Ad

আল কোরনের ভাষায় ইহুদী ও খৃস্টান।

 


ইহুদী ও খৃস্টান

ফিরাউন জাতির পর আমাদের সামনে আসে বনী ইসরাঈল এবং অন্য সব জাতি, যারা ইহুদীবাদ ও খৃষ্টবাদ গ্রহণ করেছিলো। তারা আল্লাহ্র অস্তিত্ব স্বীকার করতো না বা তাঁকে রব-ইলাহ মানতো না-এদের সম্পর্কে এমন ধারণাতো করাই যায় না। কারণ তারা যে আহলে কিতাব ছিলো, স্বয়ং কোরআনই তার সত্যতা প্রতিপন্ন করেছে। তাহলে প্রশ্ন দাড়াঁয়, রুবুবিয়াতের ব্যাপারে তাদের আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মধারায় এমন কি অসঙ্গতি, ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিলো, যার কারণে কোরআন তাদেরকে গোমরাহ বলে অভিহিত করেছে? আমরা কোরআন থেকেই এর সংক্ষিপ্ত জবাব পাইঃ

—————————– বল! হে আহলে কিতাব! নিজেদের দীনের ব্যাপারে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না। তোমাদের পূর্বে যেসব কওম গোমরাহ হয়ে পড়েছে, তাদের বাতিল চিন্তাধারার অনুসরণ করো না। তারা অনেককে গোমরাহীতে নিমজ্জিত করেছে, আর নিজেরাও সত্যপথ হতে বিচ্যুত হয়েছে। -(আল-মায়েদা-৭৭)

এ থেকে জানা যায় যে, ইহুদী-খৃস্টান জাতিগুলের গোমরাহীও মূলত সে ধরনের ছিলো, তাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো শুরু থেকে যে গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়ে আসছিলো। তাছাড়া এ থেকে এ কথাও জানা যায় যে, তাদের মধ্যে এ গোমরাহী প্রবেশ লাভ করছিলো “গলু ফিদদীন”- দীনের ব্যাপারে অযথা অন্যায় বাড়াবাড়ির পথ ধরে। এবার দেখুন, কোরআন এ সংক্ষিপ্ত বর্ণনার ব্যাখ্যাটি কিভাবে পেশ করছেঃ

—————————————– ইহুদীরা বলে; ওজাইর আল্লাহর পুত্র, আর নাসারার বলে; মসীহ আল্লহর পুত্র। – তাওবা-৩০

———————————— যেসব খৃস্টানরা বলে যে, মসীহ ইবনে মরিয়ামই আল্লাহ-তারা কুফুরী করেছে। অথচ মসীহ বলেছেন; হে বনী ইসরাঈল! আল্লাহর ইবাদত কেরো যিনি আমারও রব তোমাদেরও রব। -আল-মায়েদা-৭২

——————————- যারা বলে, আল্লাহ তো তিনজনের তৃতীয় জন-তারা কুফুরী করেছে। অথচ এক ইলাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ-ইতো নেই। – আল-মায়েদা-৭৩

————————————————– এবং আল্লাহ যখন জিজ্ঞেস করবেন, হে মরিয়াম তনয় ঈসা! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকেও ইলাহ বানিয়ে নাও? তখন তিনি জবাবে আরজ করবেন, (সুবহানাল্লাহ) যে কথা বলার আমার কোন অধিকার ছিলো না, এমন কথা বলি আমার সাধ্য কি!” – (আল-মায়েদা-১১৬)

——————————————————- এটা কোন মানুষের কাজ নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, বিধান ও নবুয়াত দান করবেন, আর সে লোকদের বলবে, তোমরা আল্লাহকে ত্যাগ করে আমার বান্দায় পরিণত হও, বরং সে তো এই বলবে, রাব্বানী (খোদা পোরোস্ত) হয়ে যাও, যেমন তোমরা খোদার কিতাব পঠন পাঠন করো, আর যার দরস দিয়ে থাকো। ফেরেশতা- পয়গম্বরদের রব বানিয়ে নাও – এমন কথা বলা নবীর কাজ নয়। তোমারা মুসলমান হওয়ার পরও তিনি কি তোমাদেরকে কুফরী শিক্ষা দেবেন? –আলে-ইমরান-৭৯-৮০

এসব আয়াতের আলোকে আহলে কিতাবের প্রথম গোমরাহী এই ছিলো যে, দীনের দৃষ্টিতে যেসব মহান ব্যক্তি-নবী রাসূল-সাধক পুরুষ ও ফেরেশতা প্রমুখ ছিলেন, তারা তাদের সত্যিকার মর্যাদা থেকে বাড়িয়ে তাদেরকে খোদায়ীর মর্যাদায় উন্নীত করেছিলো; আল্লাহর কার্যধারায় তাদেরকে করেছিলো শরীক-অংশীদার। তাদের পূজা-অর্চনা করেছে। তাদের হিসসাদার জ্ঞান করেছে এবং ধারণা করে বসেছিলো যে, ক্ষমা-সাহায্য-সহযোগিতা ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতাও তাদের রয়েছে। এরপর তাদের দ্বিতীয় গোমরাহী ছিলো এইঃ

