Ad

ইসলামের দৃস্টিতে যে ধারায় সমাজের বিপ্লব ঘটনো সম্ভব।

ইসলামের দৃস্টি

 সমাজ বিপ্লবের ধারা

(الطرق الثلاثة للثورة الاجةماعية الإسلامية)

উপরে চিহ্নিত তিনটি বিষয়ের আলোকে আমাদের যে কর্মপন্থা নির্ধারিত হবে, তাও হবে তিনটি। অর্থাৎ সমাজ বিপ্লবের ধারা হ’ল তিনটি : (১) মূল তাওহীদকে উপলব্ধি করা। এর মাধ্যমে প্রথমে সমাজের আক্বীদা সংশোধনে ব্রতী হওয়া এবং নির্ভেজাল ইসলামের দিকে ফিরে যাওয়া- যা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ হ’তে উৎসারিত। (২) ঈমান ও আমলের বৈপরীত্য দূর করা। এজন্য বাস্তব অনুভূতি নিয়ে কুরআন ও হাদীছ অধ্যয়ন করা। (৩) জাহেলিয়াতের সঙ্গে সর্বতোভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা।

অতএব জাহেলিয়াতের অনুসারী ব্যক্তি যদি নিজের বাপ-ভাই-সন্তান বা আত্মীয়-স্বজনও হয়, তথাপি তাদের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আল্লাহর কঠোর নির্দেশ পাঠ করুন সূরা মুজাদালাহর শেষ আয়াতে।

বর্ণিত তিনদফা কর্মপন্থাকেই আমরা ইসলামী সমাজ বিপ্লবের তিনটি ধারা হিসাবে গণ্য করতে চাই।

ধারাগুলির ব্যাখ্যা

(تفصيل الطرق)

আসুন! আমরা সমাজ বিপ্লবের উপরোক্ত তিনটি ধারার উপরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা রাখি। প্রথম ধারাটি হ’ল তাওহীদের সঠিক উপলব্ধি।

তাওহীদ তিন প্রকার : তাওহীদে রুবূবিয়াত (পালনকর্তা হিসাবে আল্লাহর একত্ব), তাওহীদে আসমা ওয়া ছিফাত (আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর একত্ব) এবং তাওহীদে উলূহিয়াত (আল্লাহর ইবাদতে একত্ব)। এই তিন প্রকারের তাওহীদের মধ্যে জাহেলী যুগের আরবরা কমবেশী প্রথম দু’প্রকারের তাওহীদে বিশ্বাসী ছিল। তারা আল্লাহকে ‘রব’ হিসাবে, ‘খালেক্ব’ ও ‘রাযযাক্ব’ হিসাবে বিশ্বাস করত। 

অনেকে আখেরাতে বিশ্বাসী ছিল। তারা নিজেদের নাম ‘আব্দুল্লাহ’ ‘আব্দুল মুত্ত্বালিব’ প্রভৃতি রাখত। এতদসত্ত্বেও তারা ‘মুসলিম’ ছিল না এই কারণে যে, তাদের মধ্যে ‘তাওহীদে উলূহিয়াত’ ছিল না। তারা ‘অসীলাপূজায়’ বিশ্বাসী ছিল।

ইসলামের দৃস্টি

আল্লাহকে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন মৃত সৎ ব্যক্তির মূর্তি তৈরী করে তাদের নিকট নযর-নেয়ায পেশ করত। আল্লাহর ঘর কা‘বা শরীফের বাইরে মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও ব্যবহারিক বিষয়ে আল্লাহর কোন হেদায়াত থাকতে পারে, একথা তারা মানতে প্রস্ত্তত ছিল না। 

এরা তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে এক একজন নেতাকে ‘ইলাহ’-এর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরই বিরুদ্ধে বৈপ্লবিক শ্লোগান উচ্চারণ করেন- ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই)। 

এখানে আল্লাহকে মানবার আগে ‘গায়রুল্লাহ’কে বর্জনের কথা বলা হয়েছে। আর এ কারণেই পূণ্য অর্জনের আবশ্যিক পূর্বশর্ত হ’ল পাপ বর্জন করা। 

দুর্ভাগ্য এই যে, জাহেলী আরবরা আল্লাহ্কে মানতে প্রস্ত্তত ছিল, কিন্তু গায়রুল্লাহকে ছাড়তে প্রস্ত্তত ছিল না। পূণ্য অর্জনের আকাংখা ছিল, কিন্তু পাপ বর্জনে তারা রাযী ছিল না।

‘তাওহীদ’ সম্পর্কে বাংলাদেশের বর্তমান মুসলমানদের অধিকাংশের ধারণা জাহেলী আরবদের আক্বীদার সঙ্গে যে অনেকাংশে মিল আছে, তা আশা করি কারও বুঝতে বাকী নেই। আমরা ‘বায়তুল মোকাররমে’ গিয়ে আল্লাহকে সিজদা করি।

আবার ‘সংসদ ভবনে’ গিয়ে জনগণকে সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস বলি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী বা সমাজতন্ত্রী হই। ‘মাযারে’ গিয়ে অসীলাপূজারী হই। আমাদের নামও আব্দুল্লাহ-আব্দুল মুত্ত্বালিব। 

আরবের মুশরিকরা যে নিয়তে নিজেদের হাতে গড়া মূর্তির কাছে যেত, আমরাও একই নিয়তে নিজেদের হাতে গড়া মাযার ও খানক্বাহে যাই। 

তারা তাদের বৈষয়িক বিষয়সমূহে আল্লাহর কোন আইন মানতো না। আমরা আমাদের রাজনীতি-অর্থনীতি প্রভৃতি বৈষয়িক ব্যাপারে আল্লাহর কোন হেদায়াত মানতে চাই না।

ইসলামের দৃস্টি

আমরা কালেমার যিকর করে বা মাঝে-মধ্যে জুম‘আ-জামা‘আতে হাযির হয়ে ভেবে নেই জান্নাত পাব। 

অথচ ইসলামের সকল হুকুম মানা সত্ত্বেও কেবলমাত্র যাকাত জমা দিতে অস্বীকার করায় আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। কারণ ইসলামের অর্থনৈতিক বিষয়টিকে তারা অমান্য করেছিল। তাদের ছালাত-ছিয়াম কোন কাজে লাগেনি তাওহীদের মৌলিক বিশ্বাসে খুঁত থাকার কারণে।

আমাদের সমাজকে সর্বপ্রথমে তাই তাওহীদের শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে এবং একথা বুঝিয়ে দিতে হবে যে, মুসলিম জীবনের সকল দিক ও বিভাগে কেবলমাত্র আল্লাহর নিকট থেকেই হেদায়াত নিতে হবে। 

আর সে হেদায়াত সঞ্চিত আছে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহের মধ্যে, অন্য কোথাও নয়। আমাদেরকে সকল ব্যাপারে কেবলমাত্র ঐ দুই উৎস থেকেই আলো নিতে হবে।

প্রথম ধারাটি সম্পর্কে স্পষ্ট বুঝ হাছিল হয়ে গেলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধারাটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা না দিলেও চলে। কারণ দুর্বল আক্বীদার লোক দ্বারা কখনও বিপ্লব হ’তে পারে না। আর বাতিলের সঙ্গে আপোষকামী ব্যক্তি কখনো হকপন্থী হ’তে পারে না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url