Ad

আল্লাহর পথে দাওয়াত ও দ্বায়ীর গুণাবলী সূরা হামিম আস সিজদা

সূরা পরিচিতি ও নামকরণ

আল্লাহর পথে দাওয়াত

সুরা হা মিম সাজদা আল কুরআনের 41 তম সূরা এতে ছয়টি রুকু ৫৪ টি আয়াত ৭৯৬ টি শব্দ এবং 3350 টি অক্ষর রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সূরাটি নিয়মিত পাঠ করতেন হাদিস গ্রন্থে রয়েছে রাসুল সালাম প্রত্যেক রাতে এ সূরা এবং সূরা মূলক পাঠ না করে ঘুমাতেন না দুটি শব্দের সমন্বয়ে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে একটি শব্দ হা মিম ও অপরটি আজ সাজদা অর্থাৎ এটি সেই সূরা যা শুরু হয়েছে আমিন শব্দ দিয়ে এবং যার মধ্যে এক স্থানে সিজদার আয়ত রয়েছে।

এই সূরাকে সুশীলত বলা হয় সুরাটি নাযিলের সময়কাল ও প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যখন ইসলাম প্রচার শুরু করলেন তখন থেকেই মক্কার সত্য বিমুখ নেত্রী স্থানীয় কুরাইশরা তীব্র বিরোধিতা শুরু করল এমনকি পর্যন্ত দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্রকাশ্যে ইসলামের কথা বলতেও পারতেন না। নবুয়তের ষষ্ঠ বয়সের শেষভাগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর চাচা হামজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা ও তিনদিন পর ওমর ইবনু খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ইসলাম গ্রহণ করেন।

 তাদের ইসলাম গ্রহণের ফলে মুসলমানরা মক্কায় যেন কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পেয়েছে কিন্তু তাতে কুরাইশরা ভিতরে ভিতরে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো তারা ইসলামকে চিরতরে দমন করার জন্য তাদের কৌশল পরিবর্তন করল তারা জুলুম নির্যাতনের পথ পরিহার করে লোভের ফাঁদ পাতলো।

একদা কয়েকজন কুরাইশ নেতা কাবা ঘরে আসর জমিয়ে বসেছিল মসজিদের অপর কোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম একাকী বসে ছিলেন এমন সময় আবু সুফিয়ানের শশুর কুরাইশদের নেতা উদবায়ে অরবিয়া কুরাইশদের উদ্দেশ্য করে বললেন মোহাম্মদের কাছে গিয়ে তার সাথে আলোচনা করা যাক তাকে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হোক।

সে হয়তো কোন একটা প্রস্তাব গ্রহণ করবে সে যা কিছু দাবি করবে সেই দাবি আমরা পূরণ করব তখন কুরাইশরা উতবা কেই এই প্রস্তাব সহ রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর কাছে পাঠালো।উতবা উঠে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর কাছে গিয়ে বলল ভাতিজা আমাদের সমাজে তোমার যে মর্যাদা রয়েছে সে কথা সবাই জানে তুমি খুবই উঁচু বংশের ছেলে কিন্তু তুমি এমন একটা বিষয়ে প্রচার করছো যাতে এ সমাজের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে।
  • তুমি সমাজের নেতাদেরকে বোকা বলছো
  • তারা যেসব দেবদেবীর পূজা করে সেগুলো কেউ খারাপ বলছো
  • তারা যে ধর্ম বিশ্বাস করে তাকে তুমি অগ্রহণযোগ্য বাতিল বলছো
  • এমনকি  তাদের বাপ দাদাদের কেউ তুমি বলছো কাফের
উতবা ইবনে রাবিয়া এতসব কথা বলার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর কাছে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করলো ভাতিজা তুমি যে কাজ করছ তার উদ্দেশ্য যদি ধন-সম্পদ লাভ হয়ে থাকে তাহলে আমরা তোমাকে এত এত ধন সম্পদ দেব যে তুমি হবে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী।
আর তুমি যদি এই কাজ করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে চাও তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের নেতা হিসাবে বরণ করে নিচ্ছি।
আল্লাহর পথে দাওয়াত

তুমি যদি বাদশাহী চাও আমরা তোমাকে আমাদের বাদশা হিসেবে বরণ করে নেব।
আর যদি তোমার ওপর জিন ভূতের প্রভাব পড়ে থাকে যা তুমি তাড়াতে পারছ না তাহলে আমরা আমাদের খরচে চিকিৎসা করব।

বুধবার প্রস্তাবগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনোযোগ দিয়ে শুনলেন অতঃপর বললেন হে আবুল ওয়ালিদ আপনার কথা কি শেষ হয়েছে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বললেন- এবার আমার কথা শুনুন এরপর তিনি কোরানের আয়াত তথা সূরা হামীন তেলাওয়াত করা আরম্ভ করলেন-

”এর পরেও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তুমি বলে দাও আদ ও সামোদের ধ্বংসের মতোই এক মহা ধ্বংস সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি” 

তখন এই আয়াত শোনা মাত্রই উতবা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর মুখে হাত চাপা দিয়ে বলে উঠেছিল আমি তোমাকে আল্লাহর এবং নিকট আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে বলছি যে তুমি এরকম দোয়া করো না।
 কেননা উতবার মাঝে এত বেশি আশঙ্কা ভর করছিল যে ওই প্রচন্ড শাস্তি না জানি তার উপরেই এসে পড়ে।