———————————————- তারা আল্লাহ ছাড়া নিজের ওলামা-মাশায়েখ –পাদ্রী –পুরোহিতদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছিলো। – সুরা -তওবা-৩১

অর্থাৎ ধর্মীয় ব্যবসায় যাদের পজিশন ছিলো শুধু এই যে, তারা আল্লাহর শরীয়তের বিধান বলে দেবে, আল্লাহর মর্জী অনুযায়ী চরিত্র গঠন করবে- ধীরে ধীরে তাদেরকে এমন পজিশন দেয়া হলো যে, নিজেদের ইখতিয়ার অনুযায়ী যা খুশী হারাম-হালাল করে বসে, দীন ও কিতাবের অনুমোদন ছাড়াই যা খুশী নির্দেশ দেয়, যা থেকে খুশী বারণ করে, যে পন্থাই খুশি বারণ করে, যে পন্থাই জারী করতে পারে। এমনি করে এরা দুটি বিরাট মৌলিক বিচ্যুতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়লো। নূহ, ইবরাহীম, আ’দ, সামুদ, আহলে মাদইয়ান ও অন্যান্য কওম যে বিচ্যুতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলো, পূর্ববর্তী জাতিসমূহের মতো এরাও অতি –প্রাকৃতিক অর্থে ফেরেশতা ও মহান ব্যক্তিদেরকে রুবুবিয়াতে আল্লাহর শরীক করছে। তাদের মতো এরাও আল্লাহর অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই মানুষের নিকট থেকে নিজেদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, আচার –আচরণ, নীতি-নৈতিকতা ও রাজনীতির বিধি-বিধান গ্রহণ করতে থাকে। এমন কি শেষ পর্যন্ত অবস্থা এই দাঁড়ায়ঃ

—————————————————————- তুমি কি তাদের দেখেছো, যারা আল্লাহর কিতাবের অংশ বিশেষ লাভ করেছিলো? তাদের অবস্থা এই ছিলো যে, তারা জিবত ও তাগুতকে স্বীকার করে নিচ্ছে। -আন-নিসা-৫১

—————————– বল, আল্লাহর নিকট ফাসেকদের চেয়েও নিকৃষ্টতর পরিণতি কাদের, আমি কি তোমাদেরকে বলে দেবো? তারা, যাদের ওপর আল্লাহ লা’নত করেছেন, যাদের ওপর আল্লাহর গজব নিপতিত হয়েছে, যাদের অনেকেই তাঁর নির্দেশে বানর-শূকরে পরিণত হয়েছে, আর তারা তাগুতের ইবাদত-বন্দেগী করেছে। এরাই হচ্ছে নিকৃষ্টতর পর্যায়ের লোক। আর সত্য সরল পথ থেকে ওরা তো অনেক দূরে সরে গিয়েছে। -(আল মায়েদা-৬০)

কল্পনাপ্রসূত সর্বপ্রকার চিন্তা- ভাবনার জন্যে ‘জিবত’ শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক। যাদু-টোনা, টোটকা, ভাগ্য গণনা, ভবিষ্যত বর্ণনা, লক্ষ্মী-অলক্ষ্মীর ধারণা-কল্পনা, অতি-প্রাকৃতিক ক্রিয়াকলাপ-এক কথায় সকল প্রকার মনগড়া ধারণ কল্পনা এর পর্যায়ভুক্ত। আর ‘তগুতের’ অর্থ সে সব ব্যক্তি, দল বা সংগঠন-প্রতিষ্ঠান-যারা, আল্লাহর মোকাবিলায় ঔদ্ধত্য-অবাধ্যতা অবলম্বন করেছে, বন্দেগীর সীমাশর্ত লংঘন করে খোদায়ীর ধজাধারী সেজে বসেছে। ইহুদী-খৃষ্টানরা পূবোর্ক্ত দুটি গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়েছিলো। প্রথম প্রকার গোমরাহীর পরিণতি এই দাড়িয়েছিলো যে, সকল প্রকার ধারণা-কল্পনা তাদের মন-মগজে চেপে বসেছিলো। আর দ্বিতীয় প্রকার গোমরাহী তাদের ওলামা-মাশায়েখ, আলেম-সূফী, পাদ্রী-পুরোহিত, সুফী-সাধক ধর্মগুরুদের বন্দেগী থেকে এগিয়ে সে সব অত্যাচারী-অনাচারীর বন্দেগী-অনুগত্য পর্যন্ত তাদের নিয়ে গিয়েছিল, যারা ছিলো প্রাকশ্য খোদাদ্রোহী।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url