Ad

রুবুবিয়াত সম্পর্কে পথভ্রষ্ট জাতিসমুহের ভ্রান্ত ধারণা।

 

রুবুবিয়াত সম্পর্কে পথভ্রষ্ট জাতিসমুহের ভ্রান্ত ধারণা

এসব সাক্ষ্য -প্রমাণ দ্বারা রব শব্দের অর্থ একান্ত সন্দেহাতীতভাবে নির্ণীত হয়েছে। এখন আমাদের দেখা উচিত, রুবুবিয়াত সম্পর্কে গোমরাহ জাতিসমূহের কি সব ভ্রান্ত ধারণা ছিলো, যার অপনোদনের জন্যে কোরআনের আবির্ভাব ঘটেছে এবং কোন্ জিনিসের দিকে কোরআন ডাকছে। কোরআন যেসব গোমরাহ জাতির উল্লেখ করেছে, পৃথক পৃথকভাবে সেসব বিষয়ে আলোচনা করা এ ব্যাপারে অধিক সমীচীন হবে, যাতে বিষয়টি সম্পূর্ণ স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে।

নূহ (আঃ) -এর জাতি

কোরআন সর্বপ্রথম যে জাতির উল্লেখ করেছে, তা হচ্ছে হযরত নুহ (আঃ)-এর জাতি। কোরআনের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, এরা আল্লাহ্র অস্তিত্বে অবিশ্বাসী ছিল না- তাঁর অস্তিত্ব অস্বীকার করতো না। হযরত নুহ (আঃ) -এর দাওয়াতের জবাবে তাদের এ উক্তি স্বয়ং কোরআনই নকল করছেঃ

————————————————– এ ব্যক্তি তো তোমাদেরই মতো একজন মানুষ বৈ কিছুই নয়, মূলত সে তোমাদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চায়। তা না হলে আল্লাহ যদি কোন রাসূল প্রেরণ করতে চাইতেন তবে ফেরেশতাই পাঠাতেন।

আল্লাহ যে খালেক-স্রষ্টা, প্রথম ও দ্বিতীয় অর্থে তিনি যে রব তাও তারা অস্বীকার করতো না। হযরত নূহ (আঃ) যখন তাদেরকে বলেছিলেনঃ

——————————– তিনিই তোমাদের রব। তাঁরই নিকট তোমাদের ফিরে যেতে হবে।

——————————————– তোমাদের রব-এর নিকট ক্ষমা চাও; তিনি বড়ই ক্ষমাশীল।

———————————————————————————– তোমরা কি দেখছো না যে, আল্লাহ কিভাবে স্তরে স্তরে সপ্ত আসমান সৃষ্টি করেছেন, আর তার মধ্যে চন্দ্রকে নূর ও সূর্যকে চেরাগ করেছেন, তোমাদেরকে পয়দা করেছেন যমীন থেকে। -নূহ-১৫-১৬

তখন তাদের কেউ এমন কথা বলেনি- আল্লাহ আমাদের রব নয় অথবা আসমান-যমীন ও আমাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেন নি অথবা আসমান-যমীনের এসব ব্যবস্থাপনা তিনি পরিচালনা করছেন না।

আল্লাহ তাদের ইলাহ-একথাও অস্বীকার করতো না। এজন্যেই হযরত নূহ (আঃ) তাদের সামনে তাঁর দাওয়াত পেশ করেছেন এ ভাষায়ঃ

———— ‘তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই’;

অন্যথায় তারা যদি আল্লাহ্কে ইলাহ বলে স্বীকার না করতো- তাহলে দাওয়াতের ভাষা হতোঃ

——————- ‘তোমরা আল্লাহকে ইলাহ বলে স্বীকার করো’।

এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, তাহলে তাদের সাথে হযরত নূহ (আঃ) -এর বিরোধ ছিলো কি নিয়ে-কোন বিষয়ে? কোরআনের আয়াত সন্ধান করে জানা যায় যে, বিরোধের কারণ ছিলো দুটিঃ

একঃ হযরত নূহ (আঃ) এর শিক্ষা ছিলো এই যে, যিনি রব্বুল আলামীন, তোমরাও যাকে তোমাদের ও সমগ্র বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা বলে স্বীকার করো, যাকে তোমরা সকল প্রয়োজন পূরণকারী বলে বিশ্বাস করো, কেবল তিনিই তোমাদের ইলাহ-অন্য কেউ নয়। তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তোমাদের অভাব-অভিযোগ পূরণ করতে পারে, সংকট-সমস্যা দূর করতে পারে, দোয়া শুনতে পারে এবং সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে-এমন কোন সত্তা নেই। সুতরাং তোমরা কেবল তাঁরই সামনে মস্তক অবনত করো-তাঁকেই আনুগত্য লাভের যোগ্য বলে স্বীকার করোঃ

————– হে আমার জাতির লোকেরা! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করো; তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই। ……….. কিন্তু আমি রাব্বুল আলামীনের তরফ থেকে রাসূল। আপন রব-এর পয়গাম তোমাদের নিকট পৌছাই।-আল-আরাফ-৫৯-৬০

অপর পক্ষে তারা জিদ ধরে বসেছিলো, আল্লাহ্র ব্যবস্থাপনায় অন্যদেরও কম-বেশী দখল আছে। তাদের সাথেও আমাদের নানাবিধ প্রয়োজন জড়িত রয়েছে। সুতরাং আমরা আল্লাহ্র সাথে অন্যদেরকেও ইলাহ স্বীকার করবোঃ

————————– তাদের নেতা-কর্তারা বললো, লোক সকল!তোমাদের ইলাহকে কিছুতেই ছাড়বে না-ছাড়বে না ওয়াদ্দ, সুয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসর-কে।-নূহ-২৩

দুইঃ আল্লাহ তাদের স্রষ্টা-খালেক, আসমান-যমীনের মালিক এবং বিশ্বজাহানের প্রধান ব্যবস্থাপক-নিয়ন্ত্রক-পরিচালক – কেবল এ অর্থেই তারা আল্লাহ্কে রব স্বীকার করতো। কিন্তু তারা এ কথা স্বীকার করতো না যে, নৈতিক চরিত্র, সমাজ, তমুদ্দুন, রাজনীতি ও জীবনের সকল ব্যাপারেও সার্বভৌমত্ব ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা লাভের অধিকার একমাত্র তাঁরই, তিনিই পথ প্রদর্শক, আইন প্রণেতা, আদেশ-নিষেধের অধিকার একমাত্র তাঁরই, তিনিই পথ প্রদর্শক, আইন প্রণেতা, আদেশ-নিষেধের অধিকারী; আনুগত্যও হবে একমাত্র তাঁরই, এসব ব্যাপারে তারা নিজেদের সর্দার ও ধর্মীয় নেতাদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছিলো। পক্ষান্তরে হযরত নূহ (আঃ) -এর দাবী ছিলো-রুবুবিয়াত অবিভাজ্য, তাকে বিভক্ত ও খন্ডিত করো না। সকল অর্থে কেবল আল্লাহ্কেই রব স্বীকার করো। তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে আমি তোমাদের যেসব আইন- বিধান পৌছাই, তোমরা তা মেনে চলোঃ

————————————————- আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহ্র বিশ্বস্ত রাসূল। সুতরাং আল্লাহ্ কে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। -আশ-শোয়ারা-১০৭-১০৮

আদ জাতি

নূহ (আঃ) -এর জাতির পরে কোরআন আদ জাতির কথা আলোচনা করেছেন। এ জাতিও আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করতো না। হযরত নূহ (আঃ)-এর জাতি যে অর্থে আল্লাহ্কে রব স্বীকার করতো, সে অর্থে এরাও আল্লাহ্কে মানত। অবশ্য দুটি বিষয় বিরোধের ভিত্তি ছিলো, যা ওপরে নূহ (আঃ)-এর জাতির প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, কোরআনের নিম্নোক্ত স্পষ্ট ঘোষণা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রমাণ দিচ্ছেঃ

—————————————– এবং তাদের প্রতি আমরা তার ভাই হূদকে পাঠিয়েছি। তিনি বললেন, হে আমার জাতির লোকেরা! তোমার আল্লাহ্র ইবাদত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন ইলাহ নেই।………… তারা বললো! আমরা কেবল আল্লাহ্র ইবাদত করবো, আমাদের বাপ-দাদার যুগ থেকে যেসব মাবুদের ইবাদত চলে আসছে, তাকে পরিত্যাগ করবো-এর জন্যই কি তোমার আগমন?- আল- আরাফ-৬৫-৭০

