিদিষ্ট করে রেখেছে। দীনের অবস্থাও তাই। আল্লাহর জন্যে দীনকে খালেস করার অর্থ মনে করা হয় শুধু এই যে, মানুষ ‘ইসলাম ধর্ম’ কবুল করবে, হিন্দু বা ইহুদী-খৃস্টান থাকবে না। এ ভিত্তিতে ‘ইসলাম ধর্মের সকল ব্যক্তিই মনে করে আমি দীনকে আল্লাহর জন্যে খালেস করে রেখেছি। অথচ দীন-এর ব্যাপকতর অর্থের দৃষ্টতে এমন ব্যক্তির সংখ্যাই বেশী, যাদের দীন আল্লাহর জন্যে খালেছ নয়।

ভুল ধারণার ফল

এটা সত্য যে, কেবল এ চারটি মৌলিক পরিভাষার তাৎপর্যে আবরণ পড়ে যাওয়ার কারণে কোরআনের তিন-চুর্থাংশের চেয়েও বেশী শিক্ষা বরং তার সত্যিকার স্পিরিটই দৃষ্টি থেকে প্রচ্ছন্ন হয়ে যায়। ইসলাম কবুল করা সত্ত্বেও মানুষের আকীদা-আমল-বিশ্বাস ও কর্মে যে সকল ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে, এটা তার অন্যতম প্রধান কারণ। সুতরাং কোরআনুল করীমের মৌল শিক্ষা এবং তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা একান্ত জরুরী।


ইতিপূর্বে অনেক নিবন্ধে আমি এসব শব্দের তাৎপর্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ যাবৎ আমি যা আলোচনা করেছি, একদিকে তা সকল ভ্রান্ত ধারণা অপনোদনের জন্যে যথেষ্ট নয়, অপরদিকে তা দ্বারা লোকদের পূর্ণ তৃপ্তি হতে পারে না। কারণ অভিধান ও কোরআনের আয়াত উল্লেখ ছাড়া লোকেরা আমার সকল ব্যাখ্যাকেই নিজস্ব মত বলে মনে করে। যারা আমার সাথে একমত নন, আমার মত অন্তত তাদের পরিতৃপ্তির কারণ হতে পারে না। আলোচ্য গ্রন্থে এ চারটি পরিভাষার পরিপূর্ণ অর্থ অত্যন্ত স্পষ্ট করে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। অভিধান ও কোরআনে প্রমাণ পাওয়া যায় না এমন কোন কথাই আমি এ গ্রন্থে বলবো না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url