Ad

দিনাজপুরের ইতিহাস ও দর্শনীয় স্থান।

এবার পর্যটনলিপি আপনাদের সামনে তুলে ধরেছে বাংলার ঐতিহ্যমন্ডিত জেলা দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান ও তার ইতিহাস ঐতিহ্য। পর্যটনলিপি বরাবরই বাংলাদেশকে একটু ভিন্ন রূপে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় পর্যটনলিপির আজকের আয়োজন দিনাজপুরের গপ দিনাজপুরের ইতিহাস ও দর্শনীয় স্থান


সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যমন্ডিত দিনাজপুরের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের ছোট নাগপুর, বিন্ধ্যা পর্বত প্রভৃতি লাখ লাখ বছরের প্রাচীন স্থানগুলোর মৃত্তিকার সমগোত্রীয় দিনাজপুরের মাটি। 

বহুকাল পূর্বে হিমালয় পর্বতের ভগ্নীরূপে জন্ম নেয়া বরেন্দ্র ভূমির হৃদয়-স্থানীয় স্থান দিনাজপুর। লোকশ্রুতি অনুযায়ী জনৈক দিনাজ অথবা দিনারাজ দিনাজপুর রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নামানুসারেই রাজবাড়ীতে অবস্থিত মৌজার নাম হয় দিনাজপুর। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসকরা ঘোড়াঘাট সরকার বাতিল করে নতুন জেলা গঠন করে এবং রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করে দিনাজপুর।


দিনাজপুর আমাদের দেশের একটি স্বপ্নের শহর, যার পরিচয় ও সৌন্দর্য সম্পর্কে হয়ত হাতে কলমে লিখে ব্যাখ্যা করাটা অনেকটাই দুরুহ ব্যপার। দিনাজপুর বাংলাদেশের একটি পর্যটনশিল্প সমৃদ্ধ জেলা এবং বেশ কিছু দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এই জেলার লিচু ও সুগন্ধী চাল কিন্তু বেশ বিখ্যাত।
চলুন জেনে নেই দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান সমূহের কিছু ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে।
কান্তজিউর মন্দির
দিনাজপুরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির হল কান্তজিউর মন্দির। দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে এটি অন্যতম। মূল শহর থেকে থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে, দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরবর্তী গ্রাম কান্তনগরে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির। হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচিত এই মন্দিরটি লৌকিক রাধা-কৃষ্ণের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে বেশ প্রচলিত। এই মন্দির তৈরী করেন রাজা প্রাণনাথ রায় ও তার দত্তকপুত্র রাজা রামনাথ রায়। এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় ১৭৫২ সালে। ২০১৭ সালের বাংলার নিজস্ব স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন হিসাবে কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ সরকার তাদের প্যাভিলিয়নটি কান্তজিউ মন্দিরের আদলে গড়েন।

রাজবাড়ি
রাজা দিনাজ স্থাপন করেন দিনাজপুর রাজবাড়ি। কিন্তু অনেকে মনে করেন পঞ্চদশ শতকের প্রথমার্ধে ইলিয়াস শাহীর শাসনামলে সুপরিচিত “রাজা গণেশ” এই বাড়ির স্থপতি। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে দিনাজপুরের জমিদার হন শ্রীমন্ত দত্ত চৌধুরী। কিন্তু শ্রীমন্ত দত্ত চৌধুরীর ছেলের অকাল মৃত্যুর হওয়াতে, তার ভাগ্নে “সুখদেব ঘোষ” তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন।

 রাজবাড়ি প্রধানত তিনটি মহল বা ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত, যথাক্রমেঃ আয়না মহল, রাণি মহল ও ঠাকুরবাটি মহল। রাজবাড়ির প্রবেশ পথে পশ্চিমমুখী একটি মিনার আকৃতির বিশাল তৌরণ আছে যা রাজবাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
রামসাগর দিঘি

দিনাজপুর জেলার তাজপুর গ্রামে অবস্থিত এই দিঘি কোন প্রাকৃতিক দিঘি নয় বরং একটি মানবসৃষ্ট দিঘি হওয়ায় এটি অনেক প্রচলিত। তটভূমিসহ রামসাগরের আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার। দিঘিটির স্থানিক অবস্থান ২৫°৩৩’১৬”উত্তর ৮৮°৩৭’২০”পূর্ব।

 শোনা যায়, কথিত আছে, ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রচণ্ড এক খরা দেখা দিলে পানির অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে হাজার হাজার প্রজা। এসময় দয়ালু রাজা প্রাণনাথ স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটি পুকুর খনন করেন। মাত্র ১৫ দিনে এর খনন কাজ সম্পন্ন হয়।

 আরও জানা যায়, দিঘি খনন করার পর রাজা রামনাথ পানি না উঠলে স্বপ্ন দেখেন রাজা দিঘিতে কেউ প্রাণ বিসর্জন দিলে পানি উঠবে। তখন রাম নামের স্থানীয় এক যুবক দিঘিতে প্রাণ বিসর্জন দেয়। পরবর্তিতে রাজার নির্দেশে সেই যুবকের নামে দিঘির নামকরণ করা হয় রামসাগর।

স্বপ্নপুরী
নান্দনিক সৌন্দর্যের এক স্বপ্নিল বিনোদন জগত স্বপ্নপুরী দিনাজপুর শহর থেকে ৫২ কিমি দক্ষিণে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ১৫০ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে । 

দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পশু-পাখির অবিকল ভাষ্কর্য, কৃত্রিম পাহাড়, কৃত্রিম ঝর্ণা এবং ইট-সিমেন্টে নির্মিত বাংলাদেশের এক সুবিশাল মানচিত্রের সমন্বয়ে তৈরী একটি কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, জীবন্ত পশুপাখীদের চিড়িয়াখানা, শিশুদের জন্য পার্ক, বায়োস্কোপ ইত্যাদি মিলিয়ে যেন এক অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় যা আপনাকে বিমোহিত করবে।

কিসের জন্য দিনাজপুর বিখ্যাত
সুগন্ধি আতপ চালের জন্য দিনাজপুর বিখ্যাত এবং তার সাথে আছে সুগন্ধি কাটারী ভোগ চাল। দিনাজপুরের চায়না ৩ লিচু সারা বাংলাদেশে বিখ্যাত তার স্বাদের জন্য। চিড়া এবং খই এর ও খুব সুনাম এই অঞ্চলের। আছে মসুর ডালের সুস্বাদু পাঁপড়। পিঠা পুলির মধ্যে আছে নুনিয়া পিঠা, গুড়্গুড়ি পিঠা (অনেকে একে কুকুর ঢেলাও বলে থাকে)। আর আছে শিদল।
কিছু আকর্ষণ

জাতীয় ক্রিকেট দলের দুজন সদস্য ধীমান ঘোষ আর লিটন দাস কিন্তু দিনাজপুরের মানুষ।সবচেয়ে বেশি নারী মুক্তিযোদ্ধা দিনাজপুরের- ২১ জন ।দিনাজপুরে ৮৫০০ এর বেশি মসজিদ রয়েছে ও দিনাজপুরের মধ্যে রয়েছে জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন ।
কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে দিনাজপুর যেতে চান তাহলে রেলপথ কিংবা স্থলপথ যেকোনোভাবেই যেতে পারেন। যারা বাসে যেতে ইচ্ছুক তারা ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড বা শ্যামলি বাসস্ট্যান্ড থেকে যেতে পারবেন। বাস সকাল থেকে সন্ধ্যা প্রায় সময়ই পাওয়া যায়। নন এসি ভাড়া ৫০০ টাকা এবং এসি ৮০০ টাকা জন প্রতি।

আর ট্রেনে চরে যেতে চাইলে সেটাও পারেন। কমলাপুর থেকে একতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতজান এক্সপ্রেস যথাক্রমে সকাল ১০ টায় এবং সন্ধ্যা ৭.৪০ এ ছেড়ে যায়। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। আবার দেখা হবে বাংলার অন্যকোন প্রান্তে, আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url