—————————– তারা বললো, আমাদের রব ইচ্ছা করলে ফেরেশতা প্রেরণ করতেন।

———————————- এরাই তো আদ, যারা তাদের রব-এর বিধান মানতে অস্বীকার করেছিলো, তাঁর রাসূলের আনুগত্য কবূল করে নি এবং সত্যের দুশমন ঔদ্ধত্যপরায়ণের অনুসরণ করেছিল। হূদ-৫৯

সামুদ জাতি

এবার সামুদ জাতি সম্পর্কে শুনুন। আদের পর এরা ছিলো সবচেয়ে ঔদ্ধত্যপরায়ণ জাতি। নূহ (আঃ) ও আদ জাতির গোমরাহীর কথা আলোচনা করা হয়েছে। মূলত এদের গোমরাহীও ছিলো সে ধরনেরই। আল্লাহ-ই একমাত্র ইলাহ, কেবল তিনিই ইবাদতের অধিকারী, রুবুবিয়াত সকল অর্থে কেবল আল্লাহ্র জন্যেই নির্দিষ্ট – এ কথা তারা স্বীকার করতো না। তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকেও ফরিয়াদ গ্রহণকারী, সংকট মুক্তকারী এবং অভাব পূরণকারী বলে স্বীকার করতে জিদ ধরে বসেছিলো। নিজেদের নৈতিক ও তমুদ্দুনিক জীবনে আল্লাহ ছাড়া সর্দার, মাতব্বর এবং নেতা-কর্তা ব্যক্তিদের আনুগত্য করতে এবং তাদের কাছ থেকে নিজেদের জীবন বিধান গ্রহণ করতে তারা বদ্ধপরিকর ছিলো। শেষ পর্যন্ত এটাই তাদের ফাসাদকারী জাতি-বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কওম এবং পরিণামে আজাবে নিপতিত হওয়ার কারণ হয়েছে। নিম্নোক্ত আয়াতসমুহ থেকে এর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়ঃ

————- (হে মুহাম্মদ !) এরা যদি তোমার আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তাদের বলে দাও যে, আদ-সামুদ যে শাস্তি পেয়েছিলো, তেমনি এক ভয়ংকর শস্তি সম্পর্কে আমি তোমাদের ভয় প্রদর্শন করছি। সেসব জাতির নিকট যখন তাদের অগ্র-পশ্চাৎ থেকে রাসূল এসেছিলেন আর বলেছিলেন, আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত-বন্দেগী করো না, তখন তারা বলেছিলো, আমাদের রব ইচছা করলে ফেরেশতা পাঠাতেন; সুতরাং যা কিছু নিয়ে তোমাদের আগমন, আমরা তা মানি না- স্বীকার করি না।

————————————- আর সামুদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম আমরা তাদের ভাই ছালেহকে। তিনি বললেন; হে আমার জাতির ভাইয়েরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। তারা বললো; ছালেহ! আগে তো তোমার সম্পর্কে আমাদের বিরাট আশা ভরসা ছিলো। বাপ -দাদার যুগ থেকে যাদের ইবাদত চলে আসছিলো, তুমি কি আমাদেরকে তাদের ইবাদত থেকে বারণ করছো?- (ছুরা হূদ-৬১-৬২)

———————————————- যখন তাদের ভাই ছালেহ তাদেরকে বলছিলো; তোমাদের কি নিজেদেরকে রক্ষা করার কোন চিন্তা নেই? দেখ, আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর নির্ভরযোগ্য রাসূল। সুতরাং আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে নিবৃত্ত থাকো, আর আমার আনুগত্য করো। ……. সেসব সীমা লংঘনকারীর আনুগত্য করো না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় র্সৃষ্টি করে, কোন কল্যাণই সাধন করে না।

ইবরাহীম (আঃ) — এর জাতি ও নমরূদ

এরপর আসে হযরত ইবরাহীম (আঃ) -এর জাতির কথা। এ জাতির ব্যাপারটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাধারণ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে, তাদের বাদশা নমরূদ আল্লাহ অস্বীকার করতো এবং নিজেকে খোদা বলে দাবী করতো। অথচ সে আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করতো, তাঁকে খালেক-স্রষ্টা এবং বিশ্ব-নিয়ন্তা বলে বিশ্বাস করতো। কেবল তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অর্থে নিজেকে রব বলে দায়ী করতো। এ ভূল ধারণাও ব্যাপক দেখা যায় যে, এ জাতি আল্লাহ সম্পর্কে সম্পুর্ণ অনবহিত ছিল-তাঁকে রব ও ইলাহ বলে আদৌ স্বীকারই করতো না, অথচ নূহ, আদ-সামুদ থেকে এদের ব্যাপার মোটেই ভিন্ন ছিল না। তারা আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করতো। তিনি যে রব, আসমান-জমীনের স্রষ্টা ও বিশ্ব জাহানের নিয়ন্তা-তাও তারা জানতো, তাঁর ইবাদতকেও তারা অস্বীকার করতো না। অবশ্য তাদের গোমরাহী ছিল এই যে, রুবুবিয়াতের প্রথম ও দ্বিতীয় অর্থে তারা গ্রহ-নক্ষত্রকেও অংশীদার মনে করতো, আর এ ভিত্তিতে সে সবকেও আল্লাহর সাথে মাবুদ বলে ধরে নিতো। রুবুবিয়াতের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অর্থে তারা নিজেদের বাদশাদেরকে রব বানিয়ে রেখেছিল। এ ব্যাপারে কোরআনের স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন উক্তি সত্ত্বেও মানুষ কি করে আসল ব্যাপারটি বুঝতে পারল না তা দেখে অবাক হতে হয়। সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহীম (আঃ) -এর বোধেদয়ের ঘটনাটি দেখুন। এতে তাঁর নবুয়াত-পূর্ব জীবনের সত্যানুসন্ধানের চিত্র অংকিত হয়েছেঃ

——————————————–

রাত যখন তাঁর উপর আঁধারের আবরণ ছড়িয়ে দিলো, তিনি একটি তারকা দেখতে পেলেন, বলে উঠলেন; এই তো আমার রব; কিন্তু তা ডুবে গেলে তিনি বললেন; ডুবন্ত জিনিসকে আমি পছন্দ করি না। আবার যখন দেখলেন, চাঁদ ঝলমল করছে, বললেন; এই তো আমার রব ! কিন্তু তাও যখন ডুবে গেলো, তখন বললেন; আমার রব যদি আমাকে হেদায়েত না করেন তাহলে আশংকা হচ্ছে আমিও সেসব গোমরাহ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বো। আবার সূর্যকে রওশন দেখে বললেন; এই তো আমার রব-এতো দেখছি সবচেয়ে বড়! কিন্তু তাও যখন ডুবে গেলো তখন তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন; হে আমার জাতির লোকেরা। তোমরা যে শিরক করেছো, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে সে মহান সত্তার দিকে একাগ্র মনে নিবিষ্ট হলাম, যিনি আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের পর্যায়ভুক্ত না। -আল-আনআম-৭৭-৮০

রেখা চিহ্নিত বাক্যাংশগুলো থেকে স্পষ্টত জানা যায় যে, যে সমাজে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) চক্ষু খুলেছিলেন, সে সমাজে আসমান-যমীনের স্রষ্টা মহান সত্তার রব হওয়া এবং সেসব গ্রহ-নক্ষত্রের রুবুবিয়াতের ধারণা এক ছিলো না। এরূপ হবে না কেন, যেসব মুসলমান হযরত নূহ (আঃ) -এর ওপর ঈমান এনেছিলো, তারা ছিলো সে বংশেরই লোক। তাদের নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী জাতিসমূহ (আদ-সামুদা)-এর মধ্যে উপর্যুপরি আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের মাধ্যমে দীন ইসলামের নবায়নের কাজও চলছিলো।

——————————–

সুতরাং আল্লাহ্র আসমান-যমীনের স্রষ্টা এবং রব হওয়ার ধারণা হযরত ইবরাহীম (আঃ) আপন সমাজ থেকেই লাভ করেছিলেন। অবশ্য তাঁর মনে যেসব প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছিলো, তা ছিলো এই যে, প্রতিপালন ব্যবস্থায় আল্লাহ্র সাথে চন্দ্র-সূর্য ও গ্রহ-নক্ষত্রের অংশীদার হওয়ার যে ধারণা তাঁর জাতির মধ্যে পাওয়া যেতো এবং যার ভিত্তিতে তারা ইবাদতেও আল্লাহ্র সাথে শরীক করতো, তা কতটুকু বাস্তবানুগ।১ নবুয়াতের পূর্বে তিনি এ সত্যেরই সন্ধান করে বেড়িয়েছেন, উদয়-অস্ত বিধান তাঁর জন্যে এ বাস্তব তত্ত্বে উপনীত হতে সহায়ক হয়েছে যে, আসমান-যমীনের স্রষ্টা ছাড়া আর কোন রব নেই। এ কারণে চন্দ্রকে ডুবতে দেখে তিনি বলেন, আমার রব অর্থাৎ আল্লাহ্ যদি আমাকে পথ প্রদর্শন না করেন তবে আশংকা হচ্ছে আমিও বাস্তব সত্যে উপনীত হতে ব্যর্থ হবো। আমার আশেপাশের লাখ লাখ মানুষ যেসব দৃশ্য দেখে প্রতারিত হচ্ছে, আমিও তা দ্বারা প্রতারিত হয়ে পড়বো।

অতপর হযরত ইবরাহীম (আঃ) নবুয়াতের পদে অভিষিক্ত হলেন এবং তিনি আল্লাহ্র পথে আহ্বানের কাজ শুরু করেনঃ তখন যে ভাষায় তিনি দাওয়াত পেশ করেন, তা নিয়ে চিন্তা করলে আমাদের উপরিউক্ত উক্তি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি বলেনঃ

১. এখানে একটি বিষয়ের উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক হবে না। হযরত ইবরাহীম (আঃ) -এর দেশ ‘উর’ সম্পর্কে প্রত্বতাত্ত্বিক খোদাই করে যেসব তথ্য উদঘাটিত হয়েছে, তা থেকে জানা যায় যে, সেখানে চন্দ্র-দেবতার উপাসনা হতো। তাদের ভাষায় একে বলা হতো নান্নার (–) আর তাদের আশেপাশের এলাকায়-যার কেন্দ্র ছিলো লারসা (–) সূর্য দেবতার পূজা হতো। তাদের ভাষায় একে বলা হতো শামাশ (—-)। সে দেশের শাসক বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিল আরনামু (—)। আরবে গিয়ে তার নাম হয়েছে নমরূদ। তার নামানুসারে সেখানকার উপাধি হয়েছে নমরূদ, যেমন নিযামুল মূলক-এর স্থলাভিষিক্তকে বলা নিযাম।

———————————————- তোমরা যাকে আল্লাহ্র শরীক করছো, শেষ পর্যন্ত আমি তাকে কি করে ভয় করতে পারি? অথচ তোমরা আল্লাহ্র সাথে তাদেরকে শরীক করতে ভয় করছো না, উলুহিয়াত-রুবুবিয়াতে তাদের অংশীদারিত্বের ব্যাপারে আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি কোন প্রমাণ নাযিল করেন নি।

——————————- আল্লাহ্ ছাড়া আর যাদের নিকট তোমরা দোয়া করো, আমি তাদের কাছ থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছি। -মরিয়াম-৪৮

—————————————- সে বললো, তোমাদের রব তো শুধু আসমান যমীনের রব, যিনি এসব কিছু সৃষ্টি করেছেন।… বললো, তবে কি তোমরা আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে এসব রবের ইবাদত করছো, তোমাদের কল্যাণ-অকল্যাণের কোন ইখতিয়ারই যাদের নেই?-আল-আম্বিয়া-৫৬-৬৬

———————————– যখন ইবরাহীম তাঁর পিতা এবং জাতিকে বললেন, এ তোমরা কার ইবাদত করছো? আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে নিজেদের বানানো ইলাহ’র বন্দোগী করতে চাও? তাহলে রাব্বুল আলআমীন সম্পর্কে তোমাদের কি ধারণা?-সাফ্ফাত-৮৫-৮৭

——————————————- ইবরাহীম ও তাঁর সাথী মুসলমানরা তাঁর জাতির লোকদের পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেন, তোমাদের এবং আল্লাহ্ ছাড়া আর যাদের তোমরা ইবাদত করো, তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্কে নেই। আমি তোমাদের নিয়ম-নীতি মানতে অস্বীকার করছি। তোমরা যতক্ষন না এক আল্লাহ্র ঈমান আনবে, ততক্ষণ তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চিরতরে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বুনিয়াদ রচিত হলো।-মুমতাহেনা-৪

হযরত ইবাহীম (আঃ)- এর এসব উক্তি থেকেই স্পষ্ট জানা যায় যে, যারা আল্লাহ সম্পর্কে সর্ম্পূণ অনবহিত ছিলো, তাঁকে রব্বুল আলামীন ও মাবুদ বলে স্বীকার করতো না অথবা যাদের অন্তরে কোন ধারনাই বদ্ধমূল ছিলো না তিনি এমন লোকেদের সম্বোধন করেন নি, বরং তিনি সম্বোধন করেছেন সেসব লোকেদের, যারা আল্লাহ্র সাথে রুবুবিয়াত (প্রথম ও দ্বিতীয় অর্থে) ও উলুহিয়াতে অন্যদেরকেও শরীক করতো। এজন্যেই সমগ্র কোরআনের একটি স্থানেও হযরত ইবরাহীম (আঃ) -এর এমন উক্তিও বিদ্যমান নেই, যাতে তিনি তাঁর জাতিকে আল্লাহ্র অস্তিত্ব এবং তাঁকে ইলাহ-রব স্বীকার করবার চেষ্টা করেছেন, বরং সর্বত্রই তিনি এ দাওয়াত দিয়েছেন যে, আল্লাহ্-ই রব ও ইলাহ।

এবার নমরূদের ব্যাপারটি দেখুন। তার সাথে হযরত ইবরাহীম (আঃ) -এর যে কথাবার্তা হয়েছে, কোরআন তাকে উল্লেখ করেছে এভাবেঃ

————————————— তুমি কি সে ব্যক্তিকে দেখেছো, যে ইবরাহীমের সাথে তার রব-এর ব্যাপারে বিতর্ক করেছে? তা করেছিলো এ-জন্যে যে, আল্লাহ্ তাকে রাষ্ট্র-ক্ষমতা দান করেছিলেন। ইবরাহীম যখন বললেন, জীবন-মৃত্যু যাঁর হাতে তিনি আমার ইখতিয়ারাধীন।ইবরাহীম বললেন, সত্য কথা এই যে, আল্লাহ্ পূর্ব দিক থেকে সূর্য উদিত করেন এবার দেখি, তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে উদিত করাও তো! একথা শুনে সে কাফের হতভম্ব হয়ে পড়লো।-বাকারা-২৫৮

এ কথাবার্তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লাহ্ আছেন বা নেই-তা নিয়ে বিরোধ ছিলো না, বরং বিরোধ ছিলো ইবরাহীম (আঃ) কাকে রব স্বীকার করেন, তা নিয়ে। যে জাতি আল্লাহ্র অস্তিত্ব স্বীকার করতো, প্রথমত, সে জাতির সাথে নমরূদের সম্পর্ক ছিলো। দ্বিতীয়ত, একেবারেই পাগল না হয়ে যাওয়া পযর্ন্ত সে এমন স্পষ্টত নির্বোধসুলভ উক্তি করতে পারে না যে,সে নিজেই আসমান-যমীনের স্রষ্টা, চন্দ্র-সূর্যের আবর্তন-বিবর্তনকারী। আমিই আল্লাহ্, আসমান যমীনের রব-মূলত তার এ দাবী ছিল না, বরং তার দাবী ছিল এই যে, আমি সে রাজ্যের রব, ইবরাহীম যে রাজ্যের সদস্য। রুবুবিয়াতের প্রথম ও দ্বিতীয় অর্থেও নিজের রব হওয়ার এ দাবী তার ছিলো না; কারণ এ অর্থের সে নিজেই চন্দ্র-সূর্য এবং গ্রহ-নক্ষত্রের রব আল্লাহ্কে স্বীকার করতো। অবশ্য তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অর্থে সে নিজেকে নিজ রাজ্যের রব বলে দাবী করতো অর্থাৎ তার দাবী ছিলো এই যে, আমি এ রাজ্যের মালিক, রাজ্যের সকল অধিবাসী আমার বান্দা-দাসানুদাস। আমার কেন্দ্রীয় ক্ষমতা তাদের সম্মিলনের ভিত্তিমূল। আর আমার নির্দেশ -ফরমান তাদের জন্যে আইন-বিধান। তার রুবুবিয়াতের দাবীর ভিত্তি ছিলো বাদশাহীর অহমিকা,————– (এজন্যে যে, আল্লাহ্ তাকে রাজ্য-ক্ষমতা দান করেছেন) বাক্যটি এ দিকে স্পষ্ট ইঙ্গিত করছে। সে যখন জানতে পারলো যে, তার রাজ্যে ইবরাহীম নামক জনৈক নওজোয়ানের আবির্ভাব হয়েছে, সে চন্দ্র-সূর্য ও গ্রহ-নক্ষত্রের অতি প্রাকৃতিক রুবুবিয়াত স্বীকার করে না, স্বীকার করে না যুগসম্রাটের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রুবুবিয়াত তখন অবাক-স্তম্ভিত হয়ে সে হযরত ইবরাহীম (আঃ) -কে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, তাহলে তুমি কাকে রব বলে স্বীকার করো? হযরত ইবরাহীম (আঃ) প্রথমে বললেন, আমার রব তিনি, জীবনমৃত্যুর ইখতিয়ার যার হস্তে নিহিত। কিন্তু এ জবাব শুনে সে ব্যাপারটির গভীর প্রবেশ করতে পারলো না। এ বলে সে আপন রুবুবিয়াত প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করলো যে, জীবন-মৃত্যুর ইখতিয়ার তো আমারও আছে; যাকে খুশী হত্যা করতে পারি, আর যাকে খুশী জীবন দান করতে পারি। তখন ইবারাহীম (আঃ) তাকে বললেন, আমি কেবল আল্লাহ্কেই রব বলে স্বীকার করি; রুবুবিয়াতের সকল অর্থের বিচারে কেবল আল্লাহ্ই আমার রব। বিশ্বজাহানের পরিচালনা ব্যবস্থায় অন্য কারো রুবুবিয়াতের অবকাশ-ই বা কোথায়? সূর্যের উদয়-অস্তে তাদের তো বিন্দুমাত্রও প্রভাব নেই-নেই কোন কর্তৃত্ব। নমরূদ ছিল ধূরন্ধর। এযুক্তি শোনে তার কাছে এ সত্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো যে, বস্তুত আল্লাহ্র এ রাজ্যে তাঁর রুবুবিয়াতের দাবী বাতুলতা বৈ কিছুই নয়! তাই সে হতভম্বঃ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো। কিন্তু আত্মশ্লাঘা এবং ব্যক্তিগত ও বংশগত স্বার্থের মোহ স্বেচ্ছাচারী রাজত্ব-কর্তৃত্বের আসন ত্যাগ করে আল্লাহ্ ও তার রসূলের আনুগত্য গ্রগণ করার জন্যে উদ্বুদ্ধ হলো না। এ কারণেই কথাবার্তা উল্লেখ শেষে আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ

————- কিন্তু জালেম জাতিকে আল্লাহ্ হেদায়েত দান করেন না। অর্থাৎ সত্য উদ্ভাসিত হওয়ার পর তার যে পন্থা অবলম্বন করা উচিত ছিলো, তা অবলম্বরন করতে সে যখন প্রস্তুত হলো না, বরং ঔদ্ধত্যপরায়ণ কৃর্তত্ব দ্বারা সে যখন দুনিয়া ও আপন আত্মার ওপর যুলুম করাই শ্রেয় জ্ঞান করলো, তখন আল্লাহ্ও তাকে হেদায়েতের আলো দান করলেন না। কারণ যে ব্যক্তি হেদায়েত লাভ করতে আগ্রহী নয়, তার ওপর জোর করে হেদায়েত চাপিয়ে দেয়া আল্লাহ নীতি নয়।

লুত জাতি

হযরত ইবরাহীম (আঃ) -এর জাতির পর আমাদের সামনে আসে এমন এক জাতি যাদের সংস্কার–সংশোধনের জন্য হযরত ইবরাহীম (আঃ) -এর ভাইপো হযরত লূত (আঃ) আদিষ্ট হয়েছিলেন। এ জাতি সম্পর্কেও আমরা কোরআন থেকে জানেত পারি যে, তারা আল্লাহ্র অস্তিত্ব অস্বীকার করতো না। আল্লাহ্ স্রষ্টা এবংপ্রথম ও দ্বিতীয় অর্থে রব-এ কথাও তারা অস্বীকার করতো না। অবশ্য তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অর্থে তাঁকে রব স্বীকার করে তাঁর বিশ্বস্ত প্রতিনিধি হিসাবে রসূলের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে তাদের আপত্তি ছিলো। নিজেদের মনের অভিলাষ অনুযায়ী যেভাবে খুশী তারা কাজ করতে চাইতো, এ -ই ছিলো তাদের মূল অপরাধ। এ কারণেই তারা আজাবে নিপতিত হয়েছিলো। কোরআনের নিম্নোক্ত স্পষ্টোক্তি তার প্রমাণঃ

———————————– যখন তাদের ভাই লূত তাদের বললো, তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না? দেখ, আমি তোমাদের জন্যে বিশ্বস্ত রসূল। সুতরাং আল্লাহ্র গজব থেকে বিরত থাকো এবং আমার আনুগত্য কর। এ কাজের জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাই না। আমার বিনিময় তো কেবল আল্লাহ্ রববুল আলামীনের জিম্মায়। দুনিয়ার মানুষের মধ্যে তোমরা কি কেবল ছেলেদের নিকটই ছুটে যাও? তোমাদের রব তোমাদের জন্যে যে নারী সৃষ্টি করেছেন, তাদের পরিত্যাগ কর? তোমরা তো দেখছি একান্তই সীমালংঘনকারী জাতি!-আশ-শোয়ারা-১৬১-১৬৬

এ কথা স্পষ্ট যে, আল্লাহ্র অস্তিত্ব তিনি যে স্রষ্টা ও প্রতিপালক তা অস্বীকার করে না- এমন জাতির উদ্দেশ্যই এ সম্বোধন হতে পারে। তাই আমরা দেখতে পাই, জবাবে তারাও বলে নি যে, আল্লাহ্ আবার কি জিনিস অথবা কে সে স্রষ্টা অথবা সে আবার কোথা থেকে আমাদের রব সেজে বসলো? বরং তারা বলছেঃ

————————- লূত! তুমি যদি তোমার বক্তব্য থেকে নিবৃত্ত না হও, তা হলে দেশ থেকে বিতাড়িত হবে। -আশ-শোয়ারা-১৬৭

অন্যত্র এ ঘটনা এভাবে বিবৃত হয়েছে:

——————————————— “ আর আমরা লূতকে প্রেরণ করেছি! য”খন তিনি নিজের জাতিকে বললেন; তোমরা এমন দুষ্কর্ম করছো, যা তোমাদের আগে দুনিয়ায় কেউ করে নি। তোমরা কি পুরুষদের সাথে যৌন-কর্ম করছো? রাস্তায় লুন্ঠন চালাও এবং প্রকাশ্য মজলিসে একে অন্যের সামনে কুকর্ম কর? তখন তাঁর জাতির জবাব এছাড়া আর কিছুই ছিলো না- তুমি সত্য হলে আমাদের ওপর আল্লার আজাব নিয়ে এসো। -আনকাবুত-২৮-২৯ কোন আল্লাহ্ বিরোধী জাতির কি এ জবাব হতে পারে? সুতরাং জানা কথা যে, উলুহিয়াত ও রুবুবিয়াত-অস্বীকার করা তাদের আসল ছিলো না, বরং তাদের মূল “অপরাধ ছিল এই যে, অতি- প্রাকৃতিক অর্থে তারা আল্লাহ্কে ইলাহ ও রব বলে স্বীকার করলেও নৈতিকথা, তমুদ্দুন ও সমাজ জীবনে আল্লাহ্র আনুগত্য রাসূলের হেদায়াত অনুযায়ী চলতে প্রস্তুত ছিলো না তারা।

শোয়াইব জাতি

এবার মাদইয়ান ও আইকাবাসীদের কথা ধরুন। এদের প্রতি হযরত শোয়াবই (আঃ) প্রেরিত হয়েছিলেন। এদের সম্পর্কে আমরা জানি এরা হযরত ইবরাহীম (আঃ) -এর বংশধর ছিলো। সুতরাং তারা আল্লাহ্র অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো কিনা? তাঁকে ইলাহ-রব স্বীকার করতো কিনা? সে প্রশ্নই ওঠে না। বম্তুত তাদের পজিশন ছিলো এমন জাতির, ইসলাম থেকেই যাদের সূচনা হয়েছিলো, পরে আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মের বিকৃতিতে পড়ে তারা পরিবর্তিত হয়ে যায় বরং তারা মুমিনের দাবীদারছিলো বলেও কোরআন থেকে অনেকটা মনে হয়। তাইতো আমরা দেখতে পাই, হযরত শোয়াইব (আঃ) তাদের বারবার বলেছেন, ‘তোমরা মুমিন হলে, তোমাদের এ করা উচিত।’ হযরত শোয়াইব (আঃ) -এর সকল বক্তৃতা এবং তাদের জবাবসমূহ দৃষ্টে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, তারা এমন এক জাতি ছিল, যারা আল্লাহ্কে মানতো। তাঁকে মাবুদ-পরওয়ারদেগারও স্বীকার করতো। অবশ্য দু’ধরনের গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলো। একঃ অতি প্রাকৃতিক অর্থে তারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যদেরকেও ইলাহ ও রব মনে করে বসেছিলো, তাই তাদের ইবাদত নিছক আল্লাহ্র জন্যে নিদির্ষ্ট ছিলো না। দুইঃ তাদের মতে, মানুষের নৈতিক চরিত্র, সমাজ-নীতি, অর্থনীতি ও রাজনীতি-সংস্কৃতির সাথে আল্লাহ্র রুবুবিয়াতের কোন সম্পর্ক ছিল না। এজন্যেই তারা বলতো যে, তমুদ্দনিক জীবনে আমরা স্বাধীন। যেভাবে খুশী, নিজেদের কাজ-কর্ম আঞ্জাম দেবো।

কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতগুলো আমাদের এ উক্তির যথার্থতা প্রতিপন্ন করেঃ

——————– এবং মাদইয়ানের প্রতি আমরা তাদের ভাই শোয়াইবকে প্রেরণ করেছি। তিনি বললেন হে আমার জাতির ভাইয়েরা! আল্লাহ্র ইবাদত কর; তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। তোমাদের রব-এর তরফ থেকে তোমাদের কাছে স্পষ্ট হেদায়েত এসেছে। সুতরাং ওজন-পরিমাপ ঠিক করে করবে। লোকেদেরকে তাদের জিনিস কম দেবে না। যমীনে শান্তি-শৃংখলা স্থাপিত হওয়ার পর বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। তোমরা যদি মুমিন হও, এতেই তোমাদের জন্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে…. যে হেদায়েতসহ আমি প্রেরিত হয়েছি, তোমাদের একটি ক্ষুদ্র দলও যদি তার ওপর ঈমান আনে, আর অন্যরা ঈমান না আনে তবে অপেক্ষা কর যতক্ষন না আল্লাহ্ আমাদের মধ্যে ফয়সালা করেছেন। আর তিনিই তো হচ্ছেন উত্তম ফয়সালাকারী। আল-আরাফ ৮৫-৮৭ ——————————————————-

হে আমার জাতির লোকেরা! মাপে-ওজনে ইনসাফ কায়েম করো, ঠিক ঠিকভাবে মাপ-ওজন করো, লোকদেরকে জিনিসপত্র কম দেবো না। জমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়োনা। আল্লাহ্র অনুগ্রহে কাজ-কারবারে যা অবশিষ্ট থাকে তা-ই তোমাদের জন্যে উত্তম, যদি তোমরা মুমিন হও। আমি তো তোমাদের ওপর পাহারাদার -রক্ষক নই। তারা জবাব দিলোঃ শোয়াইব! বাপ-দাদার কাল থেকে যে সকল মাবুদের ইবাদত চলে আসছে, আমরা তাদের ইবাদত ত্যাগ করি-তোমর নামায কি তোমাকে এ নির্দেশই দিচ্ছি? আমাদের মর্জি মতো ধন-সম্পদ ভোগ-ব্যবহার করা ত্যাগ করবো? কেবল তুমিই তো একজন ধৈর্যশীল ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি হিসাবে অবশিষ্ট রইলে! -সূরা-হুদ-৮৫-৮৬

রুবুবিয়াত ও উলুহিয়াতের ব্যাপারে তাদের আসল গোমরাহী কি ছিলো, শেষের চিহ্নিত লাইনগুলো তা স্পষ্ট করে তুলে ধরছে।

ফেরাঊন ও তার জাতি

এবার আমরা ফিরাঊন ও তার জাতির কথা আলোচনা করবো। এ ব্যাপারে নমরূদ ও তার জাতির চেয়েও বেশী ভুল ধারণা পাওয়া যায়। সাধরণ ধারণা এই যে, ফিরাউন কেবল আল্লাহ্র অস্তিত্বেই ছিলো না, বরং নিজে খোদা বলে দাবীও করেছিলো। অর্থাৎ তার মস্তিষ্ক এতো খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে, সে দুনিয়ার সামনে প্রকাশ্যে দাবী করেছিলো, আমি আসমান যমীনের সৃষ্টিকর্তা। আর তার জাতি এমন পাগল হয়ে গিয়েছিলো যে, তার এ দাবীর প্রতি তারা ঈমান এনেছিলো। অথচ কোরআন ও ইতিহাসের সাক্ষ্য থেকে প্রকৃত তত্ত্ব অবগত হওয়া যায়। তা এই যে, উলুহিয়াত ও রুবুবিয়াতের ব্যাপারে তার গোমরাহী নমরূদের গোমরাহীর চেয়ে স্বতন্ত্র ছিলো না, তার জাতির গোমরাহীও নমরূদের জাতির গোমরাহীরর চেয়ে ভিন্ন ছিলো না। পার্থক্য শুধু এটুকু ছিলো যে, রাজনৈতিক কারণে বনী ইসরাঈলদের সাথে জাতিপূজাসূলভ একগুঁয়েমী এবং পক্ষপাতমূলক হঠকারিতা সৃষ্টি হয়ে যায়। তাই নিছক বিদ্বেষবশত আল্লাহ্র রব ও ইলাহ বলে গ্রহণ করতে অস্বীকার করা হয়। অবশ্য অন্তরে তাঁর স্বীকৃতি লুক্কায়িত ছিলো। যেমন আজকালকার অধিকাংশ জড়বাদীরা করে থাকে।

আসল ঘটনা এই যে, হযরত ইউসুফ (আঃ) মিশরে ক্ষমতা লাভ করে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের জন্যে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেন। তিনি মিশর ভূমিতে এত অধিক ছাপ অংকিত করেন, যা কিছুতেই কেউ নিশ্চিত করতে পারে না। তখন মিসরের সকল অধিবাসী হয়তো সত্য দীন কবুল করে নি, কিন্তু তাই বলে মিসরের কোন ব্যক্তি আল্লাহ্কে জানতে না, তিনিই আসমান-যমীনের স্রষ্টা একথা মানতো না, এটা অসম্ভব। শুধু তাই নয়, বরং তাঁর শিক্ষার অন্তত এতটুকু প্রভাব প্রত্যেক মিসেরবাসীর ওপর থাকবে যে, অতি প্রাকৃতিক অর্থে সে আল্লাহ্কে ‘ইলাহুল ইলাহ’ ও ‘রবুল আরবাব’ বলে স্বীকার করতো। কোন মিসরবাসীই আল্লাহ্র উলুহিয়াতের বিরোধী ছিলো না। অবশ্য তাদের মধ্যে যারা কুফরীতে অবিচল ছিলো তারা উলুহিয়াত ও রুবুবিয়াতে আল্লাহ্র সাথে অন্যদেরকেও অংশীদার করতো। হযরত মূসা (আঃ) -এর আবির্ভাব পর্যন্ত এর প্রভাব অবশিষ্ট ছিলো।১ ফিরাউনের দরবারে জনৈক কিবতী সরদার যে ভাষণ দিয়েছিলো, তা থেকেই এর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। ফিরাউন হযরত মূসা (আঃ)-কে হত্যা করার অভিপ্রায় প্রকাশ করলে তার দরবারের এই আমীর-যিনি গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন- অস্থির হয়ে বলে ওঠলেনঃ

—————————————-

১ তাওরাতের ঐতিহাসিক বর্ণনায় নির্ভর করলে ধারণা করা যায় যে, মিসরের মোট জনসংখ্যায়র প্রায় এক পঞ্চমাংশ ইসলাম গ্রহণ করেছিলো। তওরাতে বনী-ইসরাঈলের যে আদমশুমারী সন্নিবেশিত হয়েছে তার আলোকে বলা চলে, হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে যারা মিসর ত্যাগ করেছিলো, তাদের সংখ্যা ছিলো প্রায় ২০ লক্ষ। মিসরের জনসংখ্যা তখন এক কোটির বেশী ছিলো না। তওরাতে এদের সকলকে বনী-ইসরাঈল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু হযরত ইয়াকুব (আঃ) -এর ১২ পুত্রের সন্তানরা পঁচিশ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ২০ লক্ষে পৌছেছিলো-কোন হিসাবেই তা সম্ভব বলে মনে হয় না। সুতরাং অনুমিত হয় যে, মিসরের জনগণের এক বিরাট অংশ ইসলাম গ্রহণ করে বনী-ইসরাঈলে শামিল হয়ে থাকবে। দেশ ত্যাগ কালে এ মিসরীয় মুসলমানরাও ঈসারাঈলীদের সাথে যোগ দিয়েছিলো। হযরত ইউসুফ (আঃ) ও তাঁর প্রতিনিধিরা মিসরে যে প্রচারমূলক কাজ করেছিলেন, এ থেকেই তা অনুমান করা যায়।

————————————

“আল্লাহ্ আমার রব”-একথা বলার অপরাধে তোমরা কি লোককে হত্যা করছো? অথচ সেতো তোমাদের সামনে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। সে যদি মিথ্যাবাদী হয়, তবে যেসব পরিণতি সম্পর্কে সে তোমাদের ভয় দেখাচ্ছে তার কিছু না কিছু তোমাদের ওপর অবশ্যই বর্তাবে। সীমাতিক্রমকারী মিথ্যাবাদীকে আল্লাহ্ কল্যাণের পথ দেখান না- একথা সত্য জানো। হে আমার জাতির লোকেরা! আজ রাষ্ট্র-ক্ষমতা তোমাদের হাতে, যমীনে আজ তোমরা প্রবল বিজয়ী। কিন্তু কাল আমাদের ওপর আল্লাহ্র আজাব আপতিত হলে কে আমাদেরকে রক্ষা করবো? হে আমার জাতির লোকেরা! আমি আশংকা করছি, বড় বড় জাতির ওপর যেদিন গজব আপতিত হয়েছিলো তাদের যে পরিণতি হয়েছিলো, তোমাদেরও যেন সে পরিণতি না হয়।…. এর পূর্বে ইউসুফ তোমাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে হাযির হলে তাঁর উপস্থাপিত বিষয়ে তোমরা সংশয়ে পড়ে রইলে। পড়ে তাঁর তিরোধার হলে তোমরা বললে, আল্লাহ্ তার পরে কোন রসূলই পাঠাবেন না। …হে আমার জাতির লোকেরা! আমি তোমাদেরকে মুক্তির দিকে-এতো দেখছি এক অবাক কান্ড! তোমরা আমাকে ডাকছো, আল্লাহ্র সাথে আমি যেন কুফরী করি, তাঁর সাথে আমি যেন তাদেরকেও শরীক করি, যাদের শরীক হওয়ার আমার কাছে কোন বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ নেই। আর আমি তোমাদের ডাকছি তাঁর দিকে, যিনি মহা পরাক্রমশালী ও অতি ক্ষমাশীল। -(আল-মুমিন-২৮-৪২)

কয়েক শতাব্দী অতিবাহিত হওয়ার পরও হযরত ইউসুফ (আঃ) – এর মহান ব্যক্তিত্বের প্রভাব তখনও বিদ্যমান ছিলো – এ দীর্ঘ ভাষণ থেকে এ কথার প্রমাণ পাওয়া যায় এ মহান নবীর শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ফলে যে জাতি অজ্ঞতার এমন স্তরে ছিলো না, যাতে আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কেই তারা অনবহিত ছিলোও অথবা তারা জানতো না যে, আল্লাহই ইলাহ ও রব; প্রাকৃতিক শক্তির ওপর তাঁর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত। তাঁর গজবও একটা ভয় করার বিষয়-একথাও যে তারা জানাতো না, তা নয়। সে জাতি যে, আল্লাহর উলুহিয়াত ও রুবুবিয়াতে আদৌ অবিশ্বাসী ছিলো না- ভাষণের শেষাংশ থেকে একথাও স্পষ্ট জানা যায়, বরং তাদের গোমরাহীর কারণ তা ছিলো, যা অন্যান্য জাতির গোমরাহী সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ উলুহিয়াত ও রুবুবিয়াতে আল্লাহর সাথে অন্যান্যের শরীক করা। যে কারণে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তা এই যে, হযরত মূসা (আঃ) – এর ভাষায় ————————– -নিশ্চয়ই আমি রাব্বুল আ’লামীনের রাসুল -একথা শুনে ফিরাউন জিজ্ঞেস করেছিলো, ——– -রাব্বুল আলামীন আবার কি বস্তু? স্বীয় উজীর হামানকে সে বলেছিলো; আমি যাতে মূসার খোদাকে দেখতে পারি, আমার জন্য একটা উঁচু প্রাসাদ নির্মাণ করো। হযরত মূসা (আঃ) – কে ধমক দিয়ে বললো, আমি ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ বানালে তোমাকে বন্দী করবো। সারা দেশে ঘোষণা করে দিয়েছিলো যে, আমি তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ রব। আপন সভাসদদের বলেছিলো, আমি নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে তোমাদের ইলাহ বলে জানি না। এহেন বাক্যাবলী দৃষ্ট মানুষ ধারণা করে বসেছে যে, সম্ভবত ফিরাউন আল্লাহর অস্তিত্বই অস্বকার করতো, রব্বুল আলামীনের কোন ধারণাই তার মনে ছিলো না। কেবল নিজেকেই একমাত্র মাবুদ বলে মনে করতো। কিন্তু আসল ব্যাপার এই যে, তার এ সকল উক্তিই ছিলো জাতীয়তাবাদী হঠকারিতার কারণে। হযরত ইউসূফ (আঃ) এর যামানায় তাঁর প্রবল ব্যক্তিত্বের প্রভাবে ইসলামের শিক্ষা মিসরভুমিতে প্রসার লাভ করেছিলো, শুধু তাই নয়, বরং রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় তাঁর যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠত হয়েছিলো, তার ফলে বনী-ইসরাঈল মিসরে বিরাট প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। বনী ইসরাঈলীদের এ ক্ষমতা দীর্ঘ তিন -চার শ’ বছর যাবৎ মিসরে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। অতপর সেখানে বনী ইসরাঈলীদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা জন্মলাভ করতে থাকে। অবশেষে তাদের ক্ষমতা উৎপাটিত হয়। মিসরের জাতীয়তাবাদী একটি বংশ শাসকের আসনে অধিষ্টিত হয়। এই নয়া শাসকদল কেবল বনী-ইসরাইলদের দমন-মূলোৎপাটন করেই ক্ষান্ত হলো না বরং হযরত ইউসুফ (আঃ) – এর শাসনকালের এক একটি চিহ্ন বিলীন করে নিজেদের প্রাচীন জাহেলী ধর্মের ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পায়। এ অবস্থায় হযরত মূসা (আঃ) – এর আবিভাব ঘটলে তারা আশংকা করলো, আবার শাসন-ক্ষমতা যেন আমাদের হাতছাড়া হয়ে না যায়! এ বিদ্বেষ ও হটকারিতার কারণেই ফিরাউন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হযরত মূসা (আঃ) -কে জিজ্ঞেস করেছিলো, রব্বুল আলামীন আবার কে? আমি ছাড়া আর কে ইলাহ হতে পারে? আসলে সে রব্বূল আলামীন সম্পর্কে অনবহিত ছিলো না। তার ও তার সভাসদদের যেমন কথোপকথন এবং হযরত মূসা (আঃ) -এর যে ভাষণ-বিবৃতি কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে, তা থেকে এ সত্য একান্ত স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। মূসা (আঃ) আল্লাহর পয়গম্বর নয়-দরবারের লোকদের এ ধারণা দেয়ার জন্যে একদা সে বলেছিলোঃ

————————————————————- তাহলে তার জন্যে সোনার কঙ্কন অবতীর্ণ হয় নি কেন অথবা দলবদ্ধ হয়ে তার সাথে কেন ফেরেশতা আগমন করে নি? – আয-যুখরোফ-৫৩

যার মনে আল্লাহ ও ফেরেশতার কোন ধারণা নেই – সে ব্যক্তি কি এমন কথা বলতে পারে? অপর এক প্রসঙ্গে ফিরাউন ও হযরত মূসা (আঃ) – এর মধ্যে নিম্মোক্ত কথোপকথন হয়ঃ

——————————————————————– তখন ফিরাউন তাকে বললো; মূসা! আমার মনে হচ্ছে, তুমি যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়েছো, তোমার জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে! মূসা জবাব দিলেন; তুমি ভালভাবেই জানো যে, এসব শিক্ষাপ্রদ নির্দশনরাজি আসমান-যমীনের রব ছাড়া অন্য কেউ নাযিল করে নি। আমার মনে হচ্ছে, ফিরাউন! তোমার বিপদ ঘনিয়ে এসেছে। – বনী-ইসরাঈল-১০১-১০২

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ফিরাউনের দলের লোকদের চিত্তের অবস্থা বর্ণনা করে বলেছেনঃ

——————————————————– তারপর তাদের সামনে আমাদের নিদর্শনসমূহ বাহ্যত স্পষ্ট হয়ে উঠলে তারা বললো, এ তো দেখছি স্পষ্ট যাদু! তাদের অন্তর ভেতর থেকে ভালভাবেই তা স্বীকার করতো, কিন্তু নিছক দুষ্টামি, অভিমান ও অবাধ্যতার কারণেই তারা তা মানতে অস্বীকার করলো। – আল-নামল-১৩-১৪

অপর একটি অধিবেশনের চিত্র অংকন করছে কোরআন এবাবেঃ —————————————————- মূসা তাদের বললেন; তোমাদের জন্যে আফসোস! তোমরা আল্লাহর ওপর মিথ্যা দোষারোপ করো না। এমন কাজ করলে তিনি কঠিন আজাবে তোমাদেরকে ধবংস করে ছাড়বেন। আল্লাহর ওপর যেই মিথ্যা দোষারোপ করেছে, সে ব্যর্থকামই হয়েছে। এ কথা শুনে তারা নিজেরা পরস্পরে বিবাদ-বিসম্বাদে পড়ে গেলো! গোপনে পরামর্শ করলো! এতে অনেকে বললো; এরা দু’জন (মূসা ও হারূন) তো যাদুকর! তারা যাদুবলে তোমাদেরকে দেশছাড়া করতে চায়, আর চায় তোমাদের আদর্শ (অনুকরণীয়) জীবন ব্যবস্থাকে নিশ্চিহ্ন করতে। -ত্ব-হা-৬১-৬৩

স্পষ্ট যে আল্লাহ তায়ালার আজাব সম্পর্কে ভীতি প্রদশৃন এবং মিথ্যা আরোপের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করার পর তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা সৃষ্টি হয় -এজন্যে যে, তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয়-ভীতি এবং তাহার মাহাত্ম্যের প্রভাব অল্পবিস্তর বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু তাদের জাতীয়তাবাদী শাসকশ্রেণী রাজনৈতিক বিপ্লবের হুমকি দিয়ে যখন বললো যে, মুসা-হারুন (আঃ) এর বক্তব্য স্বীকার করে নেয়ার পরিনতি এ দাঁড়াবে যে, মিসর পুনরায় ইসরাঈলের করতলগত হয়ে পড়বে। এ কথা শুনে তাদের হৃদয় আবার কঠোর হয়ে গেলো। সকলেই রাসূলের বিরোধিতা করার জন্যে সংকল্পবদ্ধ হলো।

এ সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আমরা সহজে দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, হযরত মূসা (আঃ) ও ফিরাউনের মধ্যে কি নিয়ে মূল বিরোধ ছিলে, ফিরাউন ও তার কওমের আসল গোমরাহী-ই বা কি ধরনের ছিলো। কোন অর্থে ফিরাউন উলুহিয়াত -রুবুবিয়াতের দাবীদার ছিল। এ উদ্দেশ্যে কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতগুলো এক এক করে প্রণিধান করুনঃ

একঃ ফিরাউনের সভাসদদের মধ্যে যারা হযরত মূসা (আঃ) -এর দাওয়াতের মূলোৎপাটনের ওপর গুরুত্বারোপ করতো, তারা এই উপলক্ষে ফিরাউনকে সম্বোধন করে বলছেঃ

———————————- আপনি কি মুসা আর তার কওমকে ছেড়ে দেবেন যে, তারা আপনাকে ও আপনার ইলাহগুলোকে পরিত্যাগ করে দেশের অভ্যন্তরে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াবে? -আল-আ’রাফ-১২৭

অপরদিকে সেসব সভাসদদের মধ্যে যে ব্যক্তিটি হযরত মূসা (আঃ) -এর প্রতি ঈমান এনেছিলো, সে তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেঃ

———————————————– তোমরা কি আমাকে সেদিন ডাকছো, যাতে আমি আল্লাহ্র সাথে কুফরী করি;আর তাঁর সাথে এমন কাউকে শরীক করি, যার শরীক হওয়ার আমার কাছে কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি প্রমাণ নেই। -আল-মুমিন-৪২

ইতিহাস ও প্রত্নতাত্তিক নিদের্শনসমূহের সাহায্যে তদানীন্তন মিসরবাসীদের সম্পর্কে আমাদের লব্ধ জ্ঞানের সাথে আলোচ্য আয়াতদ্বয়কে মিলিয়ে দেখলে আমরা স্পষ্ট জানতে পারি যে, ফিরাউন নিজে ও তার কওমের লোকেরা রুবুবিয়াতে প্রথম ও দ্বিতীয় অর্থে কোন কোন দেবতাকে খোদায়ীতে অংশীদার করতো, তাদের ইবাদত করতো। এটা স্পষ্ট যে, অতি-প্রাকৃতিক (Supernatural) অর্থে ফিরাউন যদি খোদায়ীর দাবীদার হতো অর্থাৎ তার দাবী যদি এই হতো যে, কার্যকারণ-পরম্পরার ওপরও তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত, সে ছাড়া আসমান-যমীনের অপর কোন রব-ইলাহ নেই, তা হলে সে নিজে অন্য ইলাহ-র পূজা করতো না।১

দুইঃ ফিরাউনের এ বাক্যগুলো কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

———————————————– ১. ফিরাউন নিজে ‘ইলাহুল আলামীন’ (বিশ্ব-জাহানের ইলাহ) বলে দাবী করেছিলো- নিছক এ ধারণার বশবতী হয়ে কোন কোন তফসীরকার সূরায়ে আরাফের উপরিউক্ত আয়াতে ——— এর স্থলে —————- পাঠ (কেরাআত) গ্রহণ করেছেন। আর—- এর অর্থ নিয়েছেন ইবাদত। এ পাঠ অনুযায়ী আয়াতের তরজমা হবে-আপনাকে ও আপনার ইবাদতকে পরিত্যাগ করে। কিন্তু প্রথমত এ পাঠটি বিরল ও প্রসিদ্ধ-পরিচিত পাঠের পরিপন্থি। দ্বিতীয়ত, যে ধারণার ভিত্তিতে এ পাঠ করা হয়েছে, সে ধারণা আদপেই ভিত্তিহীন, অমূলক। তৃতীয়ত, – এর অর্থ ইবাদত ছাড়া মাবুদ বা দেবীও হতে পারে। জাহেলী যুগে আরবে সূর্যের জন্যে এ শব্দটি ব্যবহৃত হতো। এটা জানা কথা যে, সাধারণত মিসরীয়দের বড় মূর্তি ছিল সূর্য। মিসরী ভাষায় সূর্যকে বলা হতো রা (-)। আর ফিরাউনের অর্থ ছিল, রা’-এর কণ্যা-সন্তান, রা’-এর অবতার-অন্য কথায় সূর্যের অবতার। সুতরাং ফিরাউন যে জিনিসটির দাবি করতো, তা ছিলো এই যে, আমি সূর্য দেবতার কায়িক বিকাশ মাত্র।

অমাত্যবর্গ! আমি নিজেকে ছাড়া তোমাদের অন্য কোন ইলাহ সম্পর্কে অবহিত নই। -আল-কাসাস-৩৮

————————— মূসা! আমি ব্যতীত অন্য কাউকে তুমি যদি ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করো, তবে আমি তোমাকে কয়েকদীদের মধ্যে শামিল করবো। -আশ-শোয়ারা-২৯

এ বাক্যগুলোর অর্থ এ নয় যে, ফিরাউন নিজেকে ছাড়া অন্য সব ইলাহকে অস্বীকার করতো, বরং তার আসল উদ্দেশ্য ছিলো, হযরত মূসা (আঃ)-এর দাওয়াত প্রত্যাখান করা। যেহেতু হযরত মূসা (আঃ) এমন এক ইলাহর দিকে দাওয়াত দিচ্ছিলেন, যিনি শুধু অতি- প্রাকৃতিক (Supernatural) অর্থেই মাবুদ নন, বরং তিনি রাজনৈতিক, তমদ্দুনিক অর্থেও আদেশ-নিষেধের মালিক এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। তাইতো সে আপন কওমকে বলেছিলো, আমি ছাড়া তো তোমাদের এমন কোন ইলাহ নেই। হযরত মূসা (আঃ) -কে ধমক দিয়ে বলেছিলো, এ অর্থে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ বলে গ্রহণ করলে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হবে।

কোরআনের আয়াত থেকে এও জানা যায় এবং ইতিহাস ও প্রত্নতাত্তিক নিদের্শন থেকে তার সমর্থন পাওয়া যায় যে, মিসরের ফিরাউন সম্প্রদায় কেবল নিরংকুশ সার্বভৌমত্বের (Absolute Sovereignty) দাবীদারই ছিলো না, বরং দেবতার সাথে সম্পর্কে স্থাপন করে এক ধরনের পবিত্রতাও দাবী করতো, যেন প্রজাদের দিল-দেমাগে তাদের শক্ত আসন গেড়ে বসতে পারে। এ ব্যাপারে কেবল মিসরের ফিরাউন সম্প্রদায়ই কোন বিরল দৃষ্টান্ত নয়, বরং দুনিয়ার অধিকাংশ দেশেই রাজকীয় খান্দান রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব (Political Sovereignty) ছাড়াও অতিপ্রাকৃতিক অর্থে (supernatural Meaning)উলুহিয়াত ও রুবুবিয়াতে ভাগ বসাবার অল্পবিস্তর চেষ্টা করেছে। প্রজারা যাতে তাদের সামনে দাসত্বের কোননা কোন রীতিনীতি পালন করে তা-ও তাদের জন্যে বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু আসলে এটি নিছক প্রাসঙ্গিক বিষয়। আসল উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব সুদৃঢ় কর। অতি-প্রাকৃতিক উলুহিয়াতের দাবীকে এর একটি উপায় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এজন্যে মিসরে ও জাহেলী ধ্যান-ধারণার পুজারী অন্যান্য দেশেও রাজনৈতিক পতনের সাথে সাথে রাজকীয় খান্দানের উলুহিয়াতও সব সময় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। ক্ষমতার মসনদ যাদের হাতে গিয়েছে, উলুহিয়াতও আবর্তিত হয়েছে।

তিনঃ অতিপ্রাকৃতিক খোদায়ী ফিরাউনের আসল দাবি ছিল না, বরং রাজনৈতিক খোদায়ীই ছিল তার মূল দাবী। রুবুবিয়াতের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অর্থে সে বলতো যে, আমি মিসর ভূমি, তার অধিবাসীদের সব চেয়ে বড় রব (Over Lord) এ দেশ ও তার সকল-উপাদান- উপকরণের মালিক আমি। এ দেশের নিরংকুশ সার্বভৌমত্বের অধিকার কেবল আমারই; আমার সামগ্রিক ব্যক্তিসত্তাই এ দেশের সমাজ-সংগঠন ও সভ্যতা-সংস্কৃতির ভিত্তিমূল।এখানে আমি ছাড়া অন্য কারো আইন-বিধান চলবে না।

কোরআনের ভাষায় তার দাবীর ভিত্তি ছিলো এইঃ

——————– আর ফিরাউন তার কওমের মধ্যে ডাক দিয়ে বললো; হে আমার কওমের লোকেরা! আমি কি মিসর দেশের মালিক নই? মিসরের রাজত্ব কি আমার নয়? তোমরা কি দেখছো না যে, এসব নদী-নালা আমার নিদের্শ চলছে?-আয-যুখরুফ-৫১

নমরূদের রুবুবিয়াতের দাবীও প্রতিষ্ঠিত ছিলো এ ভিত্তির ওপর।

(———————) এ ভিত্তিতেই হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সমকালীন নৃপতিও আপন দেশবাসীর রব সেজে বসেছিলো।

চারঃ হযরত মূসা (আঃ) -এর দাওয়াত-যার কারণে ফিরাউন ও ফিরাউনের বংশের সাথে তার ঝগড়া ছিলো-মূলত এই ছিলো যে, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ছাড়া অন্য কেউ কোন অর্থেই ইলাহ নেই। অতি-প্রাকৃতিক অর্থেও তিনিই একমাত্র ইলাহ, বরং সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থেও। অর্চনা ও বন্দেগী-আনুগত্য তাঁরই হবে; কেবল তাঁরই আইন-বিধান মেনে চলতে হবে। তিনিই আমাকে স্পস্ট নিদর্শনসমূহ দিয়ে তাঁর প্রতিনিধি নিয়োগ করেছেন; আমার মাধ্যমেই তিনি আদেশ-নিষেধের বিধি-বিধান দেবেন। সুতরাং তাঁর বান্দাদের ক্ষমতার রজ্জু তোমার হাতে নয়, বরং আমার হাতে থাকা ব্ঞ্ছনীয়। এর ভিত্তিতেই ফিরাউন ও তার রাজনৈতিক সহযোগীরা বারবার বলতো যে, এরা দু’ভাই আমাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে নিজেরা ক্ষমতার সামনে অধিষ্ঠিত হতে চায়। আমাদের দেশের ধর্ম ও তম্মুদ্দুন ব্যবস্থাকে নিশ্চিহ্ন করে নিজেদের ধর্ম ও তমুদ্দুন প্রতিষ্ঠার জন্যে উঠে-পড়ে লেগেছে।

———————– এবং আমরা মূসাকে আমাদের আয়াত ও প্রত্যাদিষ্টের স্পষ্ট নিদর্শন সহকারে ফিরাউন ও তার কওমের সর্দারদের প্রতি প্রেরণ করেছি। কিন্তু তারা ফিরাউনের নির্দেশ অনুসরণ করলো। অথচ ফিরাউনের নির্দেশ ন্যায়সঙ্গত ছিলো না। -হুদ-৯৬-৯৭

——————– এবং তাদের পূর্বে আমরা ফিরাউনের কওমকে পরীক্ষায় ফেলেছিলাম। তাদের কাছে এসেছিলো একজন সম্মানিত রসূল। তিনি বললেন, আল্লাহ্র বান্দাদের আমায় সোপর্দে করো। আমি তোমাদের জন্যে আমানতদার রসূল। আল্লাহ্র মোকাবিলায় ঔদ্বত্য করো না। আমি তোমাদের সামনে প্রত্যাদিষ্টের স্পষ্ট নির্দশন পেশ করছি।-আদ-দোখান-১৭-১৯

——- (মক্কাবাসী) আমরা তোমাদের প্রতি একজন রাসূল প্রেরণ করেছি। তিনি তোমাদের ওপর সাক্ষ্যদাতা। ঠিক তেমনি, যেমন ফিরাউনের প্রতি একজন রসূল প্রেরণ করেছিলাম। অতপর ফিরাউন রসূলের নাফরমানী করলে আমরা তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করেছিলাম। -আল-মুয্যাম্মিল- ১৫-১৬

———————- ফিরাউন বললো, মূসা! (দেবতা, শাহী খান্দান-এর কোনটাকেই যদি তুমি স্বীকার না করো) তবে তোমার রব কে? মূসা জবাব দেন; যিনি প্রতিটি বস্তুকে বিশেষ আকার-আকৃতি দান করেছেন, অতপর তাকে কার্য সম্পাদনের পন্থা নির্দেশ করেছেন-তিনিই আমার রব।-ত্বাহা-৪৯-৫০

————————— ফিরাউন বললো; এ রব্বুল আলামীন আবার কি? মূসা জবাব দিলেন, আসমান-যমীন এবং তার অভ্যস্তরে যত সব বস্তু আছে, তার রব-যদি তোমরা বিশ্বাস করো। ফিরাউন তার আশপাশের লোকদের বললো; তোমরা শুনেছো? মূসা বললেন; তোমাদেরও রব, তোমাদের বাপ-দাদারও রব। ফিরাউন বললো; তোমাদের এ রসূল সাহেব-যে তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছে-একেবারেই পাগল। মুসা বললেন,মাশরিক-মাগরিব, প্রাচ্য-প্রতীচ্য এবং তার মাঝখানে যা কিছু আছে, সমুদয় বস্তুরই রব-অবশ্য যদি তোমাদের সামান্য জ্ঞানও থাকে। এতে ফিরাউন বলে উঠলো; আমি ছাড়া আর কাউকে যদি তুমি ইলাহ বানাও তাহলে তোমাকে কয়েদীদের শামিল করবো। -আশ-শায়ারা-২৩-২৯

— ফিরাউন বললো,মুসা! আপন যাদু বলে আমাদেরকে আমাদের ভুখন্ড থেকে বে-দখল করে দেয়ার জন্যেই কি তোমার আগমন?-ত্বাহা-৫৭

]——————— আর ফিরাউন বললো; ছেড়ে দাও আমাকে, মূসাকে হত্যা করি। সে তার রবকে সাহায্যের জন্যে ডেকে দেখুক। আমি আশংকা করছি, সে তোমাদের দীন (জীবন-যাপনের ধারা) কে পরিবর্তিত করে ফেলবে অথবা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।-আল-মুমিন-২৬

—————————— তারা বললো; এরা দু’জন তো যাদুকর। নিজেদের জোরে তোমাদেরকে তোমাদের ভূখন্ড থেকে বে-দখল করতে চায়। চায় তোমাদের আদর্শ জীবন ব্যবষ্থাকে নিশ্চিহ্ন করতে।ত্বাহা-৬৩

এসব আয়াত পর্যায়ক্রমে দেখলে স্পষ্ট জানা যায় যে, রুবুবিয়াতের ব্যাপারে যে গোমরাহীটি শুরু থেকে দুনিয়ার বিভিন্ন কওমের মধ্যে চলে আসছিলো, নীল নদের দেশেও তারই ঘনঘটা ছেয়ে ছিলো। শুরু থেকে সকল নবী-রাসূল যে দাওয়াত দিয়ে আসছিলেন, মূসা ও হারুন (আঃ) -ও সে দিকেই ডাকছিলেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url