রাসুল সালাম সালাম তেলাওয়াত শেষ করে সিজদা করলেন আর এই গোটা সূরাটি উদবা দুহাত পেছনের দিকে মাটিতে রেখে আরাম করে বসে শুনছিলেন এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম বললেন হে আবুল ওয়ালিদ তুমি যা শুনতে চেয়েছিলে আমি তা শুনিয়েছি এবার তুমি জানো আর তোমার কর্ম জানে কোরআনের কথাগুলো বুঝবার পর তার মাঝে দারুণ ঝড় তুললো কেননা-

 সূরাটিতে যে বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

আরবি ভাষায় এ কথাগুলোর অর্থ আরো ব্যাপক এ সূরাটিতে বর্ণিত মহাকাশ সংক্রান্ত বিষয়ের ব্যাখ্যা তো আজও বিজ্ঞানীদের গবেষণার উন্মুক্ত করছে আর আল্লাহকে বিশ্বাস করার লাভ না করার ক্ষতি পরকালীন জীবনে আল্লাহর হুকুম অমান্যকারীদের পরিণতি মান্যকারীদের পুরস্কার ইতিহাস তুলে ধরে কোরানে যে বক্তব্য এসেছে তা কুরাইশ বুদ্ধিজীবী উদ বাঁকে হতবাক করে দিয়েছিল।

পুরো সুরাটি উতবার মাঝে এত প্রচন্ড প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল যে তার চেহারা পর্যন্ত পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল সে যখন তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে গেল তখন সঙ্গীরা বলাবলি করছিল আল্লাহর কসম আবুল ওয়ালিদ যে চেহারা নিয়ে গিয়েছিল সে চেহারা নিয়ে কিন্তু ফিরছেন না। উদবা কুড়াইদের কাছে আসলে কুরাইশরা চারিদিকে ঘিরে ধরল তাকে জিজ্ঞেস করল কি খবর নিয়ে এলেউতবা জবাব দিল -
আল্লাহর পথে দাওয়াত 

আমি এমন কালাম শুনেছি যা আর আগে কোনদিন শুনিনি আল্লাহর কসম যা আমি শুনেছি তা কোন কবিতা নয় জাদু মন্ত্র নয় তোমরা আমার কথা শোনো ওকে তার অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও যে কালাম আমি শুনেছি ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে বড় ধরনের ঘটনা ঘটবে যদি ওকে আরবের লোকেরা মেনে না ন্যায় তাহলে তোমাদের কাজ অন্য কেউ করবে ।

আর যদি তিনি আরবের ওপর জয় লাভ করেন তবে তার সম্মান হবে তোমাদের সম্মান তার বাদশাহী হবে তোমাদের বাদশাহী তার অস্তিত্ব হবে তোমাদের জন্ম সৌভাগ্যের কারণ

কুরাইশরা এমন কথা শুনতে অপ্রস্তুত ছিল । তারা তো শুনতে চেয়েছিল আল্লাহর নবী কবে ইসলাম প্রচার বন্ধ করবেন ? উতবার মুখে এরকম উল্টো কথা শুনে তারা বলতে লাগলো আবু তালিব আবুল ওয়ালিদ মোহাম্মদ তো কালামের জাদুতে তোমাকে প্রভাবিত করেছে। 

 বস্তুত বাস্তবতা দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামকে যাচাই করেছিলেন তাই তিনি নিজ সম্পর্কে এ মন্তব্যের জবাবে বললেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলা্ইহিওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে আমি যা বুঝেছি তাই বলেছি এখন তোমরা যা ভাল মনে কর তা কর।

দুর্ভাগ্য উতবার সেই কুরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলা্ইহিওয়া সাল্লাম এর কাছে মুখ থেকে শুনছে খুব মনোযোগ দিয়েছে সেই সূরাটির প্রতি অনুভব করেছে সুরার বক্তব্যের গভীরতা কেঁপে উঠেছে তার পাশানো হৃদয় কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এত কিছুর পরও ঈমানের আলো প্রবেশ করেনি তার অন্তরে।

 বরং সে বদরের ময়দানে ছুটে গিয়েছিল ইসলাম প্রতিরোধের মন্ত্র নিয়ে আর তীব্র যন্ত্রণা আর লাঞ্ছনা নিয়ে এসে দুনিয়া থেকে বিদায় ও নিয়েছে আজ উতবা নেই কিন্তু তার শিষ্যরা রয়ে গেছে বাস্তব জীবনে তারা উদ্ধার অনুসারী সুযোগ পেলে ছুটে চলে ইসলাম সম্পর্কে বিষোদগার করতে মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের এই যুগের উতবাদের চেনার তৌফিক দান করুন।

সূরা হামিম অশেষদার আলোচ্য বিষয়

সূরা আমীন আস সাজদা বিশেষভাবে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে

১ কাফিরদের পক্ষ থেকে কুরআনের বিরোধিতার চিত্র ও তার পরিণাম

২ কাফেরদের বিরোধিতার জবাব প্রদান

৩ মুমিনদেরকে সকল অবস্থায় আল্লাহর পথে অটল থাকার নির্দেশ প্রদান

 ৪ দিনের পথে দাওয়াত দানের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা পেশ করা হয়েছে


